উনবিংশ শতকের দ্বিতীয় ভাগে বাংলা রঙ্গমঞ্চে একযোগে উচ্চারিত হত চারটি নাম— নটী বিনোদিনী, তিনকড়ি দাসী, প্রভাদেবী এবং তারাসুন্দরী। পরবর্তী সময়ে বিনোদিনীকে নিয়ে চর্চা অব্যাহত থাকলেও বাকিরা প্রচারের আলোর বাইরেই রয়ে যান। বলা হয়, চার জনের মধ্যে তারাসুন্দরী ছিলেন সবচেয়ে দাপুটে অভিনেত্রী। তারাসুন্দরীর জীবনকে এ বার মঞ্চে ফিরিয়ে আনছেন অভিনেত্রী গার্গী রায়চৌধুরী। ‘তারাসুন্দরী’ শীর্ষক সেই একক নাটকে নামভূমিকায় তিনি। শনিবার নাটকের শিরোনাম সম্বলিত পোস্টার প্রকাশ্যে এল।
আরও পড়ুন:
সাত বছর পর মঞ্চে ফিরছেন গার্গী। তাঁর নিজস্ব প্রয়োজনা সংস্থা (থিয়েটার প্লাস)-র অধীনেই তৈরি হচ্ছে ‘তারাসুন্দরী’। উপদেষ্টা হিসেবে পাশে রয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা নাট্যকার ব্রাত্য বসু। গার্গী বলছিলেন, ‘‘শিল্পের বিভিন্ন মাধ্যমে কাজ করে চলেছি। কিন্তু মঞ্চাভিনয় এখনও আমাকে টানে।’’ তারাসুন্দরীর জীবনে জোয়ার-ভাটার নানা অভিঘাত ছিল। মূলত সেই দিকগুলি এবং বিনোদিনীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক এই নাটকের কেন্দ্রে। তারাসুন্দরী কমেডি এবং ট্র্যাজেডিতে সমান দক্ষ ছিলেন। গানও গাইতে পারতেন। গার্গীকেও সেই মতো গানের তালিম নিতে হচ্ছে। সাহায্য করছেন নাটকের সঙ্গীত পরিচালক প্রবুদ্ধ বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলা রঙ্গমঞ্চের তথাকথিত বিস্মৃতদের প্রতি এই নাটক শ্রদ্ধার্ঘ্য বলেই জানালেন গার্গী।
ব্রাত্য বসু এক সময়ে তারাসুন্দরীকে নিয়ে গবেষণা করেছেন। তাঁর লেখা দু'টি বই এই নাটকের চিত্রনাট্য তৈরিতে সাহায্য করেছে। গার্গী এবং তাঁর দলকে তিনি কী কী উপদেশ দিয়েছেন? ব্রাত্য বললেন, ‘‘উনবিংশ শতকের একটি বিশেষ বাচনভঙ্গী নাটকে রাখতে চেয়েছিলাম। গার্গী সেটা রেখেছে।’’ ব্রাত্যের মতে, কলকাতায় এখন থিয়েটার রসজ্ঞ মানুষ কমছে। তবে একই সঙ্গে বললেন, ‘‘অতীতের এ রকম একজন সুপারস্টারকে নিয়ে একক অভিনয়, আমার বিশ্বাস দর্শক দেখবেন।’’
নাটকের নির্দেশক এবং লেখক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় গার্গীর একাগ্রতা এবং পরিশ্রম দেখে আপ্লুত। বললেন, ‘‘তারাসুন্দরী সম্পর্কে বলা হয়, অভিনয়ের ক্ষেত্রে সন্তুষ্ট না হলে তিনি নাকি মঞ্চে উঠতেন না। গার্গীর ক্ষেত্রেও এই একই কথা প্রযোজ্য।’’ নাটকের পোশাক পরিকল্পক অভিষেক রায়, মঞ্চসজ্জায় সৌমিক-পিয়ালি এবং আলো সৌমেন চক্রবর্তীর। আপাতত জোর কদমে নাটকের মহড়া চলছে। আগামী ১ নভেম্বর জিডি বিড়লা সভাঘরে ‘তারাসুন্দরী’র প্রথম অভিনয়।