Advertisement
০৬ মে ২০২৪
PM Narendra Modi

জোট ভাঙার নয়া চেষ্টা, মোদী-ভাষণে উদ্বেগ

কংগ্রেস নেতৃত্বের আশঙ্কা, মোদী সরকার নতুন করে কংগ্রেস তো বটেই, আঞ্চলিক দলের বিরুদ্ধে সিবিআই, ইডি-কে মাঠে নামাতে পারে।

PM Narendra Modi.

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০২৩ ০৬:২৯
Share: Save:

লোকসভা নির্বাচনের আগে কি নতুন করে বিরোধী শিবিরের নেতানেত্রীদের বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়ে উঠবে সিবিআই-ইডি! ১৫ অগস্টে লাল কেল্লা থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নতুন করে দুর্নীতি, পরিবারতন্ত্র ও তোষণনীতি নিয়ে বিরোধীদের নিশানা করায় এই প্রশ্ন এখন বিরোধী শিবিরে ঘুরপাক খাচ্ছে। তাঁদের এই আশঙ্কা আরও বেশি করে উস্কে দিয়ে আজ ইডি আর্থিক নয়ছয়ের মামলায় গান্ধী পরিবারের জামাই রবার্ট বঢরার আগাম জামিনকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দিল্লি হাই কোর্টে মামলা করেছে। অভিযোগ, রবার্ট আগাম জামিনের শর্ত লঙ্ঘন করেছেন।

কংগ্রেস নেতৃত্বের আশঙ্কা, মোদী সরকার নতুন করে কংগ্রেস তো বটেই, আঞ্চলিক দলের বিরুদ্ধে সিবিআই, ইডি-কে মাঠে নামাতে পারে। তার প্রধান লক্ষ্য হবে এই দলগুলির উপরে চাপ তৈরি করে বিরোধীদের জোট ‘ইন্ডিয়া’য় ভাঙন ধরানো। কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতা বুধবার বলেন, ‘‘সিবিআই, ইডি-কে রাজনৈতিক স্বার্থে মাঠে নামানো হবে। কিন্তু তা দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই হিসেবে তুলে ধরতে নরেন্দ্র মোদী আগেভাগেই লাল কেল্লা থেকে ভূমিকা তৈরি করে রাখলেন বলে মনে হচ্ছে।’’

তৃণমূলের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে আরজেডি-র লালুপ্রসাদ-তেজস্বী যাদব, বিআরএস-এর কে কবিতা থেকে আম আদমি পার্টির মণীশ সিসৌদিয়া বা ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার হেমন্ত সরেন, সব আঞ্চলিক দলের বিরুদ্ধেই কোনও না কোনও দুর্নীতির মামলা রয়েছে। রাহুল গান্ধী মোদী পদবি নিয়ে মানহানির মামলায় শাস্তি থেকে রেহাই পেলেও বিজেপি নেতারা মনে করিয়ে দিয়েছেন, তাঁর ও সনিয়া গান্ধীর বিরুদ্ধে সিবিআই, ইডি-র ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলা রয়েছে। প্রিয়ঙ্কা গান্ধীর স্বামী রবার্টের বিরুদ্ধে লন্ডনের একটি সম্পত্তি কেনায় আর্থিক নয়ছয়ের অভিযোগে ইডি মামলা করেছে। রবার্ট সেই মামলায় আগাম জামিন পেয়েছিলেন। ইডি আজ দিল্লি হাই কোর্টে সেই আগাম জামিনের বিরোধিতা করেছে।

বিরোধীদের দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে দাগিয়ে দিতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি ফের সক্রিয় হতে পারে আঁচ করে আজ কংগ্রেস তথা বিরোধী শিবির প্রশ্ন তুলেছে, যে সব বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা রয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে মোদী সরকার কী করছে? সিএজি সংসদে সাতটি রিপোর্ট পেশ করে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সাত ক্ষেত্রে দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে। তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী কী পদক্ষেপ করছেন?

লাল কেল্লা থেকে নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, দুর্নীতি, পরিবারতন্ত্র ও তোষণনীতি—এই তিনের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে লড়তে হবে। কারণ, এই তিনটি চ্যালেঞ্জই দেশকে পিছিয়ে রাখছে। আজ কংগ্রেস মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনতে সাংবাদিক সম্মেলন করে প্রশ্ন তুলেছেন, বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী, হিমন্ত বিশ্ব শর্মা, নারায়ণ রাণে, রঘুবর দাসদের বিরুদ্ধেও তো দুর্নীতির মামলা রয়েছে। অথচ ওঁরা বিজেপির ওয়াশিং মেশিনে ঢুকে পড়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ হয় না কেন? বিরোধী শিবিরের রাজ্যসভার সাংসদ কপিল সিব্বলের প্রশ্ন, প্রধানমন্ত্রী গত দশ বছর ধরে দুর্নীতিমুক্ত ভারতের কথা বলছেন। এখন আবার দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা বলছেন। এত দিন তা হলে কী করলেন?

কংগ্রেস সিএজি-র রিপোর্ট তুলে ধরে বলেছে, মোদী সরকারের আমলে ভারতমালা প্রকল্পে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের থেকে অনেক বেশি অর্থ খরচ হয়েছে। দিল্লির দ্বারকা এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি করতে প্রতি কিলোমিটার ১৮ কোটি টাকার অনুমোদিত খরচের বদলে ২৫০ কোটি টাকা করে খরচ হচ্ছে। বরাত দেওয়া, টোল আদায়ে অনিয়ম হয়েছে। আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পে বিরাট অনিয়ম, প্রতারণা হয়েছে। অযোধ্যা উন্নয়ন প্রকল্পেও দুর্নীতি হয়েছে। কংগ্রেসের বক্তব্য, সবই তো প্রধানমন্ত্রীর নাকের ডগায় হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারে তিনিই সব। তা হলে এই দুর্নীতির দায়ও তাঁকে নিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী লাল কেল্লা থেকে পরিবারতন্ত্র নিয়ে সরব হয়েছিলেন। বিরোধীদের পরিবারতান্ত্রিক দল হিসেবে দাগিয়ে দিয়ে ১৪০ কোটি দেশের মানুষকে নিজের ‘পরিবারজন’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। আজ কংগ্রেসের প্রশ্ন, রাজনাথ সিংহ, বসুন্ধরা রাজে, নারায়ণ রাণে, কল্যাণ সিংহ, গোপীনাথ মুণ্ডে, প্রমোদ মহাজন, সকলের পুত্রকন্যারা বিজেপির পদে রয়েছেন। পীযূষ গয়াল, রবিশঙ্কর প্রসাদের পিতারা রাজনীতিতে ছিলেন। কংগ্রেস থেকে মোদী যাঁদের বিজেপিতে নিয়েছেন, সেই জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, জিতিন প্রসাদ, অনিল অ্যান্টনি, রীতা বহুগুণা জোশীরাও রাজনৈতিক পরিবার থেকে উঠে এসেছেন। এই সব ক্ষেত্রে পরিবারতন্ত্র কোথায় থাকে?

১৫ অগস্টে নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, আগামী বছরও তিনি লাল কেল্লা থেকে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করবেন। আজ কংগ্রেস কটাক্ষ করে বলেছে, এটা শুধু প্রধানমন্ত্রীর অহঙ্কার নয়, আত্মবিশ্বাসের অভাবও। তাই তিনি নিজেই বার বার ভোটে জিতে ফের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কথা বলে নিজেকে আশ্বস্ত করছেন। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে থেকে আরজেডি-র লালুপ্রসাদ যাদব মোদীকে কটাক্ষ করে বলেছিলেন, নরেন্দ্র মোদী আগামী বছর নিজের বাড়িতে পতাকা তুলবেন।

পাল্টা আক্রমণে গিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজকুমার সিংহ বলেছেন, ‘‘লালুপ্রসাদ, তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে এত দুর্নীতির মামলা। টাকা নিয়ে চাকরি দিয়েছেন। টাকা পেলে জমি নিয়েছেন। তাঁরা বিবৃতি দিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেই দিয়েছেন, বিরোধীদের ঐক্য আসলে ২০ লক্ষ কোটি টাকার দুর্নীতির নিশ্চয়তা।’’ কংগ্রেসের সুপ্রিয়া শ্রীনতের পাল্টা কটাক্ষ, ‘‘লাল কেল্লা থেকে জাতির উদ্দেশে বক্তৃতা দেখে রাজনৈতিক পথসভা মনে হচ্ছিল। এটা থ্রি ইডিয়টস ছবি নয় যে অল ইজ ওয়েল বললেই সব ঠিক হয়ে যাবে। এ বার ঝোলা উঠিয়ে যেতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

PM Narendra Modi Congress opposition alliance BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE