ওজন কমাতে পছন্দের খাওয়া ছেড়েছেন? মিষ্টি, আইসক্রিমের প্রতি লোলুপ দৃষ্টি থাকলেও, পাছে লক্ষ্যলাভ অধরা থেকে যায়, তাই সংবরণ করছেন লোভ? কিন্তু এ ভাবেই কি ওজন কমবে?
মেদ ঝরাতে গেলে খেতে হবে পরিমিত, বাদ দিতে হবে উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাবার— এ নিয়ম সকলেই জানেন। কিন্ত নিয়ম আর বাস্তব কি এক হয়? নিয়মের বেড়াজালে থেকেও পছন্দের খাবার খাওয়ার জন্য উচাটন হয় মন। নিজেকে সংযত করতে না পেরে এক বার সেই খাবার মুখে দিয়ে ফেললেই অপরাধবোধ শুরু।
তবে এই বিষয়ে আশার আলো দেখাচ্ছে সাম্প্রতিক গবেষণা। ‘ফিজ়িওলজি অ্যান্ড বিহেভিয়ার’ নামক জার্নালে ২০২৫ সালে প্রকাশিত হয়েছে ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয় আরবানা-শ্যাম্পেনের দুই গবেষকের একটি গবেষণাপত্র। সেই গবেষণালব্ধ ফল বলছে, পছন্দের খাবার যদি উচ্চ ক্যালোরিসম্পন্ন হয়ও, তা বাদ দেওয়ার দরকার নয়। পাতে স্বল্প পরিমাণে লোভনীয় পদটি রাখলে ওজন কমবে তুলনামূলক দ্রুত হারে।
লোভনীয় খাবার এবং ওজন কমার পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে গবেষণাটি করা হয়েছিল। গবেষক নওফ ডব্লিউ আলফুজ়ান এবং মানাবু নাকামুরার পরীক্ষালব্ধ ফল আলোকপাত করেছে আরও একটি দিকে। তাঁরা প্রমাণ পেয়েছেন, ওজন কমলে লোভনীয় খাবারের প্রতি আকর্ষণও কমে।
আরও পড়ুন:
বিষয়টি একটু খোলসা করা যাক। সাধারণ খিদে এবং চোখের খিদের মধ্যে বিস্তর ফারাক থাকে। খিদে এক বিষয়। কিন্তু পেট ভরা থাকলেও পছন্দের খাবার দেখে লোভ হওয়া পৃথক ব্যাপার। সাধারণত দেখা যায়, বেশির ভাগ মানুষেরই উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত অস্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি আকর্ষণ বেশি থাকে। লোভনীয় খাবারের তালিকায় কারও থাকে পেস্ট্রি, কারও আবার মিষ্টি, চকোলেট, কারও আইসক্রিম। এই ধরনের খাবার খেলেই দ্রুত ওজন বাড়বে, সন্দেহ নেই। কিন্তু ইচ্ছা চেপে রেখে দিনের পর দিন স্বাস্থ্যকর খাবারও খাওয়াও কম কঠিন নয়।
গবেষকরা ওজন আর লোভনীয় খাবার— এই দুইয়ের সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা করেন। এ জন্য এক বছর ধরে ৩০ জনের উপর একটি সমীক্ষা করা হয়। এ জন্য এমন লোককে বেছে নেওয়া হয়, যাঁরা ওজন কমানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। তাতেই দেখা যায়, যাঁদের কিছুটা হলেও (৫ শতাংশ) মেদ ঝরেছে তাঁদের লোভনীয় খাবারের প্রতি আকর্ষণও কমেছে। অন্য দিকে, যাঁদের ওজন কমেনি তাঁদের পছন্দের খাবার খাওয়ার প্রবণতাও কমেনি। এই পরীক্ষা চালানোর সময় আরও একটি কাজ করা হয়। পছন্দের বা লোভনীয় খাবার পুরোপুরি বাদ না দিয়ে পাতে সামান্য পরিমাণে তা দেওয়া হয়। এতেই দেখা যায় পছন্দের খাবার খাওয়া সত্ত্বেও ওজন কমেছে।
গবেষকেরা বলছেন, আসলে ওজন কমার অন্তরায় হল মানসিক চাপ। মানসিক চাপই খাবারের প্রতি লোভ তৈরি করে, যা ওজন বৃদ্ধির কারণ হয়ে ওঠে। অথচ মানসিক চাপ যদি কমিয়ে ফেলা যায়, সেটা পছন্দের খাবার সামান্য খেয়ে হলেও, ফল মিলতে পারে দ্রুত।
প্রতিবেদনটি সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা। ওজন কমানোর লক্ষ্য থাকলে পেশাদার কোনও ফিটনেস প্রশিক্ষকের সাহায্য নেওয়া বা চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভাল।