Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

কাজের ফাঁকেই থাকুন সুস্থ

ব্যস্ততা হাজার। কিন্তু তার মাঝেই মিনিট কয়েকের বিরতি নিন। চেয়ারে বসেই করে নিন ব্যায়ামদরকার কাজের ফাঁকে মিনিট কয়েকের বিরতি। আর সেই সময়টায় চেয়ারে বসেই খুব সহজে করে ফেলা যায় কয়েকটি ব্যায়াম।

শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৯ ০৭:৫৫
Share: Save:

অফিসের ডেস্কে বসে হোক কিংবা বাড়িতে থেকেই অফিসের কাজ, একটানা অনেকক্ষণ বসে থাকার ফল খুব একটা সুখকর হয় না। মুখ গুঁজে কলম পিষতে পিষতে অথবা কম্পিউটারের পর্দায় টানা চোখ রাখলে তার প্রভাব পড়ে শরীরেও। প্রাথমিক ভাবে সমস্যাটা বোঝা না গেলেও সাধারণত টের পাওয়া যায় পরে। যন্ত্রণা বাড়তে থাকে ঘাড়, কাঁধ, কোমর জুড়ে। কিন্তু সামান্য চেষ্টা করলেই এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

তার জন্য দরকার কাজের ফাঁকে মিনিট কয়েকের বিরতি। আর সেই সময়টায় চেয়ারে বসেই খুব সহজে করে ফেলা যায় কয়েকটি ব্যায়াম। ব্যায়ামগুলি সাধারণ মনে হলেও, ব্যথা থেকে আরাম দেবে। ফিটনেস এক্সপার্ট চিন্ময় রায় বলছেন, ‘‘ব্যথা এড়ানোর জন্য চেয়ারে বসে ব্যায়াম খুবই ভাল। ঘাড় গুঁজে লিখলে ঘাড়ের ব্যথা বাড়ে। আবার সামনে ঝুঁকে কাজ করলে ব্যথা হয় কোমরে। সঙ্গে আছে হাঁটুর ব্যথাও। কিন্তু এই সমস্ত ব্যথার উপশম হতে পারে স্ট্রেচিংয়ের মাধ্যমে।’’ রইল বিস্তারিত আলোচনা।

ঘাড়: শুরু করা যাক ঘাড়ের ব্যায়াম দিয়েই। একটানা কম্পিউটারে চোখ রাখা বা ঘাড় নিচু করে অবিরাম লেখাপড়ায় বাড়ে যন্ত্রণা। ব্যথা থেকে মুক্তি দিতে পারে স্ট্রেচিং ও চিন টাক।

এক নজরে

• চেয়ারে বসে সহজেই করা যায় ঘাড়, কাঁধ, কোমর ও হাঁটুর কিছু সাধারণ ব্যায়াম
• কাজ করার সময়ে মেরুদণ্ড থাক সোজা, টানটান
• এক বারে সম্ভব না হলে দু’-তিন বারেও করতে পারেন ব্যায়াম

ঘাড়ের স্ট্রেচ: চেয়ারে বসেই ঘাড় ডান দিকে কাত করুন। তার পরে ডান হাত দিয়ে মাথাটা আলতো করে ডান দিকে চাপ দিতে হবে বা টানতে হবে। এই একই পদ্ধতিতে দু’দিকেই তিন বার করে স্ট্রেচ করতে হবে। এতে ঘাড়ের কাছের পেশি দীর্ঘায়িত হয় এবং আরাম মেলে।

চিন টাক: থুতনিতে চাপ দিয়ে ঘাড় আস্তে আস্তে পিছন দিকে হেলাতে হবে। সবচেয়ে ভাল হয় যদি ব্যায়ামটার জন্য দেওয়ালের সাহায্য পাওয়া যায়। ধরা যাক, দেওয়ালে হেলান দিয়ে চেয়ারের উপরে বসলেন। এ বার থুতনিতে চাপ দিয়ে মাথা ধীরে ধীরে দেওয়ালে ঠেকানোর চেষ্টা করতে হবে। তবে হাত দিয়ে থুতনিতে চাপ দিলে চলবে না। ব্যায়ামটি করতে হবে তিন বার।

কাঁধ: ঘাড়ের যন্ত্রণা ছড়ায় কাঁধেও। শুধু একটানা বসে কাজই নয়, রোজ ভারী ব্যাগ নেওয়াতেও ঘাড়ে ব্যথা হয়। আবার ভুল ভঙ্গিমায় বসে ঝুঁকে কাজ করার জন্যও কাঁধের রোটেটর কাফ বা পেশিতে সমস্যা হয়। কনকনে ব্যথা হয়। অনেকের ক্ষেত্রে কাঁধের মুভমেন্ট রেঞ্জ অর্থাৎ হাত যতটা পর্যন্ত ঘুরতে পারে, সেই পরিসর কমে যায়। একে বলে ফ্রোজ়েন শোল্ডার। ভাল থাকার জন্য রোটেটর পেশির স্ট্রেচ ও এক্সটার্নাল রোটেশন করতে হবে।

রোটেটর স্ট্রেচ: ডান হাত বুকের কাছে আড়াআড়ি নিয়ে আসতে হবে। এর পরে বাঁ হাত দিয়ে ডান হাতের কনুইয়ে চাপ দিতে হবে। এর ফলে কাঁধের পিছন দিকের পেশিতে চাপ পড়ে। দশ সেকেন্ড করে দু’হাতে তিন বার করে এই স্ট্রেচ করতে হবে।

এক্সটার্নাল রোটেশন: এটি আসলে রোটেটর পেশির জোর বাড়ানোর ব্যায়াম। এর জন্য হাতে জলভর্তি এক লিটারের বোতল নিন। ডান হাতে জলের বোতল ধরে হাতটাকে আর্মপিটের কাছে চেপে রাখতে হবে। এ বার কনুইটা ভেঙে হাতটাকে বাইরের দিকে ঘোরাতে হবে। দশ সেকেন্ড করে দু’হাতে তিন বার করে করতে হবে এই ব্যায়াম।

কোমর: ডেস্কে বসে কাজের সময়ে পিঠ টানটান করে রেখে কাজ করার সতর্কবাণী আমরা প্রায়শই ভুলে যাই। কিন্তু মেরুদণ্ড গোলাকার হলেই কোমরের সমস্যা আসতে বাধ্য। এই ভুল ভঙ্গির সমস্যা বিপদ ডেকে আনে। হিপে থাকে গ্লুটিয়াস ও হ্যামস্ট্রিং পেশি। স্ট্রেচিং করলে সেই পেশিতে ব্যথায় আরাম মেলে।

ফিগার ফোর স্ট্রেচ: চেয়ারে বসে এক পা আর একটি পায়ের উপরে তুলে দিলে ইংরেজি 4-এর মতো দেখতে হয়। সেই অবস্থায় বসে শরীরটাকে সামনের দিকে ঝোঁকাতে হবে। লক্ষ রাখতে হবে, মেরুদণ্ড যেন টানটান থাকে। এতে হিপের অংশে টান পড়বে। হিপের পেশি স্ট্রেচও হবে। দুই পায়ে দশ সেকেন্ড করে তিন বার করে করতে হবে।

হ্যামস্ট্রিং স্ট্রেচ: চেয়ারে বসে একটি হাঁটু ভাঁজ রাখতে হবে। আর একটি পা সামনের দিকে সোজা করে ছড়াতে হবে। অর্থাৎ বাঁ হাটু ভাঁজ থাকলে ডান পা ছড়াতে হবে। এতে হিপের হ্যামস্ট্রিং পেশিতে টান পড়বে। দু’পায়ে তিন বার করতে হবে এই ব্যায়াম। এর ফলে কোমরে আরাম পাবেন। এর সঙ্গে জোর বাড়ানোর ব্যায়াম করতে পারেন। সেটা চেয়ারে বসে করা সম্ভব নয়।

হাঁটু: হাঁটুর ব্যায়ামের জন্য কোমরের স্ট্রেচিং দু’টি অবশ্যই করতে হবে। তার পাশাপাশি করতে হবে সিটেড লেগ এক্সটেনশন।

সিটেড লেগ এক্সটেনশন: চেয়ারে বসে একটা পা মেঝের উপরে রাখতে হবে। আর একটি পা টানটান করে সামনের দিকে ছড়াতে হবে। মেরুদণ্ড থাকবে সোজা। এ ভাবে দশ অবধি গুনে পা পরিবর্তন করতে হবে। দুই পায়েই এই ব্যায়াম মোট দশ-বারো বার করতে পারেন। এতে থাইয়ের পেশির জোর বাড়ে।

কাজের ফাঁকে যেটুকু সময় কেটে যায় সহকর্মীর সঙ্গে আড্ডায়, সেই সময়টাকেই কাজে লাগান। রোজ অল্প সময় ধরে এই সমস্ত ব্যায়ামের নিয়মিত অভ্যেস শুধু ব্যথা কমায় না, শরীরও ভাল রাখে। টিভি দেখার ফাঁকে হোক বা অফিসের বিরতিতে, চেয়ারে বসেই হোক শারীরচর্চা।

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fitness Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE