Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Maldives

ড্রাগন-ভীতি উড়িয়ে ভারতের নৌ-জোটের পক্ষে জোর সওয়াল মলদ্বীপের

ভারত মহাসাগরের সুবিশাল জলসীমায় কার আধিপত্য থাকবে, তা নিয়ে এশিয়ার দুই বড় শক্তি চিন এবং ভারতের মধ্যে টানাপড়েন ক্রমশ বাড়ছে।

ভারত মহাসাগরে ভারতীয় নৌবাহিনীর রণতরী। ছবি: নৌবাহিনীর টুইটার হ্যান্ডল থেকে সংগৃহীত।

ভারত মহাসাগরে ভারতীয় নৌবাহিনীর রণতরী। ছবি: নৌবাহিনীর টুইটার হ্যান্ডল থেকে সংগৃহীত।

নিজস্ব প্রতিবেদন
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ জানুয়ারি ২০১৯ ২১:২১
Share: Save:

সামরিক ক্ষেত্রে ভারত ছাড়া আর কোনও দেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর কথা তাঁরা ভাবছেনই না। কয়েক দিন আগেই জানিয়েছিলেন মলদ্বীপের বিদেশমন্ত্রী। এ বার দ্বীপরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান বুঝিয়ে দিলেন, ভারত মহাসাগর থেকে প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত জলভাগের নিয়ন্ত্রণ হাতে রাখার জন্য যে আন্তর্জাতিক টানাপড়েন চলছে, সেই ভূকৌশলগত লড়াইয়েও মলদ্বীপ ভারতের শিবিরেই থাকবে।

মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট পদে শপথ নিয়েই ইব্রাহিম মহম্মদ সোলি জানিয়েছিলেন যে, ভারতকেই তিনি ঘনিষ্ঠতম সহযোগী মনে করছেন। প্রেসিডেন্ট সোলির শপথ গ্রহণে হাজির ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পরে ভারত সফর সেরে গিয়েছেন প্রেসিডেন্ট সোলি নিজে। এ বার ভারত সফর করলেন মলদ্বীপের বিদেশমন্ত্রী মারিয়া দিদি এবং সে দেশের সামরিক বাহিনীর সর্বোচ্চ পদাধিকারী মেজর জেনারেল আবদুল্লা শামাল। ভারতের সঙ্গে দ্বিতীয় দফার নিরাপত্তা বৈঠক করতেই প্রেসিডেন্ট সোলির দুই প্রতিনিধির এই ভারত সফর।

নয়াদিল্লিতে পা রেখেই দ্বীপরাষ্ট্রের বিদেশমন্ত্রী বলেছিলেন, ভারত ছাড়া অন্য কোনও দেশের সঙ্গে সামরিক ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর প্রয়োজন মলদ্বীপের নেই। নাম না করলেও, আসলে চিনের সঙ্গে কোনও সামরিক সমঝোতায় না যাওয়ার কথাই যে মারিয়া দিদি বলেছিলেন, তা বুঝতে কূটনীতিকদের কোনও সমস্যা হয়নি। রবিবার সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মেজর জেনারেল আবদুল্লা শামাল ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, ইন্দো-প্যাসিফিক জোটকে সমর্থন করতেও তাঁরা তৈরি।

আরও পড়ুন: চড়া সুদে হাঁসফাঁস! চিনের সঙ্গে যৌথ রেল প্রকল্প বাতিল করল মালয়েশিয়া​

সংবাদ মাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে মেজর জেনারেল শামাল বলেছেন, ‘‘আমার মনে হয় ইন্দো-প্যাসিফিক হল এমন একটা ভূ-রাজনৈতিক গঠন, যা থেকে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ছোট ছোট দেশগুলো অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হতে পারে।’’ ইন্দো-প্যাসিফিক জোটের ধারণাটা ক্রমশ আরও মজবুত হবে এবং অনেক ছোট ছোট দেশ তাতে সামিল হবে বলে মলদ্বীপের সামরিক কর্তা আশা প্রকাশ করেন।

ভারত মহাসাগরের সুবিশাল জলসীমায় কার আধিপত্য থাকবে, তা নিয়ে এশিয়ার দুই বড় শক্তি চিন এবং ভারতের মধ্যে টানাপড়েন ক্রমশ বাড়ছে। সামরিক বা ভূকৌশলগত কারণে তো বটেই, বাণিজ্যিক কারণেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভারত মহাসাগরীয় আন্তর্জাতিক জলপথ। নিজেদের নৌসেনার শক্তি এবং রণতরীর সংখ্যা দ্রুত বাড়িয়ে, ভারত মহাসাগরীয় এলাকার নানা অংশে বন্দর তৈরি করে, সামরিক টহলদারি বাড়িয়ে চিন গোটা জলপথে একাধিপত্য কায়েম করতে চাইছে বলে ভারতীয় কূটনীতিকদের মত। তবে চিন কোনও দিনই তা স্বীকার করে না। বেজিং বার বার-ই বলে, আন্তর্জাতিক জলপথের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে এবং নিজেদের বাণিজ্যিক স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতেই চিনা নৌসেনা তৎপরতা বাড়িয়েছে গোটা ভারত মহাসাগরীয় এলাকায়। ভারতের বা অন্য কোনও দেশের প্রভাব খর্ব করা চিনের উদ্দেশ্য নয় বলেও বেজিং দাবি করে।

বলাই বাহুল্য, বেজিঙের এই তত্ত্বে নয়াদিল্লি বিশ্বাস রাখে না। চিনা আধিপত্য রুখতে তাই ভারতীয় নৌসেনাও তৎপরতা বাড়িয়েছে গোটা ভারত মহাসাগরে। ভিয়েতনাম, ফিলিপিন্স, ব্রুনেই, মরিশাস, সেশ্যেলস, মলদ্বীপ-সহ বিভিন্ন ভারত মহাসাগরীয় দেশের সঙ্গে সামরিক সমঝোতা দ্রুত বাড়িয়েছে নয়াদিল্লি।

আরও পড়ুন: লটারির নামে প্রতারণা, রাজ্য থেকে হাওয়ালাতে টাকা যাচ্ছে পাকিস্তানে, ধৃত দুই শিল্পকর্তা​

আধিপত্য বিস্তারের চিনা প্রচেষ্টা নিয়ে যে শুধু ভারত উদ্বেগে, তা কিন্তু নয়। আমেরিকা, জাপান, অস্ট্রেলিয়ার মতো শক্তিগুলিও সমান উদ্বেগে। তাই ভারতকে সঙ্গে নিয়ে এই সুবিশাল জলভাগে একটি সুসংহত সামরিক সমঝোতা গড়ে তোলার প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে আমেরিকা। জাপান অনেকাংশেই সেই সমঝোতার অংশ। ধীরে ধীরে এই অক্ষে জায়গা দেওয়া হচ্ছে অস্ট্রেলিয়াকেও। আড়ে-বহরে ক্রমশ বাড়তে এই সামরিক সমঝোতাকেই কূটনীতিকরা ইন্দো-প্যাসিফিক নামে ডাকছেন। ভারত মহাসাগর বা ইন্ডিয়ান ওশন থেকে প্রশান্ত মহাসাগর বা প্যাসিফিক ওশন পর্যন্ত এর ব্যাপ্তি বলেই ইন্দো-প্যাসিফিক নামে ডাকা হচ্ছে।

বিরাট জলভাগ জুড়ে এই ক্রমবর্ধমান সামরিক সমঝোতাকে চিন যে মোটেই ভাল চোখে দেখছে না, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ভারত-জাপান-আমেরিকা-অস্ট্রেলিয়া অক্ষের বিরুদ্ধে চিনের সরকারি সংবাদমাধ্যম একাধিকবার তোপ দেগেছে। কিন্তু মলদ্বীপের সামরিক বাহিনী প্রধান বুঝিয়ে দিলেন,চিনা তোপের পরোয়া তাঁরা করছেন না। প্রয়োজন হলে ইন্দো-প্যাসিফিক জোটে সামিল হতে বা ওই জোটকে সমর্থন করতেও যে তাঁরা প্রস্তুত, দ্বীপরাষ্ট্রের সেনাকর্তা তা স্পষ্ট করে দিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Maldives Narendra Modi Indian Ocean Pacific
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE