দোকানের সামনে জমা ভিড়ের ফাঁক দিয়ে একটা মুখ উঁকি দিল, ‘‘কী হল, আজ শঙ্কর মাছ ভাজা নেই?’’ স্মিত হেসে দোকানদারের জবাব, ‘‘অল্প ছিল। সন্ধ্যায় ফুরিয়ে গিয়েছে। এখন পমফ্রেট, ভোলা, লটে আছে।’’
আদা-পেঁয়াজ-রসুন ও কাঁচালঙ্কা বাটা, লেবুর রস আর নুনে মেখে রাখা মাছ বেসনে চুবিয়ে ভাজা হচ্ছে। অধিকাংশই গরমাগরম মাছভাজা খাচ্ছেন দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে।
না, দিঘা বা শঙ্করপুর নয়।
এটা কলকাতা। দোকান বসেছে গড়িয়ার মহামায়াতলা। কিংবা যাদবপুর লাগোয়া সুলেখা মোড়ের কাছে আনন্দপল্লি।
ভোজন বিলাসী এই শহরের রাস্তার মুখরোচক খাবার বা স্ট্রিট ফুডের তালিকায় নতুন সংযোজন এ বার মাছ ভাজা। শহরের নতুন তেলেভাজা এখন মাছভাজা! কোথাও বিক্রি হচ্ছে রাস্তার ধারের অস্থায়ী স্টলে, কোথাও ঝুপড়িতে।
মৎস্যপ্রিয় বলে বাঙালির খ্যাতি জগৎজোড়া হলেও মাছ নিয়ে এমনটা করার কথা এই বঙ্গের রাজধানীতে এত দিন ভাবা হয়নি। স্ট্রিট ফুডে মাছ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা এ যাবৎকাল আটকে ছিল কেবল ফিলে-তে লেড়ো বিস্কুটের গুঁড়ো মাখিয়ে ফ্রাই, ব্যাটার ফ্রাই, চপ, কাটলেট, ফিঙ্গার, পকৌড়াতে। ওই সব খাবারের যা দাম, তার তুলনায় মাছ ভাজা সস্তা। মাছের প্রজাতি ও সাইজ সাপেক্ষে এক-এক পিস ভাজা ১০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে।
মাছভাজাকে স্ট্রিট ফুড করে তোলার প্রয়াস চালাচ্ছেন যাঁরা, তাঁরা দামের ব্যাপারটা খেয়াল রেখেছেন। গড়িয়ার মহামায়াতলার কাছে লস্করপুর রবীন্দ্রনগরে বছর তিনেকের পুরনো, মাছভাজার ঝুপড়ি দোকানের মালিক দিবাকর দাস বলছেন, ‘‘আমি প্রতি পিস মাছ ভাজা ১০-১৫ কিংবা বড়জোর ২০ টাকায় বিক্রি করি। যদি বাজারে গিয়ে দেখি, কোনও মাছের দাম চড়া, তা হলে ওই মাছ নিই না।’’ ওই দোকানে রোজ গড়ে বিক্রি হয় ১০ কেজি মাছ। সস্তায় খদ্দেরকে মাছভাজা খাওয়াতে দিবাকরবাবু রোজ সকালে প্রায় ১০ কিলোমিটার উজিয়ে কবরডাঙা বাজারে যান। নীলগঞ্জ ভেড়ি লাগোয়া ওই তল্লাটে মাছ কিছুটা সস্তা।
আবার সুলেখা মোড় লাগোয়া গলিতে অভিজিৎ ধরের অস্থায়ী স্টলে মাছভাজার দাম ১০ থেকে ৫০ টাকা। তেলাপিয়া, পাবদা, চিংড়ি, আমোদি, গুরজাওলিও মেলে সেখানে। ছ’মাস বয়সী দোকানে এখন রোজ কেজি পাঁচেক মাছ বিক্রি হয়। সুলেখা বাজারে সকালে পৈতৃক মাছের ব্যবসা সামলান অভিজিৎ। ওই দোকানের জন্য পাইকারি দরে কেনা মাছেরই একটা অংশ সন্ধ্যায় ভেজে দিতে পারেন বলে খদ্দেররা কম দামে পান।
মাছভাজাকে এখন স্ন্যাক্স হিসেবে বাঙালি গ্রহণ করছে বলে গড়িয়াহাট ও লেক ভিউ রোডে এ বছর শুরু হওয়া কেতাদুরস্ত রেস্তোরাঁরও রোজকার পদ, ‘আজকের মাছভাজা’। কখনও বড় পমফ্রেট, কখনও কাতলার পেটি। আছে গাং মৌরলাও। ওই রেস্তোরাঁর অন্যতম কর্ণধার অলকেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘রাস্তায় মাছভাজা বিক্রি কলকাতার স্ট্রিট ফুডে নতুন ধারার সূচনা করল।’’ বালিগঞ্জ প্লেসে বাঙালি খাবারের এক রেস্তোরাঁ চেনের প্রতিষ্ঠাতা ও অন্যতম কর্ণধার, শেফ সুশান্ত সেনগুপ্তেরও মত, ‘‘চমকপ্রদ ব্যাপার। কেরল, গোয়া, মহারাষ্ট্রের মতো পশ্চিমবঙ্গেও মাছভাজা স্ট্রিট ফুড হল জেনে ভাল লাগছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy