Advertisement
E-Paper

কিছুতেই ভুঁড়ি কমছে না? এই সব নিয়ম মেনে চললেই বাজিমাত

ডায়েট করুন বা ব্যায়াম, কিছু বিষয় মাথায় রাখুন প্রথম থেকেই। না হলে ভুঁড়ি কমার পরিবর্তে পণ্ডশ্রম হবে।

সুজাতা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৯ ১১:৫২
ভুঁড়ি কমে যদি সময় মতো ঠিকঠাক নিয়ম মেনে চলেন।

ভুঁড়ি কমে যদি সময় মতো ঠিকঠাক নিয়ম মেনে চলেন।

যতটা কঠিন ভাবা হয়, ততটা কঠিন আসলে নয়৷ আবার সহজ কোনও উপায়েই চটজলদি কাজ হবে, এমনও নয়। ভুঁড়ি নিয়ে চিন্তার সূত্রপাত বোধ হয় এই জটিলতা থেকেই। তবে ভুঁড়ি কমানোর সহজ কয়েকটি বিষয় ভাল করে বুঝে নিলে ও ভুল ধারণা পাল্টে দু’–চারটে নিয়ম মানতে পারলে ভালই কাজ হয়৷ তবে এই সমস্যা কাটাতে একটু লেগে থাকতে হয় বইকি!

তবে ডায়েট করুন বা ব্যায়াম, কিছু বিষয় মাথায় রাখুন প্রথম থেকেই। তাতে বৃথা সময় নষ্ট হবে না। ভুঁড়ি কামতে গেলে এই সব বিষয়গুলিই আসলে ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়। দেখে নিন সে সব।

শরীরের বিপাক ক্রিয়ার হার বেশি হলে একটু বেশি খেলেও চলে৷ কিন্তু সবার তো তা হয় না, কাজেই তাঁদের একটু বুঝে খেতে হয়৷ যত ক্যালোরি খাচ্ছেন তার চেয়ে বেশি খরচ করতে হয়৷ না হলে ওজন ও ভুঁড়ি কমানো যায় না৷

আরও পড়ুন: সারাদিন মন খাই খাই করে? অজান্তেই এই রোগের শিকার হননি তো?

মাঝ বয়সে ওজন ও বিশেষ করে ভুঁড়ি বাড়ার নানা কারণ৷ প্রথমত, যৌন হরমোনের ঘাটতি হতে শুরু করে আর তার হাত ধরে কমে বিপাক ক্রিয়ার হার, বাড়ে পেশির ক্ষয়৷ সবে মিলে শরীরের নিজস্ব ক্যালোরি খরচের হার কমে যায়৷ তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খাওয়া কমাতে না পারলে ও হালকা ওজন নিয়ে ব্যায়াম না করলে সমস্যা হয়৷ আবার হরমোনোর কারণেই ফ্যাট ডিস্ট্রিবিউশনের হিসেব বদলে যায় বলে পেট–কোমর বা থাইয়ে–হিপে চর্বি জমতে শুরু করে৷

প্রসবের পর সপ্তাহ তিনেকের মধ্যে পেটের পেশি শক্তপোক্ত করার ব্যায়াম শুরু না করলে বেশি চর্বি না জমলেও ঢ়িলে পেশির কারণে মনে হয় ভুঁড়ি বেড়েছে৷ নিয়মিত মদ খেলে ভুঁড়ি বাড়ে। মদের অনুষঙ্গে যে ভাজাভুজি বা হাই ক্যালোরি খাবার থাকে, তারও ভূমিকা আছে এ ব্যাপারে৷ সরাসরি পেটে চর্বি জমাতে মিষ্টি খাবার সিদ্ধহস্ত৷ স্টার্চি খাবার, যেমন ভাত, আলু, ময়দা ইত্যাদিরও ভাল বদনাম আছে৷ তা ছাড়াও পেট বড় লাগার আর এক বড় কারণ পেট ফেঁপে থাকা৷

পেটের চর্বি কমাতে শুরু করুন স্ট্রেংথ ট্রেনিং।

ভুল ধারণা শুধরে নিন

বাড়াবাড়ি সিটআপ–ক্রাঞ্চেস করলে ভুঁড়ি কমার আগেই কোমর ব্যথা শুরু হতে পারে৷ বিশেষ করে বেশি বয়সে বা কোমরে কোনও সমস্যা থাকলে৷ স্পট রিডাকশন বলে কিছু হয় না৷ যে ব্যায়ামে সারা শরীরের চর্বি ঝড়ে, তাতে পেটেরও ঝড়ে৷ সঙ্গে পেটের পেশি দৃঢ় করার ব্যায়াম করে গেলে চোখে পড়ার মতো পরিবর্তন হয়৷ ভাইব্রেটর ও অ্যাব জিমনিক বেল্ট ব্যবহার করা মানে টাকা ও সময়ের অপচয়৷ চর্বি ঝড়াতে শুধু কার্ডিও নয়, ওজন নিয়ে ব্যায়াম করাও দরকার৷ ঘণ্টার পর ঘণ্ট জিম করলে বা সাধ্যের অতিরিক্ত ওজন নিয়ে ব্যায়াম করলে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা খুব বেশি৷ কম ঘুমিয়ে বেশি ব্যায়াম করলে শারীরিক ও মানসিক চাপ বাড়ে৷ বাড়ে কিছু ক্ষতিকর হরমোনের পরিমাণ৷ তাদের দৌলতে পেটে বেশি চর্বি জমে৷ দুপুরে ১০–১৫ মিনিট ঘুমিয়ে নিলে এনার্জি বাড়ে, ভুঁড়ি নয়৷ তবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘুমোলে কিন্তু সমস্যা আছে৷ পেটে বেশি ফ্যাট জমার ধাত হলে তা ঝরেও সবার শেষে৷ ডায়েট পিলে ক্যালোরি খরচ সামান্যই বাড়ে৷ এবং ভুঁড়িও খুব একটা কমে না৷ বরং এর অন্য ক্ষতিকর দিক আছে৷ রক্তচাপ বেশি হলে বা অন্য কোনও শারীরিক সমস্যা থাকলে খাওয়া মোটে চলবে না৷ চর্বি কমাতে চাইছেন বলে চর্বি খাওয়া পুরো ছাড়বেন না৷ উপকারি ফ্যাটসমৃদ্ধ খাবার না খেলে বরং ভুঁড়ি কমা কঠিন হয়৷ প্রসেস করা লো ফ্যাট ডায়েটে ফ্যাট কম থাকলেও চিনি বেশি থাকে বলে ভুঁড়ি কমার বদলে উল্টে বাড়ে৷ চর্বি কমানোর ব্যাপারে ৭০ শতাংশ ভূমিকা খাবারের, ৩০ শতাংশ ব্যায়ামের৷

আরও পড়ুন: অ্যালার্জির প্রকোপ বাড়ছে, কী ভাবে দূরে রাখবেন সন্তানকে?

খেয়ে কমান ভুঁড়ি

ক্র্যাশ ডায়েট করবেন না৷ দিনের কোনও খাবার বাদ দেবেন না৷ এতে খাই খাই ভাব বাড়ে৷ ভুলভাল খাওয়া হয়ে যায়৷ শেষমেশ দেখা যায় সারাদিনে যত ক্যালোরি খাওয়ার কথা, তার চেয়ে বেশিই খেয়ে ফেলেছেন বা সমঝোতা করেছেন পুষ্টির সঙ্গে৷ বরং সুষম লো–ক্যালোরির এমন খাবার খান, যা খেতে ভাল লাগে৷ ডায়েটিংয়ে টিকে থাকতে গেলে খাবারের স্বাদ হওয়া দরকার৷ পেটও মোটামুটি ভরা থাকা জরুরি৷

এখন যা খাচ্ছেন তার চেয়ে ৫০০ ক্যালোরি যদি কম খেতে পারেন, সপ্তাহ শেষে ৪৫০–৫০০ গ্রামের মতো ওজন কমবে৷ ভুঁড়িতেও ফারাক হবে৷ বেশি কিছু করতে হবে না তার জন্য৷ মিষ্টি, ভাজা ও প্রসেস্ড খাবার বন্ধ করলে ও তেল–ঘি–ভাত–রুটি ইত্যাদি খাওয়া কমালেই কাজ হয়ে যাবে৷

স্টার্চ বাদ, প্রোটিন ডায়েট পাতে থাকুক।

পর্যাপ্ত লিন প্রোটিন, শাক-সব্জি, মাপ মতো হোল গ্রেন, কম মিষ্টি ফল খান৷ ভাত–রুটি খান কম৷ দেখুন কী ভাবে ভুঁড়ি কমে৷ পেটে যাতে গ্যাস না জমে, সে দিকে খেয়াল রাখুন৷ প্রতি দিন ৩–৪ লিটার জল খান৷ এ ছাড়া চা-কফির নেশা থাকলে দু’–তিন কাপ কি চার কাপ চিনি ছাড়া কালো কফি ও গ্রিন টি খান৷ এতে মেটাবলিজম বাড়ে। তার হাত ধরে ক্যালোরি খরচ বাড়ে৷ অসময়ের খিদে বশে রাখতেও এদের ভূমিকা আছে৷ ব্যায়ামের আগে এক কাপ গ্রিন টি খেয়ে নিলে এনার্জি বাড়ে বলে ভাল করে ব্যায়াম করা যায়৷

নুন বেশি খেলে শরীরে জল জমার হার বেড়ে একটু ফোলা লাগতে পারে৷ কাজেই কম নুন খান৷ সঙ্গে খান পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার। ওজন ও ভুঁড়ি কমাতে এদের ভূমিকা আছে বলে জানা গিয়েছে৷ যেমন, একটা বেকড আলু, আধ কাপ সাদা বিন, এক কাপ পালং, একটা কলা, একটা ছোট রাঙা আলু, ২–৩টে খেঁজুর৷

আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

ব্যায়াম ধাপে ধাপে

ব্যায়ামের অভ্যাস না থাকলে হাঁটাহাটি দিয়ে শুরু করুন৷ শরীর তৈরি হলে ব্রিস্ক ওয়াকিংয়ের পাশাপাশি শুরু করুন স্ট্রেংথ ট্রেনিং৷ ডায়েটিংয়ের সঙ্গে সপ্তাহে ৫–৬ দিন মোট ৭৫ মিনিট হাই ইনটেনসিটি বা ১৫০ মিনিট মডারেট ইনটেনসিটি কার্ডিও ও ১২০ মিনিট স্ট্রেংথ ট্রেনিং করলে কিছু দিনেই ওজন ও ভুঁড়ি নিয়ন্ত্রণে চলে আসে৷ পেটের পেশি টাইট করার জন্য করুন ক্রাঞ্চেস, রিভার্স ক্রাঞ্চেস, স্ট্যান্ডিং সাইড বেন্ড, চপস বা টুইস্ট, প্ল্যাঙ্ক৷ ব্যায়াম করুন ১০ শতাংশের নিয়ম মেনে৷ অর্থাৎ এক ঘণ্টা ব্যায়াম করলে ৬ মিনিটের বেশি পেটের ব্যায়ামের জন্য রাখার দরকার নেই৷ যখনই সময় পাবেন শ্বাস স্বাভাবিক রেখে পেট ভিতর দিকে টেনে রাখুন৷ একে বলে মিনি অ্যাব এক্সারসাইজ৷ দীর্ঘ মেয়াদে এতে বেশ ভাল ফল হয়৷ রোজ ব্যায়াম করতে ভাল না লাগলে মাঝেমধ্যে ব্রেক নিন৷ খেলাধুলা করুন, নাচুন, ঘরের কাজ করুন, এমনকি একটু হাঁটাহাটি করে আসুন৷ শরীর–মন রিল্যাক্সড থাকলে ব্যায়ামের রুটিন মেনে চলা আরও সহজ হয়৷ অনিদ্রা ও মানসিক চাপ সামলাতে সপ্তাহে মোট ৭৫–১০০ মিনিট যোগা ও প্রাণায়াম করুন৷

Belly Fat Fitness Tips Health Tip ভুঁড়ি
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy