সব্জি, ডাল, মাংস, মাছ— খাচ্ছেন সবই। কিন্তু পুষ্টিগুণ পাচ্ছেন কি? চিকিৎসক থেকে পুষ্টিবিদেরা বলেন দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় টাটকা শাকসব্জি, ফল, ডাল, মাছ, মাংস— সমস্ত কিছুই মিলিয়েমিশিয়ে রাখা দরকার, যাতে পুষ্টিতে ফাঁক না থাকে। প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, ফাইবার, ভিটামিন, খনিজ— সবই রয়েছে এমন খাবার খাচ্ছেন নিয়মিত। তবে শরীর সঠিক পুষ্টি পাচ্ছে তো?
আরও পড়ুন:
পুষ্টিবিদেরা বলেন, শাকসব্জি থেকে মাছ-মাংসের পুষ্টিগুণ নষ্ট হয় রান্নার ভুলেই। যেমন সেদ্ধ ডিমে যতটা প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট মেলে, ভাজা ডিমে কিন্তু নয়। অথচ অঙ্কের হিসাবে রোজই ডিম খাচ্ছেন। মুরগির মাংস প্রোটিনের অন্যতম উৎসব, পালংশাকে ফাইবার-ভিটামিন সবই আছে। কিন্তু কষিয়ে রাঁধা তেল-ঝাল দেওয়া মাংসে সেই গুণ নষ্ট হয় রান্নার ভুলে।
খাবারের পুষ্টিগুণ পেতে হলে রন্ধনের কৌশলে বদল জরুরি। জেনে নিন কী ভাবে রান্না করলে স্বাস্থ্যের দিকটিও বজায় থাকবে।
তাজা জিনিস: রান্নার সুবিধার জন্য অনেকেই ফ্রোজ়েন মাংস, মাছ কিনছেন। সব্জিও এখন কেটেকুটে প্যাকেটজাত অবস্থায় বিক্রি হয়। তবে পুষ্টিবিদেরা বলছেন, এই সব্জিতে পুষ্টিগুণ কমে যায়। তা ছাড়া তা দীর্ঘ দিন ভাল রাখার জন্য ‘প্রিজ়ারভেটিভ’ ব্যবহার হয়, যা স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল নয়। তাই সব সময়ে টাটকা সব্জি, মাছ, মাংস কেনাই ভাল।
সেদ্ধ, বেক: উচ্চ তাপমাত্রায় দীর্ঘক্ষণ রান্না করলে খাবারের পুষ্টিগুণ কমে যায়। তা ছাড়া ছাঁকা তেলে ভাজাভুজিতে ক্যালোরি বেড়ে যায়। স্বাস্থ্যের জন্য তা ভাল নয়। তাই চেষ্টা করা প্রয়োজন ছাঁকা তেলে ভাজা এড়িয়ে সব্জি হালকা ভাপিয়ে তার পরে কম তেলে রান্না করার। আঁচ কমিয়ে ঢাকা দিয়ে রান্না করলে খাবারে পুষ্টিগুণ বেশি পাওয়া যায়। খাবার বেক করে নিলেও ক্ষতি তুলনামূলক কম হয়।
রকমারি সব্জি: একই ধরনের সব্জির ব্যবহার এড়িয়ে রকমারি সব্জি দিয়ে রান্না করতে পারেন। প্রতিটি সব্জির নিজস্ব গুণ থাকে। এতে পুষ্টির ভারসাম্য বজায় থাকবে। সব্জি ভাজা খাওয়ার প্রবণতা আছে বাঙালি হেঁশেলে। খেতে ভাল হলেও এতে পুষ্টিগুণ কমে যেতে পারে। বদলে কম তেলে চচ্চড়ি, তরকারি করে নিতে পারেন। সব্জি ভাপিয়ে রসুন, পেঁয়াজ দিয়ে কড়ায় হালকা নাড়াচাড়া করে খাওয়া যায়। আবার তরকারি করার সময়েও মেপে তেল দেওয়া যায়।
স্বাস্থ্যকর ফ্যাট: বিভিন্ন রকম বাদামে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট থাকে।অতিরিক্ত তেল খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল নয়।বদলে মাংস হোক বা মাছ, দই এবং কাজু, কাঠবাদাম বাটা ব্যবহার করলে কম তেলে রান্না হয়। আবার বাদাম বাটলে তার মধ্যে থাকা স্বাস্থ্যকর ফ্যাটই খাবারের পুষ্টিগুণ বাড়িয়ে দেয়, একই সঙ্গে তেলের প্রয়োজন কমায়।তবে ভাল বলেই তা অতিরিক্ত খাওয়া ঠিক নয়। কারণ এর ক্যালোরির মাত্রাও যথেষ্ট।
সঠিক কৌশল: মাছের ছাল, কোর্মার চেয়েও মাছের ঝোল, মাংসের স্ট্যু— এই ধরনের রান্নাগুলি করলে পুষ্টিগুণ বেশি মিলবে। ঝোল বা স্ট্যুতে একাধিক সব্জির ব্যবহার হয়। ফলে একটি খাবারেই প্রোটিন, খনিজ, কার্বোহাইড্রেট— সবটাই মেলে।
চিনি: কৃত্রিম শর্করা যুক্ত খাবারও এড়িয়ে চলা ভাল। চিনিতে ক্যালোরি বাড়ে, কিন্তু পুষ্টিগুণ মেলে না। তরকারি থেকে ডাল, সব্জিতে অনেকেই স্বাদের জন্য চিনি খান। কিন্তু চেষ্টা করা দরকার, তা যাতে এড়ানো যায়। টম্যাটো, আনারসের চাটনির বদলে ধনেপাতার চাটনি, বাদামের চাটনি খেলে কিন্তু চিনির ব্যবহার এড়ানো যেতে পারে।মিষ্টি চাটনি রান্না করলেও খেজুর, কিশমিশ, আমসত্ত্বের ব্যবহারে যাতে তা মিষ্টি করা যায়, তা দেখতে পারেন।