বিয়ের সাজে শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়। ছবি:সংগৃহীত।
বিয়ের বয়স এক যুগ পেরিয়েছে। অথচ এই কয়েক বছরে মিনেকারি নকশা আঁকা বিয়ের বেনারসি আলমারি থেকে বেরিয়েছে কালেভদ্রে। বিয়ের বেনারসি বলে কথা! বেশি পরলে যদি নষ্ট হয়ে যায়, এই আশঙ্কায় অনেকেই তাই তোলা তোলা ব্যবহার করেন। বছরের পর বছর ন্যাপথলিনের গন্ধ মেখে আলমারির অন্ধকারেই পড়ে থাকে এই স্ত্রীধন। ঘন ঘন ব্যবহার করলে যেমন নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে, তেমনই দীর্ঘ দিন এক জায়গায় ফেলে রাখলেও একই ঝুঁকি থাকে। আলমারির অন্য শা়ড়িগুলির চেয়ে বেনারসি স্বাভাবিক ভাবেই একটু বেশি আপন হয়। ফলে শাড়ির সুতো একটু এদিক থেকে ওদিক হলে মন খুঁতখুঁত করতেই থাকে। অন্য শাড়িগুলির চেয়ে বেনারসির যত্ন আলাদা হয়। সঠিক যত্নের অভাবে অনেক সময় ব্যবহার না করেও বেনারসি খারাপ হয়ে যেতে পারে। অনেকেই বুঝতে পারেন না ন্যাপথলিন কিংবা নিমপাতা ছাড়া আর কী ভাবে বেনারসির যত্ন নেওয়া যেতে পারে। দেশের পাঁচ পোশাকশিল্পী জানাচ্ছেন বেনারসির রং এবং সৌন্দর্য সংরক্ষণের উপায়।
অঞ্জু মোদী
পোশাক শিল্পী অঞ্জু মোদী জানাচ্ছেন, অনেক বেনারসির পাড়ে রুপোলি আর সোনালি জরির ভারী কাজ থাকে। এই জরির কাজের জন্যেই শাড়ির ওজন বেশি হয়। বেনারসিতে যদি ঠাসা জরির কাজ থাকে, তা হলে তা ভাঁজ করে না রাখাই ভাল। ভাঁজ করলেই জরিগুলি মাঝখান থেকে আলগা হতে শুরু করে। দীর্ঘ দিন এ অবস্থায় রাখলে জরির সুতো এক সময় শাড়ি থেকে উঠে যেতে শুরু করে। তবে আলমারিতে বেনারসি ভাঁজ করে রাখা ছাড়া উপায় নেই। তবে এমন ভাবে ভাঁজ করুন যাতে জরির উপর চাপ না পড়ে।
রিতু কুমার
যত্নের উপর নির্ভর করছে বেনারসি কত দিন ভাল থাকবে। তেমনটাই মত পোশাকশিল্পী রিতু কুমারের। রিতু জানাচ্ছেন, বেনারসি সব সময় আলমারিতে অন্য শাড়ির সঙ্গে এক সারিতে ভাঁজ করে না রেখে বরং আলাদা ব্যাগে ভরে তুলে রাখা জরুরি। তবে সেই ব্যাগটি হতে হবে সুতির। বেনারসি কখনও প্লাস্টিকের ব্যাগে রাখবেন না। শাড়িতে যদি খুব ঘন সুতোর কাজ থাকে তাহলে নেট লাইনিং ব্যবহার করতে পারেন। সুতো অটুট থাকবে। এ ছাড়াও শুকনো নিমপাতা ব্যবহার করা যেতে পারে। নিমের গন্ধে পোকামাকড় শাড়ির কাছে ঘেঁষবে না। পোশাকশিল্পীর সাবধানবাণী, বেনারসি শাড়িতে কখনও ন্যাপথলিন কিংবা অন্য কোনও পোকামাকড় নিরোধক রাখবেন না। এগুলি জরির কাজ বিবর্ণ করে তুলতে পারে।
স্বাতী অগরওয়াল
শাড়িতে যদি ফ্যাব্রিকের কাজ থাকে তা হলে বেনারসি ভাল রাখা মুশকিলের বলেই মনে করছেন পোশাকশিল্পী স্বাতী অগরওয়াল। কারণ ফ্যাব্রিক খুব বেশি দিন ভাল থাকে না। যত্ন করলেও না। তাই ফেব্রিকের কাজ করা বেনারসি না কেনার পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি। তবে জরির কাজ করা বেনারসি ভাল রাখতে স্বাতীর টোটকা হল প্রতি মাসে দু’বার করে ফ্যানের হাওয়া কিছু ক্ষণ বেনারসি খুলে রাখুন। এ ছাড়া মাসে এক বার করেও যদি রোদে দেওয়া যায়, তা হলে বেনারসিতে পোকা লাগার ভয় থাকবে না।
পলক শাহ
নিজের সংস্থার বেনারসি শাড়িগুলিতে নিজেই নকশা করেন পলক। তিনি অবশ্য বেনারসি সংরক্ষণের পক্ষে নন। তাঁর মতে, বিয়ের বেনারসি খুব কমই পরা হয়। বেশির ভাগ সময় আলমারিতেই থেকে যায়। বেনারসির যত্ন নেওয়াও সহজ নয়। ঠিক করে যত্ন না নিলে অল্প দিনেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এত টাকা খরচ করে কেনা একটি শাড়ি আলমারিতে ফেলে রেখে নষ্ট করার কোনও মানে হয় না। তার চেয়ে বরং সময় থাকতে বেনারসি দিয়েই বানিয়ে নিতে পারেন লেহঙ্গা কিংবা আনারকলি।
কে রাধারমণ
দীপিকা পাড়ুকোনসহ বিয়ের শাড়ি এসেছিল ‘হাউস অফ অঙ্গাদি’ থেকে। তার কর্ণধার পোশাকশিল্পী কে রাধারমণ জানাচ্ছেন, বেনারসি শাড়ির যত্ন নিজে নেওয়ার চেয়ে বরং পেশাদার কারও সাহায্য নেওয়া জরুরি। বেনারসি পালিশ করার আলাদা দোকান রয়েছে। সেখানে ছয় মাস অন্তর শাড়ি পালিশ করতে দিন। বেনারসি ভাল থাকবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy