রেস্তরাঁয় খেতে গিয়ে কী জল খাবেন, তার মূলত দু’টি ‘অপশন’ বা বিকল্প থাকে। এক, সাধারণ জল বা পরিস্রুত কলের জল। দুই, বোতলবন্দি মিনারেল ওয়াটার।
এর বাইরে কোনও কোনও রেস্তরাঁয় একটি তৃতীয় বিকল্পও থাকে। তা হল স্পার্কলিং ওয়াটার। যে জলের মধ্যে থাকে সোডার মতো বুদবুদ। অথচ তা সোডা নয়। সোডা জাতীয় পানীয়ে যে চিনি বা ক্যাফিন থাকে, তা এতে থাকে না। প্লেন সোডার মতো ধাতব স্বাদও মুখে লাগে না।
সাধারণ জল, মিনারেল ওয়াটারের পাশাপাশি এই তৃতীয় জলের বিকল্পটির কথা মোটামুটি রেস্তরাঁর বেয়ারার মুখেই জেনে নেওয়া যায়। তার জন্য মেনুকার্ডের দেখার দরকার পড়ে না। তবে সম্প্রতি এক রেস্তরাঁ খাবার এবং পানীয়ের মতো জলের জন্যও আলাদা করে মেনুকার্ড বানিয়েছে।
মেনুতে থাকছে রকমারি জলের সম্ভার। যার দাম শুরু হচ্ছে ৫৮৫ টাকা থেকে, রয়েছে প্রায় আড়াই হাজার টাকা দামের জলও। কিন্তু জল তো জলই! দু’কণা হাইড্রোজেন আর এক কণা অক্সিজেনের মিলমিশ। তার এত দাম হবে কেন? প্রশ্ন উঠতেই পারে। উত্তরও মজুত আছে রেস্তরাঁটির কাছে।
ছবি: এআই।
ব্রিটেনের যে রেস্তরাঁ ওই জলের মেনুকার্ড বানিয়েছে, তার ঠিকানা চেশায়ারে। খাঁটি ফরাসি ধাঁচের খানাপিনা পরিবেশন করা হয় সেখানে। রেস্তরাঁটির নাম লা পোপোতে। বিশ্ব জুড়ে রেস্তরাঁর মান নির্ণয়ের ক্ষেত্রে যে মিশেলিন তালিকাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়, এ রেস্তরাঁর নাম সেই তালিকাতেও রয়েছে। এ ধরনের রেস্তরাঁ কোনও পদক্ষেপ করলে তার আলাদা তাৎপর্য আছে বলেই মনে করা হয়। লা পোপোতের জলের মেনুকার্ড নিয়েও তাই পানীয় এবং খাদ্যরসিক মহলে শুরু হয়ে গিয়েছে আলোচনা।
আলোচ্য জলের মেনুকার্ডে মোট সাত রকমের জল থাকছে। ওই সাত রকমের জলের পার্থক্য কী? জানতে চাওয়া হলে রেস্তরাঁ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তফাত নির্ভর করবে ওই জলের সঙ্গে কী খাওয়া হচ্ছে তার উপরেও।
লা পোপোতে-র জলের মেনুকার্ড যার মস্তিষ্কপ্রসূত, তাঁর নাম ডোরান বাইন্ডার। জল নিয়ে ডোরান নানা ধরনের গবেষণা এবং চর্চা করে থাকেন। তিনি বলছেন, ‘‘খাবারের সঙ্গে ওয়াইন খেলে যেমন তার স্বাদ খাবার ভেদে বদলে যায়, ঠিক তেমনই কী খাচ্ছেন তার উপরে নির্ভর করে জলের স্বাদও।’’ ফরাসি কেতার ওই রেস্তরাঁয় খাবারের সঙ্গে ১৪০ রকমের ওয়াইনের মেনু রয়েছে। ডোরান জানাচ্ছেন, যাঁরা মদ্যপান করেন না, তাঁদের কথা ভেবে ওই জলের মেনু সাজিয়েছেন তিনি।
ছবি: এআই।
সাত রকমের জলের মধ্যে রয়েছে ব্রিটেন, ফ্রান্স, স্পেন, পর্তুগাল থেকে আনানো জল। তাদের মধ্যে পার্থক্য বোঝাতে গিয়ে ডোরান বলেছেন, ‘‘প্রতিটি দেশের জলে খনিজের মাত্রা থাকে আলাদা ধরনের। আর জলে কোন খনিজ কতটা পরিমাণে রয়েছে, তার উপর নির্ভর করে জলের স্বাদ। এমনকি, বিভিন্ন খাবারের সঙ্গে যখন তা খাওয়া হবে, তখন তার স্বাদ আরও বদলাবে। তা মাথায় রেখেই এই মেনু সাজানো।’’
তবে জল কী ভাবে পরিবেশন করা হচ্ছে, তার উপরেও তার স্বাদ নির্ভর করে। অন্তত তেমনটাই মনে করেন লা পোপোতে কর্তৃপক্ষ। তাঁরা বলছেন, ‘‘জলের স্বাদ সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় ঘরের সাধারণ তাপমাত্রায়। তাই ওই রেস্তরাঁয় যে জল দেওয়া হয় তা সব সময় ঘরের তাপমাত্রায় রাখা থাকে। আর তা পরিবেশন করার সময় ডুবিয়ে দেওয়া হয় চাকা করে কাটা লেবুর টুকরো।’’ আড়াই হাজারি জলের স্বাদ তাতেও বদলায় নিশ্চয়ই!