আর কাপড় বা হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বা হঠাৎ মাটির দিকে ঝুঁকে পড়ে পরিচিতি গোপন করতে পারবেন না অপরাধীরা। ক্যামেরার সামনে মুখ লুকিয়ে আর নিজের নাম-ধাম ঢাকাচাপা রাখা যাবে না।
হাঁটা-চলার ভঙ্গি, সেই সময় শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কী ভাবে ওঠা-নামা করে বা সেগুলি কী ভাবে থাকে শরীরের কোন কোন দিকে, তা জরিপ করেই এ বার দূর থেকে জেনে যাওয়া যাবে অপরাধীদের পরিচিতি। নাম, ধাম আর সেই সূত্রে তার বা তাদের বাড়ির ঠিকানাও। ওই সবই করা যাবে একটি অত্যাধুনিক সফট্ওয়্যারের মাধ্যমে।
মানুষের উপর নজরদারির এই অভিনব প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে একটি চিনা সংস্থা ‘ওয়াট্রিক্স’। নজরদারির জন্য ইতিমধ্যেই সেই আধুনিক প্রযুক্তির ঢালাও ব্যবহার শুরু হয়ে গিয়েছে চিনের দু’টি এলাকা, রাজধানী বেজিং ও সাংহাই প্রদেশে। এই প্রযুক্তির নাম- ‘গেইট রেকগনিশন’। এর জন্য আলাদা ভাবে নিরাপত্তাকর্মী রাখতে হবে না। মোতায়েন করতে হবে না অস্ত্রধারী পুলিশ বা জওয়ানও। ওই সফট্ওয়্যারই আপনাআপনি চিনে ফেলবে অপরাধীকে। তবে সামান্য একটু সময় লাগবে। মুখ লুকোতে চাওয়া মানুষের চালচলন দেখে, শরীরী বিভঙ্গের মাপজোক করে তার নাম-ধাম-পরিচিতি মিনিট দশেকের মধ্যেই জানিয়ে দেবে ওই ‘গেইট রেকগনিশন’ সফট্ওয়্যার।
চিনা সংস্থা ‘ওয়াট্রিক্স’-এর সিইও হুয়াং ইয়ংঝেন বলেছেন, ‘‘যে কোনও বায়োমেট্রিক পদ্ধতি, ফেসিয়াল রেকগনিশন পদ্ধতির চেয়ে ঢের ভাল এই পদ্ধতি। ফেসিয়াল রেকগনিশন পদ্ধতির যেটা মূল অসুবিধা, তা হল কৌশলে মুখ লুকিয়ে রাখতে পারলেই নজরদারির পাল্লা থেকে দূরে থাকা যায়। কিন্তু গেইট রেকগনিশন যেহেতু চালচলনের ছন্দ আর শরীরের নানা বিভঙ্গের জরিপ করেই অপরাধীদের চিনে ফেলতে পারে, তাই এর চোখ এড়ানো কঠিন।’’
আরও পড়ুন- বিজ্ঞানের অস্ত্রেই ট্রাম্পকে ‘জখম’ করলেন ডেমোক্র্যাটরা
আরও পড়ুন- সময়ে কাজ না করতে পারলেই মূত্রপান, বেত্রাঘাত, খাওয়ানো হয় কীটপতঙ্গ!
চিনের পশ্চিম প্রান্তে শিনজিয়াং প্রদেশে ইতিমধ্যেই এই প্রযুক্তির বহুল ব্যবহার শুরু হয়েছে। কারণ, ওই প্রদেশে মুসলিমদের সংখ্যা অনেকটাই বেশি। সন্ত্রাসবাদের আশঙ্কায় বেজিং প্রশাসন তাঁদের উপর কড়া নজর রাখতে চায় বলেই এই প্রযুক্তির ঢালাও ব্যবহার শুরু হয়ে গিয়েছে শিনজিয়াং-এ।
তবে এই প্রযুক্তি যে এই প্রথম বাজারে এল, তা কিন্তু নয়। এই প্রযুক্তিকে বাজারে আনার চেষ্টা এর আগে চালিয়েছে জাপান, ব্রিটেন ও আমেরিকা। কিন্তু প্রযুক্তির সাফল্যের নিরিখে তা ধোপে টেঁকেনি।
‘ওয়াট্রিক্স’-এর সিইও ইয়ংঝেন জানিয়েছেন, কারও চালচলনের ছন্দ, শরীরের নানা বিভঙ্গের ভিসুয়্যাল থেকে একটি সিল্যুয়েট কেটে নিয়ে তাকে টুকরো টুকরো করে বিশ্লেষণ করেই ওই সফট্ওয়্যার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সম্পর্কে তার ‘মেমরি’ তৈরি করে ফেলে। আর তারই প্রেক্ষিতে, মুখ লুকোতে চাইলেও, ধরে ফেলে অপরাধীকে। তবে ফেস রেকগনিকশন প্রযুক্তির চেয়ে এতে সময় লাগে একটু বেশি। প্রযুক্তির উন্নয়নের মাধ্যমে সেই বাধাও ভবিষ্যতে কমিয়ে ফেলা সম্ভব, আশা ইয়ংঝেনের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy