Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
United States

ভেবেছিলাম নায়াগ্রার ছবি তুলতে যাব... পোলার ভর্টেক্সে সব ভন্ডুল

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাফেলোতে আছেন পেশায় তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী বেলগাছিয়ার বাসিন্দা ইন্দ্রনীল হাজরা। তুমুল বরফপাত আর শৈত্যপ্রবাহের মধ্যে পোষ্য দুই সারমেয়কে নিয়ে আটকে আছেন বাড়িতেই। সেই অভিজ্ঞতা আনন্দবাজার ডিজিটালকে জানালেন তিনি। প্রায় ছয় বছর হল এখানে আছি। দেশে ফেরার সময় প্রায় হয়ে এল। তবে আমেরিকা ও তথা বাফেলো এ দেশ ছাড়ার আগে সত্যিই খেল দেখিয়ে দিল। স্মরণীয়!

ছবি: ইন্দ্রনীল হাজরা।

ছবি: ইন্দ্রনীল হাজরা।

শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৯ ১৯:৩৫
Share: Save:

এই পোলার ভর্টেক্সটা হঠাৎ করেই এল। এক হপ্তা আগেও কোনও পূর্বাভাস ছিল না। গতকাল ছিল এই মরসুমের শীতলতম দিন। বাফেলোয় সর্বনিম্ন মাইনাস ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যদিও ফিল্স লাইক, অর্থাত্ অনুভবের দিক থেকে তা ছিল প্রায় মাইনাস তিরিশ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অনবরত হচ্ছে ভারী তুষারপাত।

আমি এখন বাফেলোতে। আর আমার স্ত্রী আছে সান ফ্রান্সিসকোতে। ওঁর ফেরা নিয়ে একটু চিন্তাই হচ্ছে। কারণ, ওঁর ফেরার রাস্তা ডেট্রয়েট হয়ে। সেখানে ইতিমধ্যেই ফ্লাইট বাতিল হওয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। ডেট্রয়েটের অবস্থাও ভাল নয়, তাই মনে হচ্ছে আটকে যাবে ডেট্রয়েটে।

আমাদের এখানে সরকার থেকে গাড়ি চালাতে বারণ করে দিয়েছে। আজ বেশ কটা দুর্ঘটনা ঘটে গেছে ইতিমধ্যেই। কি হবে, কে জানে। এর মধ্যেই বিমানবন্দর যেতে হবে।আজ সন্ধ্যেয় দৃশ্যমানতা অত্যন্ত কমে গেছিল। ২০০ গজ দূরের জিনিস দেখা যাচ্ছিল না।

তার মধ্যে আমার দুই কুকুর ম্যাক্সিন-পলিনকে নিয়েও চিন্তা। দিনে ৪-৫ বার বেরোতেই হয়। স্নো জ্যাকেট পরে ওদের ঠান্ডা আটকাচ্ছে, কিন্তু বরফে পুরো ডুবে যাচ্ছে। এদিকে যারা বরফ সাফ করে আজ সকালের পর থেকে আর তাদের দেখা নেই। কাল থেকে ভেবে যাচ্ছি, স্বাগতাকে আনতে এয়ারপোর্টে যাওয়ার সময় এই দু’টোকে বাড়িতে রেখে যাব, না সঙ্গে করে নিয়ে যাব। রাস্তায় কোনও কারণে আটকে গেলে কতক্ষণ লাগবে ফিরতে কে জানে!

ম্যাক্সিন-পলিনকে নিয়ে বাইরে যেতেই হচ্ছে দিনে কয়েক বার।

বাড়িতে বসে আছি, কোনও কাজ নেই। বাড়ি থেকে কেউই বিশেষ বেরোচ্ছে না। গতকাল এতটা খারাপ ছিল না পরিস্থিতি। ভেবেছিলাম জমে যাওয়া নায়াগ্রা জলপ্রপাতের ছবি তুলতে যাবো এই বাজারে। কিন্তু সেখানেও এখন ফ্লাড অ্যালার্ট। অগত্যা বন্দি বাড়িতেই।

আবহাওয়া খারাপ হলে এখানে রোজ সকালে ই-মেল এবং ফোনে মেসেজ চলে আছে। বলে দেওয়া হয়, অফিস বন্ধ। সম্ভব হলে বাড়ি থেকে কাজ কর।

বড় বড় দোকানপাট, যেমন ওয়ালমার্ট বা অন্যান্য গ্যাস স্টেশন খোলা থাকে শুধু এই সময়। আমি আমেরিকার বিভিন্ন শহরে থেকেছি। আমার বাফেলো খুব একটা ভাল লাগে না। কিন্তু এখানকার বিপর্যয় মোকাবিলা সত্যিই অসামান্য। দিনরাত বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীরা কাজ করে চলেছেন। তাঁদের দেখলে সত্যিই শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসে। রাস্তায় বরফ পড়ছে, আর তাঁরা নিরলস সেই বরফ সরিয়ে চলেছেন। মেন রোড, স্টেট হাইওয়ে, ন্যাশনাল হাইওয়ে, সর্বত্রই ওঁরা কাজ করে চলেছেন।

সকালের দিকে তাও কিছুটা দৃশ্যমানতা ছিল।

অফিসের সহকর্মীদের কাছে শুনলাম, কেউ কেউ বরফের জন্য বাড়ি থেকে বেরোতে পারছেন না, কারণ মূল দরজাই কয়েক ফুট বরফের নীচে চলে গিয়েছে।

আজ সারাদিন, মানে ভোর থেকে রাত পর্যন্ত প্রায় দেড় ফুট বরফ তো পড়েইছে। তাও আমাদের এই এলাকাটায় কম বরফ পড়ে বাফেলোর অন্যান্য জায়গার তুলনায়। তার সাথে জুটেছে ঝোড়ো হাওয়া। সেটাই দৃশ্যমানতা খুব কমিয়ে দিয়েছে ও তাতে করে গাড়ি চালানো খুব ঝুঁকিবহুল হয়ে গেছে। সন্ধ্যায় দেখছিলাম দুর্দান্ত সব এসইউভি গাড়িগুলোও এমার্জেন্সি আলো জ্বালিয়ে বড় জোর ১০ থেকে ১৫ মাইল বেগে চলছে।

সিগারেট শেষ হয়ে গিয়েছিল গতকালই। অগত্যা ওই ঠাণ্ডার মধ্যে রাতেই বেরিয়েছিলাম সব থেকে কাছের গ্যাস স্টেশনের দিকে। যাওয়া-আসা নিয়ে প্রায় দেড় মাইল। পথের অনেকটা ফুটপাথই ছিল বরফে ঢাকা। তাই মেন রোড দিয়েই হাঁটা দিলাম। কিন্তু মাঝে মধ্যেই চুপচাপ রাস্তায় দাঁড়িয়ে যেতে হচ্ছিল। কারণ ফুটখানেক দূরেও কিছু দেখতে পাচ্ছিলাম না।তার ওপর প্রশ্বাসের বাষ্প চশমার কাঁচে ঘণীভূত হয়ে পুরো একসা অবস্থা। এ ভাবেই কোনও রকমে পৌঁছলাম ও সিগারেট কিনে ফিরলাম।

পুরু বরফের আস্তরণে তখন ঢাকা পড়েছে রাস্তা।

গাড়ি বের করিনি, কারণ দেখলাম তা প্রায় দেড় ফুট বরফে মোড়া এবং স্টার্ট নাও হতে পারে। মাঝ রাস্তায় যদি ব্যাগড়া দেয়...তাই চাপই নিইনি। তাছাড়া ছবি তোলাটাও একটা বড় উদ্দেশ্য ছিল।এই ছবিগুলো তোলা তখনই। রং এখানে শুধুই সাদা-কালো।

লেখাটা লিখতেই লিখতেই খবর পেলাম স্বাগতা ডেট্রয়েট পৌঁছে গিয়েছে। যথারীতি ওখান থেকে বাফেলোর ফ্লাইট বাতিল। দেখা যাক পরেরটা কখন দেয়।এখন মনে হচ্ছে অতটা চিন্তারও কিছু না। কয়েক ঘন্টা বা বড়জোর আজ রাতটা বিমানবন্দরে কাটাতে হবে। একা তো নয়, আরো কতো শয়ে শয়ে সহযাত্রী, কর্মীরা আছে। তাছাড়া একটা অভিজ্ঞতাও তো হবে!

প্রায় ছয় বছর হল এখানে আছি। দেশে ফেরার সময় প্রায় হয়ে এল। তবে আমেরিকা ও তথা বাফেলো এ দেশ ছাড়ার আগে সত্যিই খেল দেখিয়ে দিল। স্মরণীয়!

(আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, আন্তর্জাতিক চুক্তি, আন্তর্জাতিক বিরোধ, আন্তর্জাতিক সংঘর্ষ- সব গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের আন্তর্জাতিক বিভাগে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

United States Polar Vortex
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE