Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বায়ুদূষণের গ্রাসে হারিয়ে যাচ্ছে শিশুর আড়াই বছর

পরিবেশবিদেরা বারবারই বলেন, বায়ুদূষণ এ দেশের সামনে বড় সমস্যা।

ভারতীয় শিশুর জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে আড়াই বছর! সৌজন্য বায়ুদূষণ!

ভারতীয় শিশুর জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে আড়াই বছর! সৌজন্য বায়ুদূষণ!

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৯ ০২:০৮
Share: Save:

জন্মানোর সঙ্গে সঙ্গেই প্রত্যেকটি ভারতীয় শিশুর জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে আড়াই বছর! সৌজন্য বায়ুদূষণ!

বুধবার মার্কিন জনস্বাস্থ্য গবেষণা সংস্থা ‘হেল্থ এফেক্ট ইনস্টিটিউট’-সহ একাধিক প্রতিষ্ঠানের যৌথ রিপোর্ট ‘দ্য স্টেট অবল গ্লোবাল এয়ার, ২০১৯’ প্রকাশিত হয়েছে। সেই রিপোর্টেই উঠে এসেছে, ভারত-সহ দক্ষিণ এশিয়ার নবজাতকদের উপরে বায়ুদূষণের এই প্রভাবের কথা। তার পাশাপাশি রিপোর্টে এ-ও উঠে এসেছে, এ দেশে ২০১৭ সালে বায়ুদূষণের প্রভাবে প্রায় ১২ লক্ষ লোকের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর কারণ হিসেবে বায়ুদূষণ তিন নম্বরে ঠাঁই পেয়েছে। ধূমপানের জেরে মৃত্যুর সংখ্যা বায়ুদূষণের থেকে কম।

জীবন থেকে আড়াই বছর হারিয়ে যাওয়ার অর্থ কী? ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই বয়স হারিয়ে যাওয়া মানে গড় আয়ু কমে যাওয়া। অর্থাৎ যে শিশু বড় হয়ে ৭০ বছর বয়সে মারা যেত, তার আয়ু সাড়ে ৬৭ বছরেই ফুরিয়ে যাবে। এ দেশের নীতি আয়োগের তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে সমীক্ষা অনুযায়ী এক জন ভারতীয় নবজাতকের গড় জীবদ্দশার বয়স প্রায় ৬৮ বছর। বুধবার প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী তা কমে দাঁড়াচ্ছে প্রায় সাড়ে ৬৫ বছর। পশ্চিমবঙ্গে গড় জীবদ্দশা প্রায় ৭০ বছর। অর্থাৎ তা কমে হচ্ছে সাড়ে ৬৭ বছর! এর পাশাপাশি বলা হয়েছে, বায়ুদূষণ থেকে শুধু ক্রনিক অবস্ট্রাকসিভ পালমোনারি ডিজ়িজ (সিওপিডি)-এর মতো শ্বাসনালি বা ফুসফুসের রোগ এবং ক্যানসারই নয়, হার্ট, মস্তিষ্কের রোগ এবং ডায়াবিটিসও হচ্ছে।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

পরিবেশবিদেরা বারবারই বলেন, বায়ুদূষণ এ দেশের সামনে বড় সমস্যা। দিল্লি, কলকাতার মতো শহর বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় প্রথম দিকে উঠে এসেছে। হাওড়া, আসানসোল, হলদিয়ার মতো শিল্পনগরীগুলিও দূষণে পিছিয়ে নেই। কলকাতার বায়ুদূষণ গত এক মাসে দেশের মহানগরীগুলির মধ্যে সব থেকে বেশি ছিল। ফলে এ শহরের নাগরিকদের উপরে বায়ুদূষণের প্রভাব আরও বেশি। পরিবেশবিজ্ঞানী স্বাতী নন্দী চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘বায়ুদূষণ যে ভাবে প্রভাব ফেলছে তাতে জনস্বাস্থ্য নীতিতে একে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কিন্তু সেই গুরুত্ব বায়ুদূষণ পাচ্ছে না।’’

দূষণের কবলে

রোগ প্রভাব*
• সিওপিডি ৪৯%
• ফুসফুসের ক্যানসার ৩৩%
• ডায়াবিটিস ২২%
• ব্রেন স্ট্রোক ১৫%
*বায়ুদূষণের প্রভাব শতাংশের হিসেবে

পরিবেশকর্মীদের আক্ষেপ, এত বড় সমস্যা এবং জনস্বাস্থ্যে কুপ্রভাবের বিষয় লোকসভা ভোটের প্রচারে ঠাঁই পাচ্ছে না। নানা উন্নয়নের কথা বলা হলেও পরিবেশ নিয়ে কথা কোনও রাজনৈতিক দলের মুখে নেই। তাঁরা বলছেন, আন্তর্জাতিক রাজনীতি, অর্থনীতিতে চিনকে টেক্কা দেওয়ার কথা বলে ভারত। বায়ুদূষণের প্রভাবে সে দেশ বর্তমানে ভারতের সঙ্গে এক সারিতে থাকলেও ওই রিপোর্ট প্রস্তুতকারী দলের হিসেব বলছে, চিন গত কয়েক বছরে দূষণ কিছুটা কমিয়েছে। ‘হেল্থ এফেক্ট ইনস্টিটিউট’-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট রবার্ট ও’কিফি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ভারত স্টেজ-৬ ইঞ্জিন চালু, ন্যাশনাল ক্লিন এয়ার প্রোগ্রাম রূপায়িত হলে ভবিষ্যতে দূষণ কমতে পারে। কিন্তু পরিবেশকর্মীদের বক্তব্য, ডিজেলচালিত গাড়ি, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, জঞ্জাল পোড়ানো, রাস্তার ধুলোর মতো বিষয়গুলিও সমান ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সে দিকে সরকার কতটা নজর দিচ্ছে, সে প্রশ্নও তোলা দরকার। স্বাতীদেবীর মতে, ‘‘আমাদের ২০২০ সালের মধ্যে যতটা কার্বন নির্গমন বন্ধ করার কথা ছিল তা হয়নি। এ বিষয়ে নীতি নতুন ভাবে তৈরি করা প্রয়োজন। প্রতি বছর এই কার্বন নিঃসরণ বাড়ছে না কমছে, তারও কোনও সার্বিক সরকারি সমীক্ষা হয় না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE