Advertisement
০৮ মে ২০২৪
corona

করোনা সারার কত দিন পর ব্যায়াম? ফুসফুসের ক্ষমতা বাড়াতে মাথায় রাখুন এই সব

ক্লান্তি পুরোপুরি না কমা পর্যন্ত ব্যায়ামের জন্য দুশ্চিন্তা করে লাভ নেই। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে।

শরীরচর্চায় বাড়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। ব্যায়ামের আগে পরামর্শ নিন বিশেষজ্ঞের। ছবি: শাটারস্টক

শরীরচর্চায় বাড়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। ব্যায়ামের আগে পরামর্শ নিন বিশেষজ্ঞের। ছবি: শাটারস্টক

সুজাতা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০২০ ১৬:৫৮
Share: Save:

যে কোনও সংক্রামক অসুখের সঙ্গী হয়ে আসে ক্লান্তি, রোগ সেরে যাওয়ার পরও যা পিছু ছাড়ে না। শরীর-মনের দুর্বলতায় জর্জরিত মানুষ সহজে ফিরতে পারেন না স্বাভাবিক জীবনে, বিশেষ করে আগের ফিটনেস রুটিনে। কোভিডের ক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে, তবে আরও বেশি মাত্রায়। কারণ করোনা হল রেসপিরেটরি ভাইরাস। সবার আগে সে থাবা বসায় ফুসফুসে। ফুসফুস কমজোর হয়। আর তার ফলে অক্সিজেন সরবরাহে ঘাটতি হয়ে শরীরের কোষে কোষে ছড়িয়ে পড়ে ক্লান্তি।

রোগ মাঝারি, এমনকি, মৃদু পর্যায়ে থাকলেও উপসর্গ হিসেবে কখনও এত ক্লান্তি থাকে যে বিছানা ছাড়তেও মন চায় না। আবার এ রোগ এমন যে সেরে যাওয়ার পরও মাস তিনেকের মধ্যে ফিরে আসতে পারে। সে সময় তাকে আটকাতে শরীরের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ শক্তিই ভরসা, যা ঠিকঠাক রাখতে গেলে সঠিক খাবার খাওয়া, পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুমের সঙ্গে ব্যায়ামেরও প্রয়োজন আছে।

এ কারণেই দুশ্চিন্তা । রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়াতে ব্যায়াম করতে হবে, অথচ শরীর দিচ্ছে না, মন চাইছে না। প্রশ্ন জাগে, কেন কোভিডে ক্লান্তির সময়কাল এত দীর্ঘ? কীভাবে তা কাটিয়ে ফেরা যাবে ব্যায়ামের রুটিনে?

আরও পড়ুন: হৃদরোগের সঙ্গে করোনা, ফল হতে পারে বিপজ্জনক, কেন জানেন?​

কোভিডে কেন এত ক্লান্তি

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামী জানিয়েছেন, “রেসপিরেটরি ভাইরাসের এটাই ধর্ম। ফুসফুসকে কমজোর করে দেয়। প্রদাহের কারণেও ক্লান্তি বাড়ে। ভাইরাস সংক্রমণ যখন জাঁকিয়ে বসে, তখন তাকে মারার চেষ্টায় শরীর জুড়ে প্রদাহ হয়। শরীরের রোগ প্রতিরোধী কোষেরা সাইটোকাইন নামে এমন সমস্ত রাসায়নিকের ক্ষরণ বাড়ায়, যাদের চাপে ভাইরাস নিঃশেষ হলেও, প্রদাহের জের চলতে থাকে। চলে শরীর ভাইরাস-মুক্ত হওয়ার পরও। ঘুমের ধরন পালটে যায়, গ্রাস করে ক্লান্তি-অবসাদ। মনোযোগে ঘাটতি হয়। সাধারণ ভাইরাস সংক্রমণের তুলনায় কোভিডে ব্যাপারটা বেশি হয়। কারও ক্ষেত্রে খুব বেশি হয়। রোগ যত জটিল হয়, তত বেশি দিন ধরে চলে। তত বাড়ে তার মাত্রা।”

২০-৫০ বছর বয়সি উপসর্গহীন রোগী কোয়রান্টিনে থাকার সময় হালকা ব্যায়াম করতে পারেন। ফাইল ছবি।

কী করণীয় এ সময়

“ক্লান্তি পুরোপুরি না কমা পর্যন্ত ব্যায়ামের জন্য দুশ্চিন্তা করে লাভ নেই। এতে হিতে বিপরীত হবে। মন অশান্ত হলে ক্লান্তি কমতে আরও সময় লাগবে। কাজেই সব উপসর্গ কমে যাওয়ার পর, কোভিড রিপোর্ট নেগেটিভ আসার পরও যদি ক্লান্তি না কমে, ভাল করে বিশ্রাম নিন। খাওয়াদাওয়া করুন। ঘুমের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখুন। ঘুমের সময় শরীরের ভাঙচুর মেরামত হয় সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে রাত ২টো থেকে ৪টের মধ্যে। সব নিয়ম মেনে চলার পরও কার ক্ষেত্রে ঠিক কত দিনে শরীর ঝরঝরে হবে, তা বলা যায় না। মানুষটির সাধারণ স্বাস্থ্য, বয়স, কত দিন ধরে ভুগেছেন, রোগের জটিলতা ইত্যাদির উপর ব্যাপারটা নির্ভর করে।” জানালেন চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী।

আরও পড়ুন:কেউ উপসর্গহীন বাহক, কেউ করোনা সংক্রমিত, ভাইরাসের আচরণ বাচ্চাদের ক্ষেত্রে কেমন​

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সব্যসাচী সেন জানিয়েছেন, “এ সময় খাওয়া-ঘুম ও বিশ্রামের পাশাপাশি অল্প করে হাঁটাচলা শুরু করা দরকার। সুস্থতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আস্তে আস্তে তা বাড়াতে হবে। তাড়াহুড়ো করা চলবে না। মনে রাখতে হবে, সংক্রমণ কমে গেলেও শরীরে প্রদাহের জের রয়ে গেছে, ফুসফুসও আগের চেয়ে কমজোর। খুব ধীরে ধীরে গ্রেডেড এক্সারসাইজ করে তাদের আগের অবস্থায় ফিরিয়ে এনে তবে পুরোদস্তুর ব্যায়াম করা যাবে।”

কোন ধাপে, কোন ব্যায়াম, কতখানি

ফিটনেস বিশেষজ্ঞ চিন্ময় রায় জানিয়েছেন, “কোন পর্যায়ের রোগ হয়েছে ও কো-মর্বিডিটি আছে কি নেই, তার উপর নির্ভর করে ব্যায়ামের রুটিন। ২০-৫০ বছর বয়সি উপসর্গহীন রোগী যেমন কোয়রান্টিনে থাকার সময় থেকেই হালকা ব্যায়াম করতে পারেন। একটু জোরে হাঁটা বা স্পট জগিং। ইচ্ছে হলে ও অভ্যাস থাকলে জোর বাড়ানোর ব্যায়াম যেমন, প্লাঙ্ক, সাইড প্লাঙ্ক, পুশ আপ ইত্যাদি। সঙ্গে ফুসফুসের কার্যকারিতা বাড়াতে ডিপ ব্রিদিং। ব্যায়াম করার সময়ও যদি জোরে শ্বাস টানতে ও ছাড়তে পারেন, এতে শরীরে বেশি অক্সিজেন যায়, সারা শরীর ও পেশি বেশি তরতাজা হয়।”

আরও পড়ুন:শরীর অচল থেকে পক্ষাঘাত, করোনার দোসর কি এ বার গুলেনবারি সিনড্রোম? কী বলছেন চিকিৎসকেরা​

তাঁর কথায়, “জটিল রোগীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এক পা-ও এগোনো যাবে না,” জানালেন চিন্ময়বাবু। “এঁদের মধ্যে যাঁরা একেবারে শয্যাশায়ী, তাঁদের শরীর সচল করার জন্য ফিজিওথেরাপি করতে হতে পারে। ফুসফুসের কার্যকারিতা বাড়াতে বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে হালকা প্রাণায়াম করতে হতে পারে। শরীর কিছুটা সেরে ওঠার পর ঘরে একটু একটু করে হাঁটাচলা বাড়িয়ে ও ব্রিদিং এক্সারসাইজ করে ফুসফুস ধাতস্থ হলে তবে অন্য ব্যায়ামের প্রশ্ন।”

ফুসফুসের কার্যকারিতা বাড়াতে ডিপ ব্রিদিং জরুরি। ফাইল ছবি।

“মৃদু ও মাঝারি উপসর্গের রোগীদের ক্ষেত্রে শরীর ভাইরাসমুক্ত হওয়ার পর ও ক্লান্তি কমতে শুরু করলে প্রথমে হাঁটাহাটি ও প্রাণায়াম দিয়ে শুরু করে শরীর কতটা নিতে পারছে তা দেখে স্ট্রেচিং, যোগা, জগিং, সাইক্লিং ও প্লাঙ্ক, সাইড প্লাঙ্ক, পুশ আপ, ব্রিজ এমনকি কিছু দিনের মধ্যে ওয়েট ট্রেনিংও শুরু করে দেওয়া যায়। তবে খেয়াল রাখতে হবে সবটাই যেন শারীরিক সক্ষমতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে হয়, বিশেষ করে যাঁদের বয়স বেশি ও কোনও কো-মর্বিডিটি আছে”, এমনটাই জানালেন চিন্ময় রায়।

আরও পড়ুন:সারা বিশ্বে নাজেহাল প্রায় ১৩ কোটি মানুষ, ত্বকের এই অসুখকে অবহেলা নয়​

ব্যায়ামের উপকার

হাজার উপকার আছে। নিয়ন্ত্রিত ব্যায়ামে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, কোভিডের কো-মর্বিডিটির প্রকোপ কম থাকে। বাড়ে ফুসফুসের কার্যকারিতা। করোনার মতো রেসপিরেটরি ভাইরাসের প্রকোপ থেকে পুরোপুরি মুক্ত হতে গেলে, যার বিরাট প্রয়োজন। তাছাড়া নিয়মিত ব্যায়াম করলে ভাল ঘুম হয়, তরতাজা হয় শরীর-মন, কমে মুড সুইং ও মানসিক চাপ, এই মুহূর্তে, যখন কোভিড নিয়ে আমরা মানসিকভাবে বিধ্বস্ত, তখন এর বিশেষ প্রয়োজন আছে।

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE