দেখলেই বোঝা যায় সাজগোজ করতে ভালবাসেন। কিন্তু জানার ছিল যিনি রাঁধেন, তিনি কি চুলও বাঁধেন! এক্ষেত্রে অবশ্য প্রশ্নটি বদলাতে হবে। যিনি সাজেন, তিনি কি নিজে হাতে ঘরও সাজান?
টলিউডের তারকা অভিনেত্রী রুক্মিনী মৈত্র। তার উপর মুম্বইয়েও কাজ করেন। আবার তাঁকে নজর কাড়তে দেখা যায় অনন্ত অম্বানীর বিয়ের রিসেপশনেও। কিন্তু দিনের শেষে তিনি যে শান্তির আশ্রয়ে ফেরেন, সেই জায়গাটি কীরকম? দুর্গাপুজোয় আর পাঁচটি বাঙালি বাড়ির মতো সে বাড়ির কোনও ভোল বদল হয় কি? প্রশ্ন করা গেল স্বয়ং নায়িকাকেই?
পুজোর সময় আলাদা করে ঘর সাজান?
রুক্মিনী: হ্যাঁ, খুবই সাজাই। আমি ঘর সাজাতে ভালবাসি। তবে দুর্গাপুজো, লক্ষ্মীপুজো বা এই যে গণেশপুজো হয়ে গেল, সেই সময় আমি ফুল দিয়ে ঘর সাজাই। পদ্মফুল আমার প্রিয়, লিলিও খুব ভাল লাগে। এই সময় আমার বাড়িতে এলে দেখবে, তামা বা পিতলের পাত্রে জল দিয়ে তাতে আমার প্রিয় ফুল দিয়ে সাজানো আছে। কিংবা দরজার বাইরে ফুল, ছোট ছোট পিতলের ঘণ্টা দিয়ে কোনও ডেকরেশন করা আছে।
শুধুই ফুল! তারকারা তাঁদের ঘর সাজানোর জন্য অনেক রকম খরচ করেন শুনেছি...
রুক্মিনী: কখনও সখনও যে খরচ করি না, তা নয়। কিন্তু আমার বাড়িতে কোনও না কোনও কোণে ফুল থাকেই। কারণ, আমার মনে হয়, ফুল দেখলেই মন ভাল হয়ে যায়। ফুলের গন্ধ চারপাশে একটা ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করে। একটা সুখী ভাব আনে। আর বাড়ি তো মন-মেজাজ ভাল রাখারই আশ্রয়, তাই না?
একেবারেই। ছোটবেলায় কখনও পুজোর আগে মায়ের সঙ্গে হাতে হাতে ঘর গুছিয়েছেন?
রুক্মিনী: বহু বার। সত্যি বলতে কি, শুধু ছোটবেলায় কেন, বড় হয়েও মাকে ঘর সাজানোর কাজে সাহায্য করেছি। আসলে আমার মা পেশাগত ভাবে অন্দরসজ্জার কাজ করেছেন দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে। ওঁর নিজের ইন্টেরিয়র ডেকরেশনের ফার্ম ছিল। আমার জীবনে ঘর সাজানো মানে শুধু কয়েকটা জিনিস এ দিক ও দিক রেখে দেওয়া নয়। মায়ের দৌলতে আমি ঘরের স্থাপত্যের গুরুত্বও বুঝি। জানি, কোন রং কোথায় ভাল লাগে। এমনকি, বাস্তুও বুঝি।
তা হলে দেব নিশ্চয়ই ঘর সাজানোর ব্যাপারে আপনারই পরামর্শ মেনে চলেন?
রুক্মিনী: দেব আমার থেকেও বেশি পরামর্শ নেয় আমার মায়ের। দেবের ফ্ল্যাটের অনেক জায়গাই আমার মায়ের পরামর্শ মেনে সাজানো।
আপনার নিজের বাড়িও কি মায়েরই সাজিয়ে দেওয়া? নাকি দেবের পরামর্শ নিয়েছিলেন?
রুক্মিনী: আমি মাস তিনেক হল নিজের বাড়িতে থাকছি। তার আগে মায়ের সঙ্গে থাকতাম। আসলে একা ঘুমোতে পারি না। অন্ধকারে ভয় পাই। কিন্তু মাকে তো সব সময় সঙ্গে নিয়ে যেতে পারি না। তাই গত তিন মাস ধরে নিজের এই দুর্বলতা কাটানোর চেষ্টা করছি। মুম্বইয়ের ফ্ল্যাটটাকে সাজিয়েছি নিজের মতো করে। ওখানে একটা সুন্দর ঠাকুরঘর করেছি। সেখানে আমার রাধাকৃষ্ণ রাখা আছে। ওই বাড়িটা সাজানোর ব্যাপারে অবশ্য দেবের পরামর্শ নিইনি।
দেবের সৌন্দর্যবোধে কি ভরসা নেই? ঘর সাজানোর ব্যাপারে ওকে ১০-এ কত নম্বর দেবেন?
রুক্মিনী: দেবের সৌন্দর্যবোধ অনেকটা আমারই মতো। তাই ভরসা নেই, এটা বলবই না। ঘর সাজিয়ে গুছিয়ে রাখার ব্যাপারে আমাদের দু’জনেরই মতামত মেলে। আমরা দু’জনেই ‘লেস ইজ় মোর’ নীতিতে বিশ্বাসী। অর্থাৎ অনেক রকম জিনিস দিয়ে ঘরকে ভারী করা নয়। একটা সুন্দর টেবিল ল্যাম্প বা দেওয়ালে সামান্য লাল রং থাকলেও ঘরের মেজাজ বদলে দেওয়া যায়। এ ব্যাপারে আমাদের দু’জনেরই পছন্দ এক রকম। তাই আমি জানি, আমি যেটা পছন্দ করব, সেটা ওর অপছন্দ হবে না। ঘর সাজানোর ব্যাপারে আমি ওকে ১০-এ ৮ দেব।
সে তো অনেক! আর নিজেকে?
রুক্মিনী: নিজেকে ১০-এ ৯ (হাসি)।
যেহেতু অন্দরসাজ নিয়ে কথা হচ্ছে, তাই আরও একটা প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করছে।
রুক্মিনী: বলো।
আপনি আর দেব যে বাড়িতে সংসার পাতবেন, তার সাজ কেমন হবে? ভেবেছেন নিশ্চয়ই কখনও...
রুক্মিনী: (শব্দ করে হাসি) একেবারেই ভাবিনি। কবে কি হবে, তা নিয়ে এখন ভাবার সময় নেই।
প্রশ্নটা তবে একটু অন্য ভাবে করা যাক, কোনও দম্পতি নতুন বাড়িতে সংসার পাতলে, সেই বাড়ির কোন জায়গাটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে সাজানো উচিত?
রুক্মিনী: আমি মনে করি, একটা বাড়িতে যখন দু’জন বা তার বেশি মানুষ থাকেন, তখন তাঁরা যত ব্যস্তই থাকুন, দিনে একটা সময়ে অন্তত তাঁদের মুখোমুখি কথা বলার সময় হওয়া উচিত। আমার মতে, যে কোনও বাড়ির খাওয়ার ঘর অথবা বসার ঘর হল সে রকম জায়গা, যেখানে বাড়ির সদস্যদের দেখা হয়। কেউ খেতে খেতে সারা দিনের গল্প করেন। কেউ বা দিনের শেষে এসে জড়ো হন বসার ঘরে। তাই যে কোনও সংসারের যে বন্ডিং বা বাঁধন, সেটা শক্ত করতে হলে এই দু’টি জায়গাকে সুন্দর করে সাজানো উচিত। যেখানে দিনের শেষে ফিরে আসতে ইচ্ছে করবে। যেখানে বসলে মন ভাল হয়ে যাবে।
আপনার নিজের বাড়ির মন ভাল করার জায়গা কোনটা?
রুক্মিনী: শোয়ার ঘর। বিছানা। সারা দিনের ছুটোছুটির পরে ওখানে ঝাঁপিয়ে পড়লে তবে আরাম। যখন সেলিমপুরে থাকতাম, তখন অবশ্য আমার প্রিয় জায়গা ছিল আমাদের লাইব্রেরি। কিন্তু এখন বই পড়তে হলেও বিছানাতেই শুয়ে পড়ি।
কখনও শুধু ঘর সাজানোর জিনিস কিনতে বেরিয়ে প্রচুর খরচ করেছেন?
রুক্মিনী: বহু বার। একটা সময়ে প্রায়ই যেতাম। এখনও মাঝেসাঝে যাই। তবে আমি ও ভাবে দাম দেখে জিনিস কিনি না। আর কোনও জিনিস যদি পছন্দ হয়ে যায়, তখন দামের কথা ভাবি না। পছন্দ হলে সেটা আমার চাই-ই। তার জন্য যদি অপেক্ষা করতে হয়, তা-ও করব।
সবচেয়ে বেশি কত দিন অপেক্ষা করেছেন?
রুক্মিনী: এক বার দুবাইয়ে গিয়ে একটা প্রদর্শনীতে একটা দারুণ আয়না পছন্দ হয়েছিল। কিনতে চাইলাম যখন, প্রদর্শনী কর্তৃপক্ষ বলল, ওটা ইটালির জিনিস। এর পরে লন্ডনে প্রদর্শনী হবে। আরও কয়েকটা দেশে যাবে। তার পরে ওটা হাতে পেতে পারেন। আমি ওই আয়নার জন্য এক বছরেরও বেশি অপেক্ষা করেছিলাম। এখনও সেটা আমার দক্ষিণ কলকাতার বাড়িতে সাজানো আছে।
দেব কি কখনও ঘর সাজানোর জিনিস উপহার দিয়েছে, যেটা তোমার খুব প্রিয়?
রুক্মিনী: দেব আমায় যা দিয়েছে, সেটা যে কোনও সুন্দর বাড়ির জন্য সবচেয়ে বেশি জরুরি।
তাই! সেটা কী?
রুক্মিনী: শান্তি। মানসিক শান্তি।
ওহ্! তা হলে তো তার চেয়ে বড় উপহার হতেই পারে না!
রুক্মিনী: ঠিক। ওটাই সবচেয়ে বড় উপহার। আর ওটাই যে কোনও বাড়িতে সবচেয়ে দরকারি।