Advertisement
E-Paper

জ্বরে-ব্যথায় কোভিডের দোসর চিকুনগুনিয়া

একই চিত্র শহরের আরও কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে। কোভিডের সঙ্গেই সেখানে ডেঙ্গি বা চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পৌঁছচ্ছেন অনেকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২০ ০২:৩১
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

একে প্রবল জ্বর। তার উপরে সারা শরীরে ব্যথা। সরকারি হাসপাতালে যাওয়া রোগীকে দেখে কোভিড পরীক্ষার জন্য লিখে দিয়েছিলেন চিকিৎসক। চিকিৎসা কিছুটা এগোলে দেখা গেল, সেই রোগী শুধু কোভিড পজ়িটিভই নন, তাঁর চিকুনগুনিয়াও হয়েছে! একই চিত্র শহরের আরও কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে। কোভিডের সঙ্গেই সেখানে ডেঙ্গি বা চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পৌঁছচ্ছেন অনেকে।

চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ জানাচ্ছেন, এই মুহূর্তে কোভিড রোগীর সঙ্গে হাসপাতালগুলিতে ভিড় বাড়ছে অন্য ভাইরাল জ্বরে আক্রান্তদের। সব চেয়ে বেশি ভিড় চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর। বহু ক্ষেত্রে কোভিড রোগীর আইজিএম পরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরা পড়লেও পরে পিসিআর পদ্ধতিতে রিপোর্ট নেগেটিভ আসছে। কিন্তু চিকুনগুনিয়ার ক্ষেত্রে আইজিএম এবং পিসিআর— দুই পদ্ধতিতেই রিপোর্ট পজ়িটিভ আসছে আক্রান্তের।

চিকিৎসক অনির্বাণ নিয়োগী জানালেন, গত কয়েক দিনে চিকুনগুনিয়ার এমন বেশ কিছু রোগী দেখেছেন তিনি। অনির্বাণবাবু বলেন, ‘‘বহু রোগী কোভিড আর চিকুনগুনিয়া বা কোভিড আর ডেঙ্গিতে একসঙ্গে আক্রান্ত হয়ে আসছেন। সম্ভবত কোভিডের অ্যান্টিজেনের সঙ্গে ওই দুই রোগের অ্যান্টিজেনের মিল আছে। তবে আইজিএমের পরে পিসিআর পদ্ধতিতে অনেক ক্ষেত্রেই ডেঙ্গি ধরা পড়ছে না। কিন্তু চিকুনগুনিয়ার ক্ষেত্রে দু’টি রিপোর্টই পজ়িটিভ আসছে। তা দেখে মনে হচ্ছে, এই মুহূর্তে চিকুনগুনিয়ার প্রভাব বেশি।’’

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারও জানালেন প্রায় একই কথা। তাঁর কথায়, ‘‘প্রচুর চিকুনগুনিয়ার রোগী আসছেন। কোভিডে সাধারণত ১০০, ১০১ ডিগ্রি জ্বর হয়। চিকুনগুনিয়ায় জ্বর থাকে বেশি। সঙ্গে গাঁটে ব্যথা। কিছু ক্ষেত্রে আবার গায়ে ও মুখে র্যাশও বেরোয়।’’ তবে অরুণাংশুবাবুর মতে, ‘‘চিকুনগুনিয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হল, জ্বর হওয়ার সাত দিন আগে রক্ত পরীক্ষা করলে কিছুই ধরা পড়ে না। প্রাণঘাতী না হলেও এ ক্ষেত্রে ভুগতে হয় অনেক বেশি।’’

পরজীবী নিয়ে যাঁরা গবেষণা করেন, তাঁরা জানাচ্ছেন, চিকুনগুনিয়ায় সব চেয়ে বড় ভূমিকা জমা জলের। কারণ, জল ছাড়া মশা বংশবৃদ্ধি করতে পারে না। ডেঙ্গির মতোই চিকুনগুনিয়ার ক্ষেত্রে বাহক এডিস মশা। তাঁরা বলছেন, ‘‘এই পরিস্থিতিতে মশার বংশবৃদ্ধি নিয়ে সতর্ক হওয়ার পাশাপাশি জোর দিতে হবে রক্ত পরীক্ষায়।’’ গবেষকদের দাবি, চিকুনগুনিয়ার ক্ষেত্রে আগে বেশি জোর দেওয়া হত উপসর্গের উপরে। কিন্তু ওষুধ ব্যবহারের পরে সেই চরিত্র বদলেছে। চিকুনগুনিয়ার ক্ষেত্রে জ্বরের আলাদা চরিত্র ছিল না। শরীরে ব্যথার সঙ্গে জ্বর ছিল অন্যতম উপসর্গ। কিন্তু এখন অল্প জ্বর ও গাঁটে ব্যথা হলেও চিকুনগুনিয়া হতে পারে। ফলে কোনটা ডেঙ্গি আর কোনটা চিকুনগুনিয়া, শনাক্ত করা সম্ভব রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমেই।

পরজীবী বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক অমিতাভ নন্দী বলেন, ‘‘কোভিড পরিস্থিতিতে চিকুনগুনিয়াকে হাল্কা ভাবে নেওয়া চলবে না। জ্বরের পাশাপাশি এ ক্ষেত্রে সারা শরীর নাড়াতে গেলেও ব্যথা হয়। এমন রোগীও দেখা যায়, যাঁর শরীরে হাত ছোঁয়ালেও যন্ত্রণায় কেঁপে ওঠেন। অর্থাৎ আথ্রাইটিসের প্রবণতা থাকে। হাল্কা ভাবে নিলে যা মারাত্মক হতে পারে। শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে বাড়তি নজর প্রয়োজন।’’

কলকাতা পুর প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য তথা পুর স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতীন ঘোষ যদিও বললেন, ‘‘আমাদের কাছে চিকুনগুনিয়ার তেমন বাড়বাড়ন্তের রিপোর্ট আসেনি। তবে প্রতিটি বরোয় মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে কাজ চলছে। গত বছরের তুলনায় এই ধরনের রোগ প্রায় ৬৫ শতাংশ কমানো গিয়েছে। চলতি মাসের রোগীর রিপোর্টের ভিত্তিতে নতুন করে কী করা যায়, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’

Coronavirus COVID-19 Chikungunya
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy