বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ত্বকেও তার প্রভাব পড়ে। বলিরেখা, ত্বক কুঁচকে যাওয়া, রুক্ষ ভাব দেখেই ত্বকের যত্নে মনে দেন? কিন্তু চুল?
চিকিৎসক এবং কেশসজ্জা শিল্পীরা বলছেন, চল্লিশ পেরোনোর পর থেকে বিশেষত মহিলাদের চুলের যত্নের দরকার হয়। আসলে এই সময়টার পর থেকেই শুরু হয় পেরিমেনোপজ়। নির্দিষ্ট একটা বয়সে যেমন ঋতুচক্র শুরু হয়, তেমনই নির্দিষ্ট সময়ে রজোনিবৃত্তিও আসে। এই রজোনিবৃত্তি বা ‘মেনোপজ়’-এরও কিন্তু তিনটি পর্যায় রয়েছে। পেরিমেনোপোজ় বা ঋতুচক্রের এই শেষ পর্বে মহিলাদের নানা রকম শারীরিক এবং মানসিক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। বদল ঘটে হরমোনের ভারসাম্যের। তার প্রভাব পড়ে ত্বক এবং চুলেও।তার ফলে চুলের ধরন পাল্টাতে শুরু করে। কারও প্রচণ্ড চুল ঝরে, কারও আবার চুল ফাঁকা হতে থাকে।
আরও পড়ুন:
ঋতুবন্ধের আগের সময়টাতে অনেকেরই ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা কমে যায়। অথচ এই হরমোনই কিন্তু চুলের বৃদ্ধির অন্যতম শর্ত। ইস্ট্রোজেন এবং টেস্টোস্টেরনের ভারসাম্যের অভাবেই কারও কারও প্রচুর চুল ঝরতে থাকে, চুল পাতলা হয়ে যায়। সমস্যা হয় আরও। এই সময় চুল বেশি করে রুক্ষ হয়ে পড়ে। তার ফলে ডগা ফাটার সমস্যাও দেখা দেয়। স্বাভাবিক ভাবেই এই সময় চুলের বাড়তি যত্নের প্রয়োজন হয়।
কী ভাবে চল্লিশে চুলের যত্ন নেওয়া দরকার?
কেশচর্চা শিল্পী থেকে ত্বকের চিকিৎসকেরা বলছেন, মাথার ত্বকের স্বাস্থ্যে নজর দেওয়া বিশেষ ভাবে জরুরি। অনেকেই চুল নিয়ে ভাবলেও মাথার ত্বকের দিকে নজর দেন না।
১। সঠিক কৌশলে তেল মালিশ করলে মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন ভাল হয়। চুলের ফলিক্ল মজবুত হয়। চুলের গোড়া শক্ত হলে তবেই চুল ঝরা আটকানো সম্ভব। এ জন্য দরকার, ক্লিনজ়িং, এক্সফোলিয়েশন এবং সঠিক পরিচর্যা, যাতে চুলের আর্দ্রতা বজায় থাকে।
২। মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখতে সালফেট মুক্ত মৃদু শ্যাম্পু ব্যবহার করা দরকার। তবে চুলের সমস্যা অনুযায়ী তা বেছে নিতে হবে। চুল রুক্ষ হয়ে গেলে, ডগা ফাটা শুরু হলে চুলকে বিশেষ ভাবে আর্দ্রতা জোগাবে, এমন শ্যাম্পু দরকার। পাশাপাশি, কন্ডিশনারের পরত চুলের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করবে। তবে মাথায় খুশকি থাকলে মাসে এক বা দু'দিন অ্যান্টি-ড্যানড্রফ শ্যাম্পু মাখা দরকার। বাজারচলতি প্রসাধনীর বদলে, চিকিৎসকের নির্দেশিত শ্যাম্পু মাখলেই ফল মিলবে বেশি।
৩। চুল রুক্ষ এবং পাতলা হয়ে গেলে কেরাটিন শ্যাম্পু কাজে আসবে। এ ছাড়া গ্লিসারিনযুক্ত কন্ডিশনার চুল মসৃণ রাখবে। পাতলা চুল ঘন করতে দরকার অ্যামাইনো অ্যাসিডের মতো প্রোটিন।
৪। বৈদ্যুতিক যন্ত্র দিয়ে কেশসজ্জায় যতটা পারা যায় দাঁড়ি টানতে হবে। এতেও চুলের যথেষ্ট ক্ষতি হয়।
৫। জ়িঙ্ক, আয়রন, ভিটামিন ডি, বায়োটিনের ঘাটতি হলেও চুলের স্বাস্থ্যে প্রভাব পড়বে। সেই কারণেই চিকিৎসকেরা বলেন, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল, সব্জি পাতে রাখতে। দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় টাটকা মাছ, মাংস, ডিম, শাক থাকলে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে শরীর। অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট এবং ভিটামিন, খনিজ সমৃদ্ধ খাবার তালিকায় খাকা দরকার।