‘ফ্যাশন’-এর ধারণাকে এক সময়ে নারীর সঙ্গে সংযুক্ত করে দেওয়ার প্রবণতা ছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সেই জগতে পুরুষেরাও নিজস্ব গণ্ডি তৈরি করেছেন। এখন পুরুষেরাও ফ্যাশন সচেতন। উৎসব এবং বিশেষ করে শারদীয়ার মরসুমে পুরুষদের কেতাদুরস্ত পোশাক এবং লুক নিয়ে এখন চর্চাও চোখে পড়ে। সম্প্রতি পুরুষদের পাশাপাশি ফ্যাশনের ক্ষেত্রে তাঁর ব্যক্তিগত ভাবনা ফাঁস করলেন অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন:
মহিলাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পুরুষেরাও যে এখন ফ্যাশন সচেতন, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই পরমব্রতের মনে। কিন্তু তিনি নিজে কী ধরনের পোশাক পরতে পছন্দ করেন? পরমব্রত হেসে বললেন, ‘‘আমরা যখন বড় হচ্ছি, তখন ‘পুরুষদের ফ্যাশন’— এই ধারণাটাই সে ভাবে ছিল না। এখন সেটা প্রতিষ্ঠিত সত্য।’’ সময়ের সঙ্গে নারী-পুরুষ সমানাধিকারের অংশ হিসেবেই যে পুরুষদের ফ্যাশন চর্চায় চলে এসেছে, তেমনই মনে করেন পরমব্রত। এক সময়ে হাতেগোনা পোশাকশিল্পী পুরুষদের জন্য আলাদা করে ভাবতেন। পরমব্রতের কথায়, ‘‘এখন খুব ছোট ছোট পরিসরে ভাল কাজ হচ্ছে। সমাজমাধ্যমের দৌলতে সে সব কাজ আরও ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে সচেতনতাও বাড়ছে।’’
ক্যাজ়ুয়াল পোশাক পছন্দ পরমব্রতের। — ফাইল চিত্র।
বলিউড বিভিন্ন সময়ে সমাজের একটা বড় অংশকে ফ্যাশন সচেতন করেছে। কয়েক দশক আগে মুম্বইয়ের নায়কেরা মূলত ব্যাগি জিন্স এবং স্যাটিনের ঢোলা ফুলছাপ শার্ট পরতেন। সেখানে বিশেষ পার্থক্য ছিল না। এখন বলিউডেও তারকাদের কেতাদুরস্ততা একে অপরের থেকে আলাদা বলেই মনে করছেন পরমব্রত। তাঁর যুক্তি, ‘‘প্রত্যেকেই সিগনেচার স্টাইল তৈরি করেছেন। যেমন রণবীর সিংহের থেকে রণবীর কপূরের ফ্যাশন স্টেটমেন্ট আলাদা।’’
পরমব্রত নিজে কোন পোশাকে সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন? হেসে বললেন, ‘‘নিল ডায়মন্ডের ‘ফরএভার ইন ব্লু জিন্স’ গানটাকে ধার করেই বলি, যেটা আরামদায়ক, আমি সেই পোশাকটাই পরি। তবে তার মানে আবার এটাও নয় যে অন্য কিছুই পরব না।’’ পরমব্রত জিন্স পরতে পছন্দ করেন। তবে পোশাকটির নানা ধরন অভিনেতাকে এখন অবাক করে। তাঁর কথায়, ‘‘জিন্সের যে ‘ক্যারট ফিট’ বলে কিছু হয়, ছোটবেলায় তো জানতামই না!’’ আবার বাজারে চলতি ট্রেন্ড নিয়েও যে তিনি খোঁজখোবর রাখেন, তারও আন্দাজ দিলেন পরমব্রত। যেমন জানালেন, এখন ওভার সাইজ়ড শার্ট বেশি করে পরছেন। এ ক্ষেত্রে প্যাস্টেল রং তাঁর বেশি পছন্দের। আবার কার্গো ট্রাউজ়ার্সও তাঁর পছন্দের।
ব্যক্তিগত জীবনে পোশাকের ক্ষেত্রে খুব বেশি সাহসী হতে পছন্দ করেন না পরমব্রত। — ফাইল চিত্র।
চরিত্রের প্রয়োজনে একাধিক বার পোশাক এবং নিজের লুক নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন পরমব্রত। কিন্তু বাস্তবে ততটা সাহসী নন। বরং এখন তাঁর সাজগোজে স্ত্রীর (পিয়া চক্রবর্তীর) পরামর্শও জড়িয়ে থাকে। পরমব্রত হেসে বললেন, ‘‘পিয়া মনে করে, আমি একটু বোরিং পোশাক পরি। কিছু করার নেই। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখছি একটু রংচঙা পোশাক পরার দিকে আমার ঝোঁক বাড়ছে।’’
নিজের কমফোর্ট অনুযায়ী ফ্যাশন তৈরিতে বিশ্বাস করেন পরমব্রত। কিন্তু ফ্যাশনের প্রসঙ্গ উঠলে তাঁর অনুপ্রেরণা কে? প্রশ্ন শেষ হতেই উত্তর এল— শাহরুখ খান। অভিনেতা বললেন, ‘‘আমার মনে হয়, ওঁকে কোনও নির্দিষ্ট বৃত্তে আটকে রাখা সম্ভব নয়। নিজে ক্যাজ়ুয়াল থেকেও যে ধারালো ফ্যাশন তৈরি করা যায়, সেটা ওঁর থেকেই শেখা।’’ একই সঙ্গে পরমব্রত যোগ করলেন, ‘‘দেখে মনে হয়, যেন কোনও এফর্টই নেই, অথচ ওঁর ফ্যাশন চোখ ধাঁধিয়ে দেয়।’’
দুর্গাপুজোর দিনগুলিতে মুম্বই বা দেশের অন্য প্রান্তে শুটিং না থাকলে শহরেই থাকতে পছন্দ করেন পরমব্রত। সারা বছর ক্যাজ়ুয়াল, পাশ্চাত্য এবং সাবেকি পোশাকে দেখা যায় তাঁকে। তবে অভিনেতার পুজোর ফ্যাশনে সাবেকি পোশাকের পাল্লা ভারী। জানালেন, বছরের এই সময়টায় তিনি মূলত সাবেকি পোশাক পরতেই পছন্দ করেন। পরমব্রতের কথায়, ‘‘তার মধ্যে অষ্টমীতে পাজামা-পাঞ্জাবি পরতেই হয়। এই নিয়মে কোনও বদল নেই।’’
কাজের ব্যস্ততা থাকলেও পুজোর কেনাকাটা করতে পছন্দ করেন পরমব্রত। পুজোর আগে কোনও একটি দিন চট করে তিনি পরিবারের জন্য কেনাকাটা করে নেন। আর পুজোর আগে শহরের বাইরে থাকলে? হেসে বললেন, ‘‘এ বারেই তো সেটা হয়েছে। একটা কাজে আমেরিকায় গিয়েছিলাম। ওখান থেকেই পুজোর জন্য কিছু কেনাকাটা সেরে ফেলেছি। বাকিটা এখানে করে নেব।’’