নাক টিকালো করতে ‘নোজ় শেপার’ ব্যবহার করছেন অনেকেই। এখনকার ছেলেমেয়েদের মধ্যে এই ‘নোজ় শেপার ক্লিপ’ বা ‘নোজ় রিশেপিং ডিভাইস’ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। একটি ছোট্ট ক্লিপ নাকে লাগিয়ে রাখলেই নাকি টিকালো নাক পাওয়া যাবে, বিজ্ঞাপনের এমনই নানা চমকে ভুলছেন কমবয়সিরা। এতে সার্জারির কোনও ব্যাপার নেই, খরচও বেশি নয়। তা ছাড়া অনলাইনেও দেদার বিকোচ্ছে। কাজেই, কম খরচে নাকের গড়ন আমূল বদলে ফেলতে উঠেপড়ে লেগেছেন অনেকেই। কিন্তু আদৌ কি এই ডিভাইসটি শরীরের জন্য ভাল?
পটলচেরা চোখ, বাঁশির মতো নাক, বিম্বফলের মতো ঠোঁট শুনেই বড় হয়েছে বাঙালি। তবে সেই সব ছিল রূপকথার গল্প, বাস্তবে তেমন নাক-মুখ পাওয়ার প্রতিযোগিতা এক কালে তেমন ভাবে ছিল না। কিন্তু এখন আছে। তারকারা কী ভাবে নিজেদের মুখের গড়ন বদলে ফেলে আরও সুন্দর হয়ে উঠছেন, সে খবর গণমাধ্যমে ফলাও করে বেরোচ্ছে। আর তা দেখেই কৃত্রিম সৌন্দর্য পেতে মরিয়া হয়ে উঠছেন কমবয়সিরা। ‘নোজ় শেপার ক্লিপ’ এমন একটি ডিভাইস, যা নাকে পরে থাকতে হবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আর তাতেই নাকি নাকের গড়ন বদলে গিয়ে টিকালো হয়ে যাবে। এই ডিভাইস নানা রকম আকারে পাওয়া যায়। নাক অনুযায়ী বেছে নিলেই হল। অনলাইনে অর্ডার দিলেই বাড়ি বয়ে এসে পৌঁছেও দিয়ে যাবে। তাই এই ডিভাইসটি নিয়ে এখন বেশ চর্চা চলছে।
ম্যানহাটনের ফেশিয়াল প্লাস্টিক সার্জারির চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, নোজ় ক্লিপ দীর্ঘ সময় নাকে লাগিয়ে রাখলে সাময়িক ভাবে বোঁচা নাক লম্বা দেখা দেখাতে পারে। তবে দিনের পর দিন এটি ব্যবহার করতে থাকলে নাকের গড়ন বদলাতে শুরু করবে। চাপ পড়বে নরম তরুণাস্থিতে। তা ছাড়া নাকের রক্ত সঞ্চালন বাধা পাবে, ফলে রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করবে।
আরও পড়ুন:
নোজ় শেপার ক্লিপের আরও অনেক ক্ষতিকর দিক রয়েছে, যেমন— নাসাপথ দিয়ে বাতাস ঢোকা ও বেরোনোয় সমস্যা হবে। এতে শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। বেশ কয়েকটি অস্থি এবং তরুণাস্থি নাকের কাঠামো তৈরি করে। ত্বক, এপিথেলিয়া, মিউকাস মেমব্রেন, পেশি, স্নায়ু এবং রক্তনালি নাকের গঠনে অংশ নেয়। বেশ কিছু পেশি রয়েছে, যা নাকের নড়চড়া নিয়ন্ত্রণ করে। যদি দীর্ঘ সময় ধরে সেই পেশির উপর চাপ পড়ে, তা হলে নাকের যন্ত্রণা বাড়বে। সেই সঙ্গে নাকের ভিতরে সংক্রমণ ঘটতে পারে, নাকের ভিতরে রক্তজালিকাগুলি ছিঁড়ে গিয়ে রক্ত বার হতে পারে।
নাকের গড়ন যদি সত্যিই বদলাতে হয়, তার জন্য যে পদ্ধতিটি আছে তার নাম রাইনোপ্লাস্টি। এটি মূলত দুই প্রকার, সার্জিক্যাল ও নন-সার্জি্ক্যাল। সবচেয়ে বেশি যে পদ্ধতির প্রচলন তা হল— বোঁচা নাক (ডিপ্রেসড নোজ়)-কে কার্টিলেজ ও সিলিকন ইমপ্লান্টের মাধ্যমে টিকালো বানানো। তা ছাড়া নন-সার্জিক্যাল পদ্ধতিও আছে, যেখানে চটজলদি ফিলার দিয়ে নাকের গঠন বদলানোর চেষ্টা হয়। এই কাজগুলি চিকিৎসকেরা করেন এবং এগুলি যথেষ্টই ব্যয়সাপেক্ষ। তাই নিজে থেকে কোনও রকম ডিভাইস ব্যবহার করতে গেলে তাতে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হবে বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা।