Advertisement
১১ মে ২০২৪
gullen burg syndrome

শরীর অচল থেকে পক্ষাঘাত, করোনার দোসর কি এ বার গুলেনবারি সিনড্রোম? কী বলছেন চিকিৎসকেরা

অ্যাকিউট ইনফ্ল্যামেটরি পলির‌্যাডিকিউলো নিউরোপ্যাথি বলা হয় গুলেনবারি সিনড্রোমকে।

হাত-পা ঝিনঝিন করছে, চলতে পারছেন না, এমন উপসর্গ নিয়ে রোগী আসেন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই। ছবি: শাটারস্টক।

হাত-পা ঝিনঝিন করছে, চলতে পারছেন না, এমন উপসর্গ নিয়ে রোগী আসেন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই। ছবি: শাটারস্টক।

রোশনি কুহু চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০২০ ১৬:১৫
Share: Save:

কোভিডের পাশাপাশি হাজির আরও এক রোগ। করোনার সঙ্গেই গুলেনবারি সিন্ড্রোমেও (জিবি) আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের সঙ্গে, আমাদের রাজ্যেও এমন রোগীর সন্ধান মিলেছে। যদিও এ রাজ্যে আক্রান্তদের প্রত্যেকেই বৃদ্ধ।

করোনার দোসর হিসেবে এই রোগ দেখা দিচ্ছে। আবার করোনা ছাড়াও অন্য কোনও ভাইরাল সংক্রমণের পরবর্তী ধাপেও এই রোগ দেখা দিতে পারে। এই রোগের ক্ষেত্রেও অনেক সময় শ্বাসকষ্ট হয়। যদিও সেই শ্বাসকষ্ট করোনার কারণে যে শ্বাসকষ্ট হয়,তার চেয়ে শারীরবৃত্তীয় ভাবে আলাদা। সেরে যাওয়ার পর বা করোনার সঙ্গেই এই সিনড্রোমও শুরু হওয়ায় নিয়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। আতঙ্কের কোনও জায়গা নেই, সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসায় সেরে যাবে এই রোগ, আশ্বস্ত করছেন চিকিৎসকরা।

গুলেনবারি (জিবি) সিনড্রোমের সূত্রপাত কী ভাবে

স্নায়ু বিশেষজ্ঞ সীতাংশুশেখর নন্দী জানালেন, হাত-পা ঝিনঝিন করছে, চলতে পারছেন না, এমন উপসর্গ নিয়ে রোগী আসেন। হাত দিয়ে কোনও কিছু ধরতে পারছেন না, হতে পারে এমনও। কারও ক্ষেত্রে আবার চোখের পাতা বন্ধ হচ্ছে না, এমনও হতে পারে। তিন থেকে চার দিনের মধ্যে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন রোগী, কারও সাহায্য ছাড়া চলতে পারা যায় না।

আরও পড়ুন: শেষ পর্যায়ের ক্যানসারে কষ্ট কমায় প্যালিয়েটিভ কেয়ার​

প্রথমে পা ব্যথা দিয়ে শুরু হয়, আস্তে আস্তে যন্ত্রণা যায় হাত পর্যন্ত। শুরু হয় পক্ষাঘাত। ফেসিয়াল প্যারালাইসিস বা মুখের অংশে পক্ষাঘাতও হতে পারে। একে বলা হয় অ্যাসেন্ডিং প্যারালিসিস। যদিও এখন মুখ থেকে শুরু করে পা পর্যন্ত অচল হয়ে যাওয়া, কিংবা হাত ও পায়ে পক্ষাঘাত এই উপসর্গও দেখা যায়। ১৪-১৭ দিনের মধ্যে এই উপসর্গ প্রকট হয়ে ওঠে। ১৫ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয় শ্বাসনালীর পেশী, সেই কারণে শ্বাসকষ্ট শুরু হতে থাকে।

সেরিব্রো-স্পাইনাল ফ্লুইড নিয়ে পরীক্ষা করেও দেখা হয় অনেক ক্ষেত্রে। ছবি: শাটারস্টক

এটি আসলে কী

এটি হল অ্যাকিউট ইনফ্ল্যামেটরি পলির‌্যাডিকিউলো নিউরোপ্যাথি। একগুচ্ছ নার্ভ একসঙ্গে থাকে, এগুলিতে এই রোগে আঘাত হানে, তাই এই নাম। জানালেন মেডিসিনের চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস। সীতাংশুশেখরবাবু বলেন, নিউরনের মায়েলিন শিথটা নষ্ট হয়ে যায় এর ফলে। তাই শরীরে স্নায়ুপ্রবাহ চলাচল করতে পারে না। সে কারণেই পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন রোগী।

এই রোগটিকে ইমিউন মেডিয়েটেড ডিজিজ বলে উল্লেখ করেন তিনি। তাঁর কথায়, “কোভিডের সঙ্গে গুলেনবারি সিনড্রোমের বিষয়টি নতুন। রুটিন কোভিড চেক-আপ করতে গিয়ে অনেকেরই পজিটিভ আসছে। এটাই ভাইরাল সংক্রমণ বা পোস্ট ভাইরাল নিউরোপ্যাথি। করোনা ওয়ার্ডে কাজ করেছেন এমন কর্মীর ক্ষেত্রেও গুলেনবারি সিনড্রোম ধরা পড়েছে সারা বিশ্ব জুড়ে।”

আরও পড়ুন: হাসপাতালে অমিল শয্যা, বাড়িতে করোনা আক্রান্তের চিকিৎসা করবেন কী ভাবে

কোন বয়সিরা বেশি আক্রান্ত

আট থেকে আশি যে কেউ আক্রান্ত হতে পারেন এই রোগে।

কী ভাবে বোঝা যায়

নার্ভ কনডাকশন স্টাডি করা হয় কিংবা শিরদাঁড়ার রস বা সেরিব্রো স্পাইনাল ফ্লুইড নিয়ে পরীক্ষা করা হয়। তাতে প্রোটিনের পরিমাণ বেশি থাকলে রোগ নির্ণয় করা যায় দ্রুত। প্রতিবর্ত ক্রিয়ায় সাড়া দেয় না রোগী, এমনও হয়। তবে রোগ ফেলে রাখা উচিত না। এই রোগে সুস্থ হওয়ার হার অনেক বেশি। সীতাংশুশেখরবাবু বলেন, করোনা প্রথমে ফুসফুসকে আঘাত করছিল, এখন শরীরের অন্য সিস্টেমেও প্রভাব ফেলছে এই ভাইরাল সংক্রমণ। যদিও এই রোগের সঙ্গে জিনগত সম্পর্ক খুবই কম এমনটাও উল্লেখ করেন তিনি।

গা-হাত পা খুব ব্যথা মানেই যে গুলেনবারি সিনড্রোম এমন নয়, পরামর্শ নিন চিকিৎসকের

করোনার সঙ্গে গুলেনবারির সম্পর্ক কী ভাবে

যে কোনও ভাইরাল জ্বর থেকেই গুলেনবারি সিনড্রোম হতে পারে। তবে এই রোগ আগেও ছিল। কিন্তু সম্প্রতি অনেকেরই একইসঙ্গে করোনা পজিটিভও এসেছে। করোনার সঙ্গে গুলেনবারির যোগ কতটা রয়েছে, এর জন্য আরও বেশি তথ্য ও গবেষণা প্রয়োজন, এমনটাই মনে করেন অরিন্দমবাবু।

আরও পড়ুন:কোভিড ছড়ানোর মূলে বস্তি ও বহুতলে ফারাক নেই! কেন বলছেন ডাক্তারেরা?

মেডিসিনের প্রবীণ চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, “করোনার সঙ্গে গুলেনবারি সিনড্রোম খুব নামমাত্র রোগীর ক্ষেত্রেই হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত এই দুই রোগের সংযোগকে বিরল বলা যেতে পারে। মেরুদণ্ডে প্রদাহ তৈরি হয় এই রোগে। করোনা হলে প্রথম ক্ষেত্রে ফুসফুসে এসিই রিসেপ্টর যেখানে আছে, সেখানে সমস্যার সূত্রপাত হয়। এ ছাড়াও জিবি সিনড্রোমে রক্তবাহের কাজে গোলমাল হতে পারে। এন্ডোথেলিয়াল ডিজফাংশন ও ক্লট (রক্তের ডেলা) তৈরি হয়। রক্তবাহের প্রবাহেও বাধা তৈরি হয়। সব মিলিয়ে প্রদাহ হয় এবং রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে।”

অনেক ক্ষেত্রে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন রোগী। ছবি: শাটারস্টক

রোগের চিকিসা কী

ইমিউনোগ্লোবিউলিন দিয়ে চিকিৎসা করা হয় এই রোগে, জানান সুকুমারবাবু। সীতাংশুশেখরবাবুর কথায়, আইভি ইমিউনোগ্লোবিউলিন প্রয়োগ করা হয়। এ ছাড়াও প্লাজমা এক্সচেঞ্জ নামক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় চিকিৎসায়। এটি অনেকটাই ডায়ালিসিসের মতো।

চিকিৎসকদের মত, এই আবহে আতঙ্ক নয়, বরং বিধি মেনে সুস্থ থাকুন। কোনওরকম শারীরিক সমস্যায় চিকিৎসকদের পরামর্শ নিন। অযথা আতঙ্কের কোনও প্রয়োজন নেই।

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE