শীতকালকে অনেকে পছন্দ করলেও কিছু মানুষ ডিসেম্বর জানুয়ারি মাসে ব্যথার ভয়ে কুঁকড়ে থাকেন। আসলে শীতকালে আর্থ্রাইটিস জাতীয় অসুখের ব্যথার প্রকোপ কিছুটা হলেও বাড়ে। বিশেষ করে যাঁদের রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসের সমস্যা আছে, তাঁদের অনেকেই এই সময়টায় বেশ ভয়ে থাকেন। বিভিন্ন ব্যথা বেদনার মধ্যে রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস বেশ মারাত্মক ধরনের। তার উপর কোভিড আবহে রিউম্যাটয়েড আক্রান্তদের বিশেষ সতর্কতা নেওয়া দরকার, বলছিলেন মেডিসিন ও রিউম্যাটোলজির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায়। কেন না, শীতের সময় ইনফ্ল্যামেশন অর্থাৎ প্রদাহ বেড়ে যায়। আবার অসুখটি আটকে রাখার জন্যে নিয়ম করে এমন কিছু ওষুধ খেতে হয়, যার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে কোভিড সহ যে কোনও সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। তাই যাঁরা রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসে কষ্ট পাচ্ছেন তাঁদের ভিড়ের জায়গা এড়িয়ে চলা উচিত বলে সুকুমার মুখোপাধ্যায়ের পরামর্শ।
এ দেশে প্রতি বছর ১০ লক্ষ মানুষ নতুন করে এই রোগে আক্রান্ত হন। দেশের মোট জনসংখ্যার ১ শতাংশ রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসের ব্যথা নিয়ে দিনযাপন করছেন। সংখ্যার হিসেবে প্রায় ১৩ কোটি। একটা সময় ছিল, যখন এই রোগের সে রকম ভাল চিকিৎসা না থাকায় মানুষ গৃহবন্দি জবুথবু জীবন যাপন করতে বাধ্য হতেন। কিন্তু মডার্ন মেডিক্যাল সায়েন্সের হাতে এখন অনেক উন্নত মানের ওষুধ আছে, যার সাহায্যে অসুখের বাড়বাড়ন্ত অনেকটাই আটকে রাখা সম্ভব বলে জানালেন রিউম্যাটোলজির বিশেষজ্ঞ অভ্রজিৎ রায়।
অস্থিসন্ধির প্রদাহকে ‘আর্থ্রাইটিস’ বলা হয়। রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস অসুখে হাতের ও পায়ের আঙুলের অস্থিসন্ধিতে ব্যথা দিয়ে রোগের সূত্রপাত হয়, পরে তা গোড়ালি, হাঁটু, ঊরুসন্ধিতে ছড়িয়ে পড়ে। এই অসুখটা একধরনের অটো ইমিউন ডিজিজ অর্থাৎ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অস্থিসন্ধিকে শত্রু মনে করে তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে যায়। এর ফলে হাত পায়ের আঙুলের গাঁট থেকে শুরু করে শরীরের কাঠামোর সব ক’টি জয়েন্টই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে বললেন অভ্রজিৎ রায়। রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস অস্থিসন্ধির আবরণ বা লাইনিংকে ধ্বংস করে দেয়। ভয়ানক ব্যথা হতে হতে জয়েন্টের হাড় ক্ষয়ে গিয়ে টিস্যু অর্থাৎ কোষকলা ফাইব্রোসিস হয়ে ফুলে ওঠে ও নড়াচড়া করার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। সঠিক চিকিৎসা করা না হলে অস্থিসন্ধি বিকৃত হয়ে যেতে পারে।