সুস্বাস্থ্যের জন্য যেমন ঘিয়ের উপকারিতা আলাদা করে বলে বোঝানোর নয়, তেমনই ত্বকের স্বাস্থ্যরক্ষাতেও উপকারে আসতে পারে ঘি। রান্না হোক বা রূপচর্চা— ঘিয়ের ব্যবহার সেই প্রাচীনকাল থেকেই হয়ে আসছে। ভাল মানের অর্গ্যানিক ঘি নানা রকম পুষ্টিগুণে ঠাসা। তার মধ্যেকার সমস্ত জরুরি ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বকের ঔজ্জ্বল্য ও আর্দ্রতা ধরে রাখার কাজ করে। জানলে অবাক হবেন, গরমের দিনে ত্বকে যে র্যাশ, চুলকানি বা এগজ়িমার সমস্যা হয় অনেকের, তা সমাধান করতে পারে ঘি। ছোটদের ত্বকের জন্যও উপকারী ঘি। এর ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন ও অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট ত্বকের যে কোনও সমস্যা দূর করতে পারে।
গরমের সময়ে এগজ়িমার সমস্যা দেখা দেয় অনেকের। বিশেষ করে ছোটদের এই চর্মরোগ বেশি ভোগায়। প্রধানত এটি একটি পেডিয়াট্রিক ডিজ়িজ়, বড়দের ক্ষেত্রে একে বলে ' অ্যাডাল্ট অনসেট এগজ়িমা'। যে উপসর্গগুলি দেখা দেয়, সেগুলি হল, মাথার ত্বকে বা গালে র্যাশ। তা থেকে ছোট ছোট জলফোস্কা পড়ে হাঁটু, কনুই , ঘাড়, গলায়। প্রচণ্ড চুলকানি থেকে চামড়া খসখসে এবং পুরু হয়ে যায়। সারা শরীরের যে কোনও এক বা একাধিক জায়গায় প্যাচ তৈরি হতে পারে।
এগজ়িমার মতো চর্মরোগ বা ত্বকের র্যাশ-চুলকালি সারাতে নাা রকম ওষুধ আছে। তবে ঘরোয়া টোটকার মধ্যে ঘি সবচেয়ে ভাল উপায়। ভিটামিন এ, ডি এবং ই সমৃদ্ধ ঘি ত্বকের যে কোনও সংক্রমণ ঠেকাতে পারে। ত্বকের প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজ়ার হিসেবে কাজ করে ঘি, ত্বককে নরম ও মসৃণ রাখে। প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
ঘি কী ভাবে ব্যবহার করলে চর্মরোগ দূর হবে?
ঘি-দুধের প্যাক
কাঁচা দুধ নিন দেড় কাপ। তাতে বেসন এবং এক চামচ ঘি দিয়ে পেস্ট বানিয়ে সারা শরীরে লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে গেলে একটি গরম জলে ভেজানো তোয়ালে দিয়ে ঘষে ঘষে তুলে নিন। দেখবেন ত্বক অনেক পরিষ্কার হয়ে যাবে। জ্বালা, চুলকানি কমে যাবে।
ঘি-হলুদ
দু'চা-চামচ ঘিয়ের সঙ্গে এক চামচ কাঁচা হলুদবাটা মিশিয়ে নিতে হবে। এই মিশ্রণ ত্বকের র্যাশের জায়গায় লাগিয়ে রাখুন ১৫-২০ মিনিট। তার পর পরিষ্কার জল দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। সপ্তাহে তিন দিন ব্যবহার করলেও উপকার পাবেন।
আরও পড়ুন:
ঘি-গোলাপজল
আধ কাপ চালের গুঁড়ো, তিন চামচ জল ঝরানো টক দই, কমলালেবুর খোসা বাটা, গোলাপের পাপড়ির গুঁড়ো, সামান্য জাফরান এবং দু’চামচ ঘি দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ ত্বকের শুষ্ক ও খসখসে জায়গাগুলিতে লাগিয়ে রাখুন ২০ মিনিট। এই প্যাক ত্বকের কালো দাগছোপ তো তুলবেই, শুষ্ক ত্বককে নরম করবে।
ঘিয়ের সঙ্গে মুসুর ডাল বাটা
ত্বকে চুলকানি বা জ্বালা ভাব থাকলে এই প্যাক কাজে আসতে পারে। এক কাপ মুসুর ডাল বাটা, দু’চামচ চন্দনের গুঁড়ো, এক চা চামচ কাঁচা হলুদ বাটা এবং তিন চামচ ঘি দিন। এই মিশ্রণ ত্বকে লাগিয়ে রাখুন ১৫-২০ মিনিট। তার পর ভাল করে ধুয়ে স্নান করে নিন।
সাবানের বদলে ঘি
র্যাশ বা ত্বকের সমস্যা হলে সাবান ব্যবহার করতে বারণই করেন ত্বক চিকিৎসকেরা। বেশি ক্ষারযুক্ত সাবান সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই সেই জায়গায় ব্যবহার করতে পারেন ঘি। চার চামচ ঘি একটু গরম করে গলিয়ে নিন। খানিকটা ঠান্ডা হলে তা সারা গায়ে মেখে মিনিট পনেরো রেখে স্নান করে নিন। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক নরম ও মসৃণ থাকবে।