Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Child Heart Care

খাবারে অনীহা, অল্পে হাঁপিয়ে ওঠে বাচ্চা, জন্মগত হার্টের অসুখ নয় তো?

শিশু যখন মায়ের গর্ভে থাকে তখন তার হার্টের প্রধান ধমনী অ্যাওর্টার সঙ্গে ফুসফুসের প্রধান ধমনীর সংযোগ থাকে।

এই ত্রুটির জন্য বাচ্চার ফুসফুসের চাপ বাড়ে। ফাইল ছবি।

এই ত্রুটির জন্য বাচ্চার ফুসফুসের চাপ বাড়ে। ফাইল ছবি।

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২০ ১১:৩৯
Share: Save:

করোনার ভয়ে অন্য অসুখে অবহেলা নয়। জন্মগতভাবে হৃদযন্ত্র-এর সমস্যা থাকলে তা কোভিড-১৯-এর ভয়ে ফেলে রাখলে বিপদ। করোনা আবহে মাত্র ছ'মাসের শিশুর হার্টের জটিল সমস্যা সারিয়ে জীবনের আলোয় ফেরালেন পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজিস্ট মহুয়া রায়। প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট সহ তিন মাসের বাচ্চাটিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বাইপাসের পাশে একটি বেসরকারি হাসপাতালে। কোনও ঝুঁকি না নিয়ে ওকে ভর্তি করে নেওয়া হয়। পরীক্ষা করে দেখা যায়, ওই একরত্তি শিশু নিউমোনিয়ার শিকার। এর পর নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর দেখা যায়, ওর হৃদপিণ্ডে জন্মগত জটিল সমস্যা আছে। তাই হার্ট ফেলিওর হয়েছে। বাচ্চাটির জন্মগত হার্টের অসুখের সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি, তবে পরিবারের কারও থাকলে ঝুঁকি বাড়ে, এমনই বললেন চিকিৎসক।

হৃদপিণ্ডের দুই মহাধমনীর মাঝখানে এক বাড়তি পাইপের সংযোগের ফলেই বাচ্চাটির এই সমস্যা। ডাক্তারি পরিভাষায় এই জন্মগত ত্রুটির নাম পেটেন্ট ডাক্টাস আর্টেরিওসিস বা পিডিএ। এই প্রসঙ্গে মহুয়া দেবী বললেন যে, শিশু যখন মায়ের গর্ভে থাকে তখন তার হার্টের প্রধান ধমনী অ্যাওর্টার সঙ্গে ফুসফুসের প্রধান ধমনীর সংযোগ থাকে। ভ্রূণ অবস্থায় এর সাহায্যে মায়ের থেকে শিশুর ফুসফুস অক্সিজেন যুক্ত রক্ত পায়। জন্মের দু-তিন দিনের মধ্যেই ফুসফুস ও হৃদপিণ্ডের সংযোগ বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু যদি এই সংযোগ থেকে যায় তখনই সমস্যা শুরু হয়। এই ত্রুটিকে চিকিৎসার পরিভাষায় বলা হয় পিডিএ।

পিডিএ-র মতো জন্মগত ত্রুটি থাকলে বাচ্চার শ্বাসপ্রশ্বাস দ্রুত হারে হয়, অল্পে হাঁপিয়ে ওঠে, খাবার খেতে চায় না, এমনই বললেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ পল্লব চট্টোপাধ্যায়। এ ছাড়া জন্মগত হার্টের অসুখ থাকলে বাচ্চার খিদে থাকে না বা খাবার খেতে গেলে হাঁপিয়ে ওঠে। এই ধরনের সমস্যা থাকলে অবশ্যই শিশুর হার্ট চেক আপ করাতে হবে, পরামর্শ দিলেন পল্লববাবু।

আরও খবর: অল্প বয়সেই চুলে পাক? একটি পাতার ব্যবহারেই কেল্লাফতে​

এই ত্রুটির জন্য বাচ্চার ফুসফুসের চাপ বাড়ে (পালমোনারি হাইপারটেনশন) একই সঙ্গে হৃদযন্ত্র ক্রমশ বড় হতে থাকে ও দুর্বল হয়ে পড়ে। তিন মাসের শিশুটির এই সমস্যাই ছিল। সেই সময় বাচ্চাটির অবস্থা স্থিতিশীল করতে তাকে অক্সিজেন দেওয়া হয়। নিউমোনিয়ার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ও হার্ট ফেলিওরের ওষুধ দেওয়া হয় তাকে। সুস্থ হয়ে শিশুটি বাড়ি ফিরেছে। তবে হার্টের সমস্যা সম্পূর্ণ ভাবে সারানোর জন্য বিশেষ চিকিৎসা করতে হবে। সেই কারণে ওকে আবার হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। বাবা-মা কে এই নির্দেশ দেওয়া হয় চিকিৎসকের তরফে। কিন্তু ততদিনে কোভিড-১৯ মহামারির আকার নিয়েছে। আমাদের দেশেও শুরু হয়ে গেছে লকডাউন। এই অবস্থায় শিশুটিকে নিয়ে ওর বাবা মায়ের পক্ষে হাসপাতালে যাওয়া সম্ভব হয়নি।

আরও খবর: মরসুমি ফল না এক্সোটিক ফ্রুট কোনটা খাবেন? কেন?​

তিন মাস কেটে গিয়েছে। বাচ্চাটির আবার প্রবল শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ায় বাবা-মা অনলাইন কনসালটেশনের সাহায্যে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। হার্টের ওষুধের মাত্রার পরিবর্তন করে ওকে হাসপাতালে নিয়ে আসার পরামর্শ দেওয়া হয়। বাচ্চাটিকে দেখে বোঝা যায়, ওষুধের সাহায্যে বিশেষ কোনও কাজ হচ্ছে না। অবিলম্বে সঠিক চিকিৎসায় পিডিএ-র সমস্যা না সারালে বড় অঘটনের ঝুঁকি রয়েছে। পিডিএ সারানোর জন্য দু’ভাবে চিকিৎসা করা হয়। এক বুক কেটে অস্ত্রোপচার করে পিডিএ বন্ধ করে দিতে হয়, আর দুই বিশেষ ডিভাইসের সাহায্যে বুক না কেটে কুঁচকি থেকে ইন্টারভেনশনাল পদ্ধতির সাহায্যে পিডিএ ক্লোজ করা হয়।

বাচ্চাটির পিডিএ বেশ বড় ছিল (৫ মিমি) তাই ওর বৃদ্ধিও ঠিক মত হয়নি, ওজন মোটে ছয় কেজি। এদিকে বার বার সংক্রমণের জন্য বাচ্চাটি দুর্বলও ছিল। এই কোভিড পরিস্থিতিতে বাচ্চাকে হাসপাতালে ভর্তি করার ব্যপারে ওর বাবা মা দোলাচলে ছিলেন। কিন্তু দ্রুত পিডিএ ক্লোজার না করা হলে ওর সমস্যা গুরুতর হতে পারত। সব দিক বিবেচনা করে বাবা-মাকে রোগের মারাত্মক দিকের কথা বুঝিয়ে কোভিড ১৯ টেস্ট করে বাচ্চাটিকে হাসপাতালে ভর্তি করে নেওয়া হল। এরপর প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষার পর শিশুটির পেটেন্ট ডাকটাস আর্টেরিওসিস ডিভাইস ক্লোজার করা হল। মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে শিশুটি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছে।

ওপেন হার্ট সার্জারি করা হলে সেরে উঠতে বেশি সময় লাগে, রক্তপাত হয় বলে। কিন্তু ডিভাইস ক্লোজারের ক্ষেত্রে ন্যূনতম রক্ত বেরয় তাই রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে। যে সব বাচ্চার জন্মগত হার্টের সমস্যা আছে, করোনার ভয়ে চিকিৎসা বন্ধ রাখবেন না। হার্টের সমস্যা ফেলা রাখলে আচমকা বিপদের ঝুঁকি খুব বেশি। হাসপাতালে যথেষ্ট সাবধানতা নিয়ে পিপিই পরে ও সব রকমের সুরক্ষা নিয়ে তবে রোগী দেখা হচ্ছে বলে জানান চিকিৎসকরা। তাই কোনও সমস্যা হলে ভয় না পেয়ে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

চিকিৎসক যদি অস্ত্রোপচার বা ইন্টারভেনশনাল চিকিৎসা পদ্ধতির সাহায্য নিতে বলেন, তবে সে ক্ষেত্রে দেরি করা ঠিক নয়। বাচ্চার যথাযথ চিকিৎসা করিয়ে তাকে সুস্থ রাখা বাবা-মায়ের দায়িত্ব। তাই শিশুর জন্মের পর থেকেই সতর্ক থাকুন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE