বিচারপতি যশবন্ত বর্মার বাসভবনেই ছিল রাশি রাশি ৫০০ টাকার নোটের স্তূপ! রিপোর্ট দিয়ে এ বার এমনটাই জানাল সুপ্রিম কোর্টের গড়ে দেওয়া তিন বিচারপতির তদন্ত কমিটি। সম্প্রতি ৫৫ জন প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান সংগ্রহের পর ৬৪ পৃষ্ঠার রিপোর্ট জমা দিয়েছে তারা। শুধু তা-ই নয়, বিচারপতি বর্মাকে অপসারণের সুপারিশও করা হয়েছে।
চলতি বছরের দোলের দিন দিল্লি হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি যশবন্ত বর্মার বাসভবনের গুদামে আগুন লেগে যায়। দমকলকর্মীরা আগুন নেবাতে গিয়ে আধপোড়া নোটের রাশি রাশি বান্ডিল উদ্ধার করেন। সেই থেকে বিতর্কের সূত্রপাত। ওই বিচারপতিকে দিল্লি থেকে ইলাহাবাদ হাই কোর্টে সরিয়ে দেওয়া হয়। ক্রমে মামলার জল গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। শীর্ষ আদালত ওই ঘটনার অনুসন্ধানের জন্য হাই কোর্টের তিন বিচারপতিকে নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। গত মাসে ওই অনুসন্ধান কমিটি একটি মুখবন্ধ খামে রিপোর্ট জমা দেয় সুপ্রিম কোর্টে। তাতে বলা হয়েছে, অগ্নিকাণ্ডের দিন বিচারপতি বর্মার বাসভবনের ভিতরে একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী রাশি রাশি টাকার স্তূপ দেখেছিলেন। কেবলমাত্র বিচারপতি ও তাঁর পরিবারের সদস্যদেরই ওই গুদামে যাওয়ার অনুমতি ছিল। বহিরাগতেরা কেউ সেখানে ঢুকতে পারতেন না। বিচারপতির দাবি, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানতেন না। কিন্তু তিনি কখনও পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেননি। বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষকেও বিষয়টি জানাননি।
আরও পড়ুন:
তিন সদস্যের দল আরও জানিয়েছে, ইলাহাবাদ হাই কোর্টের বিচারপতির আচরণ ‘অস্বাভাবিক’। এর পরেই তাঁকে অপসারণের সুপারিশ করেছে ওই কমিটি। বিচারপতি বর্মার মেয়ে-সহ ৫৫ জন সাক্ষীর সঙ্গে কথা বলার পরেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তদন্তকারীরা। সাক্ষীদের মধ্যে রয়েছেন দিল্লি দমকল বিভাগ এবং দিল্লি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তারাও। দমকল আধিকারিক অঙ্কিত সহবাগ, প্রদীপ কুমার, মনোজ মেহলাওয়াত, ভানওয়ার সিংহ এবং পুলিশকর্মী রাজেশ কুমার, রূপ চাঁদ প্রমুখেরা বয়ান দিয়েছেন। অগ্নিকাণ্ডের দিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, ‘‘এত বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা দেখে আমি হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম! ওই দিন জীবনে প্রথম বার এত টাকা একসঙ্গে দেখেছিলাম।’’ তা সত্ত্বেও, অগ্নিকাণ্ডের পরেও বিচারপতি বর্মা বা তাঁর পরিবারের কেউই বিষয়টি পুলিশকে জানাননি বলে অভিযোগ। ঘটনার কোনও ‘যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা’ও দিতে পারেননি তাঁরা। শুধু তা-ই নয়, বিচারপতির ব্যক্তিগত সচিব নাকি দমকলকর্মীদের অনুরোধ করেছিলেন, প্রাথমিক রিপোর্টে টাকা উদ্ধারের প্রসঙ্গ উল্লেখ না করতে! তদন্ত রিপোর্টে সে সবও উল্লেখ করেছে তিন সদস্যের কমিটি।