বাচ্চাদের ক্ষেত্রে করোনা কম হচ্ছে, এ জাতীয় তত্ত্ব থাকলেও তা এখনও প্রতিষ্ঠিত নয়। ছবি : শাটারস্টক
২৩ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত প্রাপ্ত সোয়াবের তথ্য নিয়ে ইলিনয়ের নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং অ্যান অ্যান্ড রবার্ট লুরে চিলড্রেনস হাসপাতালের তরফে যে স্টাডি হয়েছিল, তাতে প্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে সঙ্গে শিশু ও অপ্রাপ্তবয়স্কের করোনা সংক্রমণের নানা দিক ধরা পড়েছে। আপৎকালীন বিভাগের রোগীরাও এতে বাদ পড়েননি। বাদ পড়েননি হাসপাতালে ভর্তি নন অথচ আক্রান্ত, এমন ব্যক্তিও। এতে পাঁচ পর্যন্ত শিশু, পাঁচ থেকে ১৭ পর্যন্ত বয়সিরা এবং ১৭ থেকে ৬৫ বছর বয়সিদের সোয়াব নিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: শরীর অচল থেকে পক্ষাঘাত, করোনার দোসর কি এ বার গুলেনবারি সিনড্রোম? কী বলছেন চিকিৎসকেরা
ওই পরীক্ষায় জানা যায়, ১০ থেকে ১০০ গুণ ভাইরাল লোড ছিল অপ্রাপ্তবয়স্ক এবং বাচ্চাদের ক্ষেত্রেই। তুলনামূলক ভাবে বড় যারা, তাদের অনেকের ক্ষেত্রে ভাইরাল লোড ছিল পূর্ণবয়স্কদের সমান। পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের ক্ষেত্রে ভাইরাল নিউক্লিক অ্যাসিডের পরিমাণ (প্রোটিনের জেনেটিক কোড, যা ভাইরাস তৈরিতে সহায়ক) অনেক বেশি। তবে এই সমীক্ষার ক্ষেত্রে ভাইরাল নিউক্লিক অ্যাসিডের পরিমাণের উপর জোর দেওয়া হয়েছিল, সংক্রমণকারী ভাইরাসের ক্ষেত্রে নয়। এই প্রসঙ্গে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অপূর্ব ঘোষ বলেন, এই তথ্য এখনও পর্যন্ত যথেষ্ট নয়। কারণ, দেশ ও স্থান বিশেষে ভাইরাসের চরিত্র পালটে যায়। কিছু বিশেষ রিসেপটরের জন্যও এটা হতে পারে, এমনটাও ধরে নেওয়া হচ্ছে। মূলত পুরোটাই তত্ত্বের উপরে দাঁড়িয়ে। বাচ্চারা আক্রান্ত কেন কম হচ্ছে বা বাচ্চাদের থেকে কেন সংক্রমণ ছড়াচ্ছে, এ সংক্রান্ত অনেক গবেষণা প্রয়োজন। প্রবণতা দেখা যাচ্ছে যে, বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ভাইরাল লোড বেশি। এমন অনেক কেসও আসছে। অনেকেই উপসর্গহীন বাহক হয়েই থেকে যাচ্ছে।
বাচ্চারা কি কম আক্রান্ত হচ্ছে?
বাচ্চাদের ক্ষেত্রে করোনা কম হচ্ছে, এ জাতীয় কয়েকটি তত্ত্ব থাকলেও তা এখনও প্রতিষ্ঠিত নয় বলেই জানান অপূর্ববাবু। তবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা জিনের কিছু সংযোগ এক্ষেত্রে রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তাঁর কথায়, এটা ‘ইনহেরেন্ট ইমিউনিটি’ বা বংশগত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, যার ফলে করোনায় শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার বা হলেও জটিলতা বাড়ার আশঙ্কা কম।
তাঁর কথায়, করোনা ভাইরাস রক্তে ডেলা তৈরি করে, জমাট বাঁধে রক্ত, স্বাভাবিক প্রবাহে ব্যাঘাত ঘটে, হয়তো এটা বড়দের ক্ষেত্রে একটু বেশি, সেই জন্য বাচ্চারা হয়তো কম আক্রান্ত হচ্ছে বা হলেও উপসর্গহীনভাবে থেকে যাচ্ছে, তবে সে ক্ষেত্রে সংক্রমণ ছড়াতে সে সক্ষম। তবে এই নিয়ে আরও অনেক গবেষণা জরুরি বলেই মনে করেন তিনি।
আরও পড়ুন: যত বেশি ওজন, তত বেশি ঝুঁকি বাড়ছে কোভিডে, কী বলছেন চিকিৎসকেরা?
আক্রান্ত হলে কোন ধরনের উপসর্গ আছে বাচ্চাদের?
বাচ্চাদের ক্ষেত্রে শারীরিকভাবে উপসর্গ অনেক কম। ভাইরাল লোডের ক্ষেত্রে সেই অর্থে কোনও তত্ত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত নয়, এ কথা জানান ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথের ডেপুটি ডিরেক্টর অরুণালোক ভট্টাচার্য। তাঁর কাছে বেশ কয়েক জন বাচ্চা করোনা এসেছে, যাদের করোনা ধরা পড়েছে। তাঁর কথায়, বড়দের উপসর্গের সঙ্গে বাচ্চাদের উপসর্গের একটা তফাত রয়েছে। বাচ্চাদের বা অপ্রাপ্তবয়স্কদের উপসর্গ তুলনামূলকভাবে অনেক কম। বড়দের বেশির ভাগের ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট থাকলেও বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ডায়ারিয়া, অল্প জ্বর-- এ জাতীয় উপসর্গ দেখা যাচ্ছে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে।এ ছাড়াও কাওয়াসাকি ডিজিজ-জাতীয় উপসর্গও দেখা গিয়েছে শিশুদের ক্ষেত্রেও অর্থাৎ যারা বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছায়নি।