Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
International News

৩৭০-এর ধাক্কা! আতঙ্কে পাক অধিকৃত কাশ্মীর ছাড়ছেন বাসিন্দারা

ভারতের ৩৭০-এর ধাক্কা নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে পড়েছে এ পারের উপত্যকাতেও। নিয়ন্ত্রণরেখার দু’পারেই বাড়ছে সেনা-আধাসেনার আনাগোনা। বাড়ছে সমরাস্ত্রবাহী গাড়ির চলাফেরা।

উদ্বিগ্ন পাক অধিকৃত কাশ্মীরের বাসিন্দা। ছবি: এএফপি

উদ্বিগ্ন পাক অধিকৃত কাশ্মীরের বাসিন্দা। ছবি: এএফপি

সংবাদ সংস্থা
নীলম উপত্যকা (পাক অধিকৃত কাশ্মীর) শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৯ ১৮:০০
Share: Save:

সুনসান রাস্তাঘাট, শাটার বন্ধ দোকান-বাজার। যেন কার্ফু চলছে গোটা এলাকায়। আতঙ্কের ছাপ বাসিন্দাদের চোখে মুখে। মুজফ্ফরাবাদ থেকে যে রাস্তাটা ডান দিকে বাঁক নিয়ে উপত্যকার বুক চিরে আথমুকাম হয়ে কেরান বা লাওয়াট চলে যাচ্ছে, সেই রাস্তাতেও গোটা দিনে সাঁজোয়া গাড়ি ছাড়া অন্য গাড়ি চোখে পড়ে না।

শ্রীনগর থেকে মেরেকেটে ১০০ কিলোমিটার দূরে এই ছবিও কাশ্মীরের। নীলম নদীর ধারে এই উপত্যকা পাক অধিকৃত কাশ্মীর, নিয়ন্ত্রণ রেখার এ পারে। ভারতের ৩৭০-এর ধাক্কা নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে পড়েছে এ পারের উপত্যকাতেও। নিয়ন্ত্রণরেখার দু’পারেই বাড়ছে সেনা-আধাসেনার আনাগোনা। বাড়ছে সমরাস্ত্রবাহী গাড়ির চলাফেরা। সব মিলিয়ে উত্তেজনার পারদ যত বাড়ছে, ততই আতঙ্ক বাড়ছে নিয়ন্ত্রণ রেখার এ পারেও।

প্রতি গ্রীষ্মে, ‌ও পারের মতো, পাক অধিকৃত কাশ্মীরও আম পাকিস্তানি পর্যটকদের অন্যতম পছন্দের গন্তব্য। নিয়ন্ত্রণ রেখার ও পারে, পর্যটক, অমরনাথযাত্রী-সহ উপত্যকার বাইরের লোকজনদের কাশ্মীর ছাড়ার সরকারি নির্দেশ শোনার পর থেকে দলে দলে লোক পালাচ্ছে পাক অধিকৃত কাশ্মীর থেকেও। আর তার পরেই ভারত সরকারের ৩৭০ ধারা রদের সিদ্ধান্ত অনিশ্চয়তার ছাপ ফেলেছে পাক অধিকৃত কাশ্মীরেও।

নীলম উপত্যকার বাসিন্দা প্রৌঢ়া খুরশিদা বেগম। সংবাদ সংস্থা এএফপিকে তিনি বলেন, ‘‘দলে দলে মানুষ পালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমার কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।” নাবালক চার ছেলে মেয়েকে নিয়ে বিধবা খুরশিদা অনিশ্চয়তার দিন গুনছেন। খুরশিদার মতোই নীলম উপত্যকার বাসিন্দা সফিক বাট। ছোটখাটো ব্যবসা। তিনি এএফপি-র প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন, ‘‘আমার ভাই থাকেন শ্রীনগরে। গত তিন দিন তাঁর কোনও খোঁজ পাইনি। কোনও যোগাযোগ হয়নি।” চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটছে সফিকের মতো আরও অনেকের যাঁদের আত্মীয়রা রয়েছেন নিয়ন্ত্রণ রেখার ও পারে। অর্থাৎ ভারতীয় ভূ-খণ্ডে।

পাক অধিকৃত কাশ্মীরের বাড়ছে সেনার তৎপরতা। ছবি: এএফপি

আরও পড়ুন: কাশ্মীরে কি বিক্ষোভ শুরু? শ্রীনগরে পুলিশের তাড়া খেয়ে বিক্ষোভকারীর মৃত্যু, গ্রেফতার ১০০

আরও পড়ুন: হুয়ায়েই ভারতে বাধা পেলে, ভারতীয় সংস্থাও ব্যবসা করতে পারবে না চিনে, হুমকি বেজিংয়ের

জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্যের অধিকার খর্ব করা, সংবিধানের ৩৭০ ধারার বিলোপ করার সিদ্ধান্ত ঘিরে ইতিমধ্যেই ও পারে কাশ্মীর উপত্যকার বিভিন্ন প্রান্তে শুরু হয়েছে বিক্ষিপ্ত অশান্তি। মৃত্যু হয়েছে এক বিক্ষোভকারীর। সেই অশান্তি সামলাতে মজুদ বিশাল সেনা এবং আধাসেনার বাহিনী। যে কোনও মুহূর্তে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠতে পারে গোটা উপত্যকা। গত সাত দশকের অভিজ্ঞতা থেকে মানুষ জানেন, নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে সেই আগুনের আঁচ ঝলসে দেয় অন্য পারের জনপদকেও।

অন্য বছরের গরমের মরসুমে গোটা নীলম উপত্যাকার ছোট-বড় প্রায় শ’তিনেক হোটেল, গেস্ট হাউসে ঠাঁই নেই রব ওঠে। সংবাদ সংস্থাকে ওই এলাকার ডেপুটি কমিশনার রাজা শহিদ মেহমুদ বলেন, ‘‘এ বছর গোটা উপত্যকায় এক জনও পর্যটক নেই।” তিনি বলেন, ‘‘এ রকম অবস্থা এর আগে কখনও হয়নি।” স্থানীয় হোটেল ব্যবসায়ী রাজা আকিলের গলাতেও আশঙ্কা। তিনি বলেন, ‘‘অশান্তির আশঙ্কায় মাঝে মধ্যে মন্দা যায়। তবে এ রকম জনশূন্য অবস্থা কোনও বার হয়নি। অন্য বার কিছু দিনের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। কিন্তু এ বার স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসতে অনেক সময় লাগবে বলে মনে হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jammu and Kashmir Article 370 POK
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE