Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
beauty cream

ফর্সা হওয়ার ক্রিম মাখতে গিয়ে এই সব বিপদ ডেকে আনছেন না তো

ফর্সা হওয়ার ক্রিমে মার্কারি, লেড, স্টেরয়েড, নানান প্রিজার্ভেটিভ সহ অজস্র রাসায়ানিক থাকে, যা আমাদের ত্বকের জন্য যথেষ্ট ক্ষতিকর।

ফর্সা হওয়ার ক্রিমে মার্কারি, লেড, স্টেরয়েড, নানান প্রিজার্ভেটিভ সহ অজস্র রাসায়ানিক থাকে, যা আমাদের ত্বকের জন্য যথেষ্ট ক্ষতিকর। ছবি: শাটারস্টক

ফর্সা হওয়ার ক্রিমে মার্কারি, লেড, স্টেরয়েড, নানান প্রিজার্ভেটিভ সহ অজস্র রাসায়ানিক থাকে, যা আমাদের ত্বকের জন্য যথেষ্ট ক্ষতিকর। ছবি: শাটারস্টক

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২০ ১৬:১২
Share: Save:

ফর্সা রঙের জন্যে হাহাকার রয়েছে আজকের সাইবার যুগেও। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী— দেশ জুড়ে ফেয়ারনেস ক্রিমের বিপুল চাহিদা। ছোট থেকে কালো রং ফর্সা করার হিড়িকে পাড়ার দোকান থেকে ফর্সা হওয়ার ক্রিম মাখতে শুরু করে অনেক কিশোর কিশোরী। শুরুতে কিছুটা পরিষ্কার লাগলেও লাগাতার মাখতে থাকলে মুখে কালচে ছোপ পড়ার পাশাপাশি মুখে গলায় হাতে বিভিন্ন রকমের অ্যালার্জি, র‍্যাশ, ব্রণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বক শুকিয়ে গিয়ে নিষ্প্রাণ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে, জানালেন ত্বক বিশেষজ্ঞ সন্দীপন ধর।

আসলে ফর্সা হওয়ার ক্রিমে মার্কারি, লেড, স্টেরয়েড, নানান প্রিজার্ভেটিভ সহ অজস্র রাসায়ানিক থাকে, যা আমাদের ত্বকের জন্য যথেষ্ট ক্ষতিকর। তাই দেশের ত্বক বিশেষজ্ঞরা এই ক্রিম মাখা বন্ধের আবেদন জানিয়েছেন বার বার। কিন্তু এখনও সচেতনতা তৈরি হয়নি, উল্টে আমাদের দেশে এর চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। ২০১৯-এ ফেয়ারনেস ক্রিমের ব্যবসা ছিল ৩০০০ কোটি টাকার। বিশ্বের বৃহত্তম বিপণন গবেষণা জার্নাল ‘রিসার্চ অ্যান্ড মার্কেটস’-এ প্রকাশিত গবেষণাপত্রে জানা গেছে যে, ২০২৩ নাগাদ এ দেশে ফেয়ারনেস ক্রিমের ব্যবসা বেড়ে দাঁড়াবে ৫০০০কোটি টাকায়। সন্দীপন ধর জানালেন যে, প্রত্যেক মানুষ আলাদা আলাদা ত্বকের রং নিয়ে জন্মায়। পৃথিবীর কোনও ক্রিম বা লোশনের সাধ্য নেই সেই রংকে ফর্সা করে দেওয়ার। প্রত্যেক মানুষ যে রং নিয়ে জন্মেছে, সেই রং ফর্সা করা যায় না। তবে ত্বকের রং সূর্যের অতিবেগনি রশ্মির প্রভাবে কালচে হয়ে যায়। ফর্সা হওয়ার ক্রিম মাখলে কালো হওয়া আটকানো যায় না।

সন্দীপন জানালেন, ত্বক আমাদের শরীরের সব থেকে বড় অঙ্গ । ত্বকের তিনটি স্তর বা লেয়ার আছে। একদম উপরে ডার্মিস, তার পরে এপিডার্মিস আর এর নিচে সাব কিউটিস। একেবারে অভ্যন্তরের স্তর বেসাল লেয়ার। সহজ ভাবে বললে, এখানেই আছে রং তৈরির ফ্যাক্টরি। আসলে ত্বকের এই স্তরে আছে মেলানোসাইট কোষ। এরা ‘মেলানিন’ নামে এক রঞ্জক পদার্থ তৈরি করে। যার ত্বকে মেলানিন যত বেশি, তার শরীর তত বেশি কালো। মেলানিন কম থাকলে ফর্সা আর একদম না থাকলে শ্বেতী। গায়ের রং ফর্সা হোক কামনা করলেও শ্বেতীর মতো দুধ সাদা ত্বক আমাদের মনে ভয় ধরিয়ে দেয়। কালো রঙের জন্যে মেলানিনকে দায়ি করা হলেও মেলানিন এর একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। আমাদের মতো দেশে ত্বককে সূর্যের অতিবেগনি রশ্মির হাত থেকে রক্ষা করা ত্বকের রঞ্জক পদার্থ মেলানিনের অন্যতম কাজ।

আরও পড়ুন: জিন দিয়ে যায় চেনা

ব্যবহারকারী যখন টের পান, তখন তা আর সারিয়ে তোলার উপায় থাকে না। ছবি: শাটারস্টক

ত্বক বিশেষজ্ঞ শেখর হালদার জানালেন, মেলানিন থাকায় আমাদের ত্বক কালো দেখায় বটে, কিন্তু মেলানিন থাকার জন্যে আমাদের ত্বকের ক্যানসারের প্রবণতা ও সানবার্ন-এর ঝুঁকি অনেক কম থাকে। তুলনামূলক ভাবে ধবধবে ফর্সা ত্বকের অধিকারী শ্বেতাঙ্গদের ত্বকের ক্যানসারের ঝুঁকি অনেক বেশি। শেখর হালদার জানালেন যে, অনেক রোগীকে বলতে শোনা যায় স্পা, স্যালোন বা বিউটি পার্লার কালো রংকে ফর্সা করতে পারে। ব্যাপারটা আদৌ তা নয়। রোদে পোড়া কালচে হয়ে যাওয়া রঙের হারানো জৌলুস ফিরে পেতে এরা কিছুটা সাহায্য করে মাত্র। অনেকে মাইকেল জ্যাকসনের প্রসঙ্গে জানতে চান, তাঁর কুচকুচে কালো রং হঠাৎ শ্বেতাঙ্গদের মতো ফর্সা হল কী ভাবে। মাইকেল জ্যাকসন ফর্সা হতে গিয়ে বিশেষ এক রাসায়ানিক বা কেমিক্যালের সাহায্য নেন, যার ফলে তাঁকে শ্বেতীর শিকার হতে হয়। মাইকেল জ্যাকসন শ্বেতাঙ্গদের মতো ফর্সা হয়েছেন শ্বেতীর জন্যে। আর বলিউড অভিনেত্রী কাজল মেলানিন সার্জারি করিয়ে মেমসাহেবদের মতো ফর্সা হয়েছেন। বিশেষ পদ্ধতিতে ত্বকের অভ্যন্তরে থাকা মেলানিন স্তর থেকে মেলানিনের সংখ্যা কমিয়ে রং ফর্সা করা যায়। তবে এই ফর্সা হওয়ার সার্জারি নিয়েও অনেক মতভেদ আছে। এ ছাড়া এই সার্জারির পর নানান নিয়মের বেড়াজাল মেনে না চললে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।

আরও পড়ুন: ভয় নয়, চাই সাবধানতা

ফর্সা হওয়ার ক্রিম সম্পর্কে বলতে গিয়ে সন্দীপন ধর জানালেন, বিজনেজ সিক্রেটের নাম করে সমস্ত কোম্পানিই ফেয়ারনেস ক্রিমের উপাদান সম্পর্কে ক্রেতাদের অন্ধকারে রাখে। আদতে এগুলির মূল উপাদান হাইড্রোক্যুইনোন, হাইড্রক্সিইথাইল ইউরিয়া, ফেনক্সিইথাইল, ট্রেটিনয়েন, স্টেরয়েড এবং মার্কারি। এই রাসায়ানিকগুলি দীর্ঘ দিন ব্যবহার করলে ত্বকের স্থায়ী ক্ষতি হয়। নিয়মিত ব্যবহার করলে অনেকের ত্বক ভয়ানক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে। ব্যবহারকারী যখন টের পান, তখন তা আর সারিয়ে তোলার উপায় থাকে না। লাগাতার ফর্সা হওয়ার ক্রিম মাখলে মুখ ও গলার ত্বকের স্থায়ী পিগমেন্টেশন হয়ে যায়, সমস্ত মুখ, গলা জুড়ে কালচে ছোপ পড়ে। চোখ এবং চুলের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যাঁরা নিয়মিত ফর্সা হওয়ার ক্রিম মাখেন, তাঁদের চোখে জ্বালা থেকে শুরু করে নানা রকম অসুবিধে হতে পারে। মার্কারি থেকে ত্বকের ক্ষতির পাশাপাশি সফট টিস্যুরও সমস্যা হয়। এমনকি ত্বকের ক্যানসারের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কালো হওয়া আটকাতে নিয়মিত সানস্ক্রিন লাগানো সব থেকে ভাল সমাধান। সুস্থ সুন্দর ঝকঝকে ত্বকের জন্য পরিচ্ছন্ন থাকার পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার খাওয়াও জরুরি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fairness Cream Beauty Cream LifeStyle
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE