চুলের যত্নে নামীদামি মোড়কে যত নতুন রকম তেল আসুক না কেন, বা তা নিয়ে বিজ্ঞাপনী প্রচার চমক থাকলেও, অনেকেই কিন্তু ঘরোয়া রূপচর্চার বাইরে বেরোতে চান না। একসময় হয়তো ঠাকুরদা, বাবা, কাকাকে দেখে থাকবেন, রান্নাঘর থেকে কিছুটা সর্ষের তেল নিয়ে গায়ে-মাথায় ঘষে স্নানে যেতে।
এখন আবার কেশচর্চায় ঘিয়ের গুণাগুণ নিয়েও যথেষ্ট আলোচনা। ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন এ, ডি, ই, কে সমৃদ্ধ ঘি হল স্বাস্থ্যকর ফ্যাট। শরীর ভাল রাখতেও অনেক পুষ্টিবিদ যেমন পরিমিত ঘি খাওয়ার পরামর্শ দেন, তেমনই রূপচর্চার জগতেও ঘিয়ের কদর রয়েছে। কিন্তু যদি চুলের যত্নের প্রশ্ন আসে, তা হলে এগিয়ে থাকবে কে?
ঘিয়ের গুণাগুণ: ঘরোয়া টোটকা হিসাবে, কেশচর্চায় ঘিয়ের ব্যবহার নতুন নয়। ঘিয়ে রয়েছে প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন। চুলের স্বাভাবিক আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে ফ্যাটি অ্যাসিডের বর্ম। মাথার ত্বকে সঠিক কৌশলে ঘি মাসাজ করলে রক্ত সঞ্চালন ভাল হয়। রুক্ষ চুলে জেল্লা ফেরাতেও এমন টোটকা কার্যকর। চুলের ডগায় ভাল করে ঘি লাগিয়ে ১৫ মিনিট রাখুন। তার পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে চুলের ডগা ফাটার সমস্যা দূর হবে। ঘি প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজ়ার হিসাবে কাজ করে। এতে থাকা প্রদাহনাশক উপাদান খুশকি দূর করতেও সহায়ক।
আরও পড়ুন:
ব্যবহারের পদ্ধতি: ঘি হালকা গরম করে তেলের মতো মাথার ত্বকে এবং চুলে মাখুন। হালকা হাতে মাসাজ করে নিন। ১৫ মিনিট থেকে আধ ঘণ্টা চুলে বসতে দিয়ে শ্যাম্পু করে ফেলুন।
সর্ষের তেল: শুধু রান্না নয়, বহু বাড়িতে শিশুর মাথায়, শরীরেও সর্ষের তেল মাখানো হয়। অনেকে যেমন চুলে নারকেল তেল মাখেন, তেমন কেউ কেউ সর্ষের তেলও মাখেন। এতে রয়েছে সেলেনিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালশিয়াম, আয়রনের মতো উপাদান। যার ফলে মাথায় তেল মালিশ করলে মাথার ত্বক পুষ্টি পায়, রক্তসঞ্চালন ভাল হয়, চুলের গোড়া মজবুত হয়, চুল দ্রুত বেড়ে ওঠে। সর্ষের তেলে মেলে অ্যালিল ইসথিওসায়ানেট, যা মাথার ত্বকের সংক্রমণ দূর করতে বিশেষ ভাবে সহায়ক। খুশকি হলে বা মাথা চুলকোলে, সর্ষের তেল মাখলেও সমস্যার সমাধান হতে পারে। চুলের উপর তেলের হালকা পরত সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মির হাত থেকে বাঁচতে বর্ম হিসাবে কাজ করে।
ব্যবহারের পদ্ধতি: ঘরের তাপমাত্রায় থাকা সর্ষের তেল হালকা হাতে মাথায় মালিশ করতে পারেন। তেল একটু গরম করে নিলে আরাম হবে বেশি। ঈষদুষ্ণ তেল মাথার ত্বকে মাসাজ করলে রক্ত সঞ্চালন ভাল হয়।
চুলের জন্য বেশি ভাল কোনটি?
ঘি এবং সর্ষের তেল, দুই-ই কেশের পরিচর্যায় ব্যবহার হয়। তবে রুক্ষ, নিষ্প্রাণ চুলে দ্রুত জেল্লা ফেরাতে ঘি ভাল। চুলে প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজ়ারের কাজ করে এটি। অন্য দিকে, চুল পাতলা হয়ে গেলে বা চুলের বাড়বৃদ্ধি কম হলে বেছে নিতে পারেন সর্ষের তেল। আবার দু’টি উপকরণ একসঙ্গে জুড়ে নিতেও পারেন। সমপরিমাণ তেল এবং ঘি মিশিয়ে মাথায় মাখলেও উপকার পাবেন।