চুলের যত্নে নামী-দামি প্রসাধনী যতই থাকুক না কেন, আমলকির গুণ প্রশ্নাতীত। মা-ঠাকুরমাদের ঘরোয়া এই টোটকা ব্যবহার হয় এখনও। আর হবে নাই বা কেন? ফল হিসেবে আমলকির গুণের অন্ত নেই। ভিটামিন সি, ই, অ্যান্টি-অ্যাক্সিড্যান্ট, অ্যামাইনো অ্যাসিড— শরীর, ত্বক এবং চুল ভাল রাখতে যা যা দরকার তার সবটাই আছে ছোট্ট গোল ফলটিতে।
আর ঠিক সে কারণেই রাসায়নিক বর্জিত কেশচর্চার উপায় খুঁজতে গেলে আমলকির নাম শুরুতেই আসে। কিন্তু প্রশ্ন হল, কী ভাবে আমলকি মাখলে কমবে চুল ঝরা, ঘন হবে কেশ? আমলকি নারকেল তেলের সঙ্গে ফুটিয়ে মাখার চল রয়েছে। অনেকেই আমলকি দিয়ে চুলের মাস্কও ব্যবহার করেন। ইদানীং শরীর ভাল রাখতে আমলকির শট খাওয়ার চলও তৈরি হচ্ছে। এর মধ্যে কোনটি বেছে নেবেন আপনি?
আমলকির তেল
অকালপক্বতা দূর করতে, মাথার ত্বকে আর্দ্রতা জোগাতে, খুশকি সমস্যার সমাধানে আমলকি বিশেষ কার্যকর। আমলকিতে রয়েছে ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস। তা মাথায় রক্ত সঞ্চালনের মাত্রা বৃদ্ধি করে। চুলের যত্নে আমলকির ব্যবহার বহু পুরনো। অনেকেই নারকেল তেলে আমলকি থেঁতো করে দিয়ে ফুটিয়ে, সেই তেল মাখেন। নারকেল তেল ছাড়াও পছন্দের যে কোনও তেলে আমলকির রস মিশিয়ে বা সেটি থেঁতো করে দিয়ে মাখা যায়। তেল মালিশ করতে রক্ত সঞ্চালন ভাল হয়।
উপকারিতা: রুক্ষ চুলের সমস্যা থাকলে তেল মালিশ খুব কার্যকর। ডগা ফাটা কমাতে পারে। অযত্নেও অনেক সময় চুল ঝরে। এ ক্ষেত্রে সপ্তাহে ৩-৪ দিন আমলকির তেল মালিশ করলে সমস্যার সমাধান হতে পারে কয়েক মাসেই।
আরও পড়ুন:
অসুবিধা: তাড়াহুড়ো থাকলে বা মাথার ত্বক অতিরিক্ত তৈলাক্ত হলে তেল মালিশে চুল তেলচিটে হয়ে যায়।
আমলকির মাস্ক
মাস্কের প্রয়োজন হয় মাথার ত্বকের গভীরে গিয়ে চুলে পুষ্টি জোগানোর জন্য। চুল নরম এবং সুন্দর রাখতে কাজে আসে এটি। চুলের পরিচর্যায় বাজারচলতি আমলকির মাস্ক যেমন ব্যবহার করা যায় তেমনই বাড়িতেও তা বানিয়ে নেওয়া চলে। টক দই, শিকাকাই গুঁড়ো, মেথি, ভৃঙ্গরাজ— এমন নানা উপকরণ দিয়ে মাস্ক তৈরি করে নেওয়া যায়।
উপকারিতা: চুলের গোড়া মজবুত করতে, অকালপক্বতা রোধে সাহায্য করে মাস্ক। চুলে আর্দ্রতাও জোগায়। আমলকির সঙ্গে টক দই, ভৃঙ্গরাজ, মেথির গুণও যোগ হয় মাস্কের ব্যবহারে।
অসুবিধা: মাস্ক ব্যবহারের জন্য অন্তত ২০-৩০ মিনিট সময় দরকার। তার প্রস্তুতিরও দরকার হয়। মাস্ক ব্যবহারের পর চুল শ্যাম্পু করে নেওয়া জরুরি। ফলে তাড়াহুড়োয় মাস্ক ব্যবহার অসুবিধাজনক।
আমলকির শট
আমলকির শট হল আমলকির রস। স্বল্প পরিমাণ আমলকির রস জলে মিশিয়ে শটের মতো খেয়ে ফেলতে হয়। ভিটামিন সি, ই এবং অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট শুধু চুলের যত্নই নেয় না, ত্বক এবং শরীর ভাল রাখতেও সহায়ক। পুষ্টিবিদেরাও জানান, স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল, ত্বক পেতে হলে ভিটামিন এবং খনিজে সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া জরুরি। ঠিক সে কারণেই আমলকির রস শুধু শরীর ভাল রাখতে সাহায্য করে না, এতে চুলও ভাল হয়।
উপকারিতা: চুল ঘন এবং মসৃণ হয়। এতে থাকা ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। চুলের প্রয়োজনীয় কোলাজেন প্রোটিন সংশ্লেষে সাহায্য করে ভিটামিন সি, অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট।
অসুবিধা: অম্বলের ধাত থাকলে আমলকির শট সহ্য না-ও হতে পারে।
তা হলে বেছে নেবেন কোনটি?
চুল ঝরা, ডগা ফাটা, খুশকির সমস্যা থাকলে আমলকির তেল মালিশ অত্যন্ত উপকারী হতে পারে। সপ্তাহে ২-৩ দিন মিনিট পাঁচ-দশেক তেল মাখলে মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন ভাল হবে, রুক্ষ ভাব দূর হবে। অন্য দিকে, মাস্ক মাসে দুই থেকে তিন বার ব্যবহার করলেই যথেষ্ট। এটিও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুলের জন্য জরুরি। আমলকির শট সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সাহায্য করে। ফলে, যদি কেউ আমলকির শট খান, আবার আমলকির তেল বা মাস্ক ব্যবহার করেন তা হলে উপকার মিলবে দ্রুত।
প্রতিবেদনটি সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা। আমলকি শট নিয়মিত খাওয়ার আগে পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। অতিরিক্ত তৈলাক্ত মাথার ত্বক হলে আমলকির তেল নিয়মিত বা বেশি না মাখাই ভাল।