বাড়ির সাজসজ্জায় লিভিং রুম সাধারণত সবচেয়ে বেশি যত্ন পায়। অতিথির চোখের সামনে থাকে বলেই সেখানে সবার মনোযোগও বেশি। অথচ শোয়ার ঘর যেন প্রায়শই অবহেলিত। জামাকাপড়, ব্যাগ আর নানা জিনিসপত্রের ভিড়ে ভরাট হয়ে ওঠে। লেখক ও ডিজ়াইনার, প্রাক্তন অভিনেত্রী টুইঙ্কল খন্না মনে করিয়ে দিলেন, শয়নকক্ষই আসলে প্রত্যেকের আশ্রয়স্থল, তাই সামান্য কিছু পরিবর্তনেই সেই ঘরটিকে আরামদায়ক করে তোলা যায়। যেখানে গাড়িঘোড়ার শব্দ, বাড়ির কলরব, সবের থেকে নিজেকে খানিক ক্ষণের জন্য বিচ্ছিন্ন করে রাখা যায়।
সম্প্রতি নিজের ইউটিউব চ্যানেলে কয়েকটি টোটকা দিলেন অক্ষয় কুমারের স্ত্রী। নিজে তারকা বলে বিলাসবহুল গৃহসজ্জার কৌশলের কথা বলেননি। বরং সাধারণের কথা মাথায় রেখে সস্তায় ঘর সাজানোর পন্থার কথা জানালেন প্রাক্তন অভিনেত্রী। নিজের ভিডিয়োয় জিনিসপত্রের দামের উল্লেখও করেছেন তিনি। শোয়ার ঘর সাজানোর কয়েকটি কৌশল শিখে নিতে পারেন টুইঙ্কলের কাছ থেকে।
ভাল ঘুমের জন্য ভাল বিছানা
টুইঙ্কলের মতে, ভাল মানের একটি গদি কিনে নিলে সজ্জাও যেমন হবে, তেমনই ঘুমও ভাল হবে। এই বিনিয়োগ সব সময়ই লাভজনক। চাইলে স্টোরেজ যুক্ত খাট বা আরামদায়ক হেডবোর্ডও নেওয়া যেতে পারে, যা একসঙ্গে ঘুম আর বই পড়া, দুই ক্ষেত্রেই কাজে আসবে। তবে খরচ কমাতে চাইলে খাটের সঙ্গে আলাদা করে হেডবোর্ড কেনার প্রয়োজন নেই। পরে স্থানীয় কাঠের মিস্ত্রীর সাহায্যে তৈরি করে নিতে পারেন সেটি। প্লাইউডের উপর মোটা গদি বসিয়ে নিলেই কেতাদুরস্ত হেডবোর্ড পেয়ে যাবেন।
ছোট ছোট বদলেই বড় পরিবর্তন
খুব বেশি খরচ না করেও ঘর সাজানো সম্ভব। খাটের পাশে একটি টেবিল রাখুন, যেখানে জলের বোতল বা জগ বা দরকারি জিনিস হাতের কাছে পাওয়া যাবে। তার উপর রিমোট, চাবি ইত্যাদি রাখার জন্য ছোট একটি ট্রে রাখলে ভাল। তাতে, চট করে জিনিস হারিয়েও যাবে না, দেখতেও সুন্দর লাগবে। বিছানার নীচে ট্রে বা ঝুড়ি ব্যবহার করে জিনিস গুছিয়ে গুছিয়ে রাখলে জায়গা বাঁচবে। প্রত্যেকটির উপর লেবেল করে রাখলে দ্রুত জিনিস খুঁজে পাওয়া যাবে। চাইলে পুরনো কাঠের বাক্সও ব্যবহার করা যেতে পারে। তা ছাড়া পুরনো দিনের ট্রাঙ্ক বা সিন্দুক থাকলে সেগুলি ফেলে না দিয়ে ঘর সাজানোর কাজে ব্যবহার করতে পারেন। জিনিসপত্র ভরে রেখে সেগুলিকে ঘরেই সাজিয়ে রাখুন। এতে সাবেকি ছোঁয়া আসবে সজ্জায়।
দেওয়াল ও আসবাবের সঠিক ব্যবহার
দেওয়ালে বড় ছবি না টাঙিয়ে কয়েকটি ছোট ছোট ফ্রেম রাখুন। এতে খরচও কমবে। তা ছাড়া মাঝে মাঝে ফ্রেমগুলি নানা রকম ভাবে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে টাঙালে ঘরের সজ্জা পাল্টে ফেলা যাবে মুহূর্তে। অনেকেই জায়গা বাঁচাতে সব আসবাবপত্রকে দেওয়ালে ঠেসে রেখে দেন। সেটি না করে কিছু আসবাবকে দেওয়াল থেকে খানিক দূরে রাখুন। এর ফলে ঘরের মধ্যেই আরামদায়ক কোণ তৈরি হবে। সেটিকে নিজের পড়াশোনার জায়গা হিসেবে সাজিয়ে তুলতে পারেন। ছোট্ট একটি সোফা রাখুন দেওয়াল থেকে জায়গা ছেড়ে। আর ওই ফাঁকা জায়গায়, অর্থাৎ সোফার পিছনে রাখতে পারেন একটি গাছ।
ঘর সাজানোর টোটকা। ছবি: এআই সহায়তায় প্রণীত।
সবুজের ছোঁয়া
শোয়ার ঘরে কয়েকটি টবে গাছ রাখলে পরিবেশ প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। মানি প্ল্যান্ট, স্নেক প্ল্যান্ট বা স্পাইডার প্ল্যান্টের মতো গাছ সহজে বাঁচে এবং যত্নের প্রয়োজনও কম হয়। তাই এমন কয়েকটি গাছ ঘরে রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন অক্ষয়-পত্নী।
আয়না ও পর্দার ভূমিকা
ছোট ঘরকে প্রশস্ত দেখাতে আয়না ও পর্দার ভূমিকা অপরিসীম। বড় আয়না রাখলে আলোর প্রতিফলন ঘটে ঘরকে আকারে বড় মনে হতে পারে। তবে যাঁরা বাস্তুশাস্ত্র মেনে চলেন, তাঁদের জন্য টুইঙ্কলের পরামর্শ, খাটের প্রতিফলন যেন আয়নায় না পড়ে। ছোট জানলা হলেও মেঝে-ছোঁয়া পর্দা ঘরের সিলিংকে উঁচু দেখাতে পারে। দৃষ্টিবিভ্রম বটে, তবে দৃষ্টিনন্দন করে তুলতে পারে এই কৌশলগুলি। দিনের আলো প্রবেশের জন্য পাতলা পর্দা আর রাতে ব্যক্তিগত পরিসর বজায় রাখার জন্য মোটা পর্দা ব্যবহার করুন।
তার এবং আলোর বন্দোবস্ত
এলোমেলো তার বা এক্সটেনশন বোর্ড কখনও কখনও দৃষ্টিকটু হয়ে যায়। সেগুলিকে আড়াল করার জন্য গাছের ব্যবহার করা যায় অথবা দেওয়ালের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে ঢেকেও দেওয়া যায়। তার আগে অবশ্যই দেওয়ালের সঙ্গে সেঁটে দিতে হবে তারগুলিকে। বেডসাইড ল্যাম্প, ঝোলানো গাছ বা হালকা আলোর ব্যবহার ঘরকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলবে।
রঙের নির্বাচন
দেওয়ালে চড়া রং না ঢেলে হালকা রং ভাল মানায়। যেমন অফ-হোয়াইট বা ডিমের খোলার মতো সাদা রং। খুব বেশি উজ্জ্বল সাদা এড়িয়ে চলাই ভাল বলে মত টুইঙ্কলের। হালকা রংই ঘরকে আরামদায়ক করে তোলে।