ঈষদুষ্ণ তেল মাথায় আলতো করে মালিশ করে দিলে যে কী আরাম হয়, তা বলে বোঝানো যায় না। উদ্বেগ, ক্লান্তি সব যেন দূরে চলে যায়। তবে তেল মাসাজের উপকারিতা কিন্তু এইটুকুই নয়। মা-ঠাকুরমারা বিশ্বাস করেন, ছোট থেকে চুলে ভাল করে তেল দিয়ে মালিশ করলে চুল ঘন আর মজবুত হবে।
সেই ভাবনা যে পুরোপুরি ভুল, তা নয়। কারণ, মাথার ত্বকে তেল মালিশ করলে রক্ত সঞ্চালন ভাল হয়। তেলের পরত চুলের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে, চুল মসৃণ রাখে। কিন্তু বছরভর কি একই তেল মাখা চলে?
আরও পড়ুন:
বর্ষার মরসুমে চুল হোক বা ত্বক— দরকার হয় বাড়তি যত্নের, মত রূপটান বা কেশচর্চা শিল্পীদের। ত্বকের রোগের চিকিৎসকদের বক্তব্য, বর্ষায় মাথার ত্বকে ঘাম এবং সেবাম (সিবেসিয়াস গ্রন্থি নিঃসৃত তেল) জমতে থাকে। গরম এবং স্যাঁতসেঁতে পরিবেশের ফলে এই সময় এমনিতেই জীবাণু সংক্রমণ বাড়ে। মাথার ত্বকেও তেমনটাই হয়। ঘামে ভেজা চুলে ছত্রাক, ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। মাথা চুলকায়। চুল ঝরে।
মুম্বইয়ের ত্বকের রোগের চিকিৎসক কল্যাণী দেশমুখ এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, এমন মরসুমে চুলের সমস্যা এড়াতে মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখা প্রথম শর্ত এবং একই সঙ্গে প্রয়োজন প্রোটিন, প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া। তালিকায় থাকা দরকার ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড যুক্ত খাবারও। বায়োটিন এবং ভিটামিন ই চুলের অন্যতম জরুরি উপাদান কেরাটিনের উৎপাদন ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
এমন মরসুম একটু বেশি চটচটে এবং ভারী তেল চুলের সমস্যা তৈরি করতে পারে, বলে জানাচ্ছেন ত্বকের রোগের চিকিৎসকেরা। তেলের অত্যধিক ব্যবহারে বা ভারী তেল মাখলে মাথার ত্বকের ছিদ্রমুখ বন্ধ হয়ে যাবে। তা ছাড়া, চুল তেলচিটে হয়ে পড়বে। যার ফলে মাথার ত্বকে ক্ষতিকর অণুজীব বাড়তে পারে। এমনকি, ব্রণও হতে পারে।
মুম্বইয়ের ত্বকের রোগের আর এক চিকিৎসক প্রাচী বোধকে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ক্যাস্টর অয়েল, নারকেল তেলের ব্যবহার এমন মরসুমে না করাই ভাল। সুগন্ধী তেল সব সময়েই বাদ দেওয়া দরকার। বর্ষায় মাখার জন্য হালকা নারকেল তেল, হোহোবা অয়েল, আর্গন অয়েল ভাল।
বর্ষায় তেল মালিশ করলেও তা ৩০ মিনিট চুলে রাখাই যথেষ্ট। বড় জোর এক ঘণ্টা রাখা যেতে পারে। তার পর মৃদু শ্যাম্পু ব্যবহার করে চুল ধুয়ে নিতে হবে। একই সঙ্গে ভিজে চুল শক্ত করে রাবার ব্যান্ড দিয়ে বাঁধার প্রবণতা ক্ষতিকর হতে পারে।