Advertisement
E-Paper

নয়া ডেঙ্গিতে কাঁপছে দক্ষিণের তিন রাজ্য

ডেঙ্গি সংক্রমণের বাড়াবাড়িতে দেশের প্রথম তিনটি স্থানে রয়েছে দক্ষিণের ওই তিনটি রাজ্য। আক্রান্তের সংখ্যায় কেরল অন্য সব রাজ্যকে টপকে গেলেও মৃতের সংখ্যায় তামিলনাড়ু রয়েছে প্রথম স্থানে। তার পরেই কেরল। তৃতীয় স্থান উত্তরপ্রদেশের। চতুর্থ পশ্চিমবঙ্গ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:১৬

ডেঙ্গির এক নতুন প্রজাতির হানায় এ বার জেরবার দক্ষিণের তিন রাজ্য— তামিলনাড়ু, কেরল এবং কর্নাটক। ওই নতুন জীবাণুর জেরেই ডেঙ্গিতে মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে শ্রীলঙ্কাতেও। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ভাইরোলজিস্টরা জানাচ্ছেন, পুণের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি’ (এনআইভি) ইতিমধ্যেই নয়া প্রজাতির ডেঙ্গি ভাইরাসটিকে শনাক্ত করেছেন।

ডেঙ্গি সংক্রমণের বাড়াবাড়িতে দেশের প্রথম তিনটি স্থানে রয়েছে দক্ষিণের ওই তিনটি রাজ্য। আক্রান্তের সংখ্যায় কেরল অন্য সব রাজ্যকে টপকে গেলেও মৃতের সংখ্যায় তামিলনাড়ু রয়েছে প্রথম স্থানে। তার পরেই কেরল। তৃতীয় স্থান উত্তরপ্রদেশের। চতুর্থ পশ্চিমবঙ্গ। আক্রান্তের সংখ্যায় তৃতীয় স্থানে থাকলেও মৃতের পরিসংখ্যানে কর্নাটকের ঠাঁই হয়েছে তালিকার অনেক নীচে।

দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা ডেঙ্গি তথ্যের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের অধীন কীট-পতঙ্গবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগ গত ২৯ অক্টোবর যে রিপোর্ট (পশ্চিমবঙ্গের শেষ তথ্য এসেছে ৪ অক্টোবর) তৈরি করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে তামিলনাড়ুতে ডেঙ্গিতে মারা গিয়েছেন ৫২ জন। কেরলে মৃতের সংখ্যা ৩৫। উত্তরপ্রদেশে ২৬ এবং পশ্চিমবঙ্গে মারা গিয়েছেন ১৯ জন। পশ্চিমবঙ্গ শেষ বার রিপোর্ট পাঠানোর পরে এক মাস কেটে গিয়েছে। এর মধ্যে সেখানে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কোথায় পৌঁছেছে, কত ধাপ উঠে এসেছে তারা, সেই তথ্য অবশ্য কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কাছে নেই।

দক্ষিণ ভারতের দু’টি রাজ্য তামিলনাড়ু এবং কেরলে ডেঙ্গি এ বার এত ভয়াবহ চেহারা নিল কী ভাবে?

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, ‘‘এনআইভি-র গবেষকেরা তামিলনাড়ুর ভেলোরের এক রোগীর রক্তের নমুনায় নতুন ওই ডেঙ্গি প্রজাতির সন্ধান পেয়েছেন।’’ ওই জীবাণুটির জন্যই ২০০৫ সালে সিঙ্গাপুরে ডেঙ্গি ভয়াবহ আকার নিয়েছিল বলে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কর্তাটি জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘‘২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কায়, ২০১২ সালে তামিলনাড়ুতে এবং ২০১৩ সালে কেরলে ভয়াবহ ডেঙ্গি সংক্রমণের জন্য ওই নয়া প্রজাতিই দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে। তালিনাড়ু, কেরলের পাশাপাশি এ বছরে ফের শ্রীলঙ্কায় ডেঙ্গি সংক্রমণ ছড়াচ্ছে মারাত্মক ভাবে। তবে মহারাষ্ট্র কিংবা দিল্লির কোনও ডেঙ্গি রোগীর নমুনায় এই নয়া প্রজাতির সন্ধান মেলেনি বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক।

তারা জানাচ্ছে, ডেঙ্গির চার ধরনের প্রজাতি রয়েছে। ডেঙ্গ-ওয়ান, ডেঙ্গ-টু, ডেঙ্গ-থ্রি এবং ডেঙ্গ-ফোর। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সঙ্গে যুক্ত এক ভাইরোলজিস্ট বলেন, ‘‘চল্লিশের দশক থেকে ভারতে ডেঙ্গ-ওয়ানের যে জীবাণুটি সক্রিয়, সেটি আমেরিকান-আফ্রিকান প্রজাতির। কিন্তু ভেলোরের রোগীর রক্ত নমুনায় পুণের এনআইভি-র গবেষকেরা এমন একটি ডেঙ্গ-ওয়ান প্রজাতির জীবাণু খঁজে পেয়েছেন, যার ডিএনএ-র গঠন আমেরিকান-আফ্রিকান প্রজাতির থেকে আলাদা।’’ ভাইরোলজিস্টেরা আরও বলছেন, ‘‘২০০৫ সালে সিঙ্গাপুরে ওই নতুন প্রজাতির ডেঙ্গ-ওয়ান ভাইরাসটিই মহামারীর মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল। সেটিই এখন দেশে দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে।’’

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সূত্রটি জানাচ্ছেন, ওই নতুন প্রজাতির ভাইরাসটি এখনও কেরল, তমিলনাড়ু ছাড়া দেশের অন্যত্র সক্রিয় নয় বলেই মনে হচ্ছে। ‘‘তবে সেটি অন্যত্র সক্রিয় হলে আমাদের আরও বিপদের জন্য অপেক্ষা করতে হবে,’’ মন্তব্য করেছেন ওই সূত্রটি। এ বছর শ্রীলঙ্কায় নতুন করে ত্রাসের সৃষ্টি করেছে ডেঙ্গি। সেখানে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা এক লক্ষ ছাড়িয়েছে। মারা গিয়েছেন অন্তত ৩০০ জন। তার জন্য ওই নতুন প্রজাতিটিকেই দায়ী করছেন পরজীবী বিজ্ঞানীরা।

নতুন প্রজাতিতে মৃত্যুহার বাড়ছে কেন?

পরজীবী বিজ্ঞানী অমিতাভ নন্দীর ব্যাখ্যা, ডেঙ্গি বা ম্যালেরিয়ার যে সব জীবাণু বহু দিন ধরে কোনও এলাকায় সক্রিয় থাকে, সেখানকার মানুষের শরীরে আপনা থেকেই অ্যান্টবডি তৈরি হয়ে থাকে। ফলে ওই ‘পরিচিত’ জীবাণু শরীরে ঢুকলে সেটিকে মেরে ফেলে ওই অ্যান্টিবডি। কিন্তু কোনও নতুন প্রজাতির জীবাণুর সংক্রমণ হলে, অপরিচিত ওই জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করার মতো অ্যান্টিবডি রক্তে মজুত থাকে না। তাই কোনও প্রতিরোধ ছাড়াই শরীরের মধ্যে ধ্বংসলীলা চালায় নতুন জীবাণুটি। মৃত্যুহারও বাড়ে। চেন্নাই এবং কেরলে সেটাই ঘঠেছে বলে মনে করছেন পরজীবী বিজ্ঞানীরা।

Dengue Tamil Nadu Kerala Karnataka West Bengal Malaria Virus National Institute of Virology
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy