হিংয়ের কচুরি কিংবা হিং ফোড়ন দেওয়া তরকারি ভোজন রসিক বাঙালির কাছে এক লোভনীয় পদ। রবিবারের সকালে হিংয়ের কচুরি দিয়ে ঝাল ঝাল আলুর তরকারি ছাড়া বাঙালির মনই ভরে না। ডাল হোক বা ঝোল, এক চিমটে হিং পড়লে তার স্বাদই বদলে যায়। হিং কেবল রান্নায় স্বাদ বাড়ায় তাই নয়, শরীরের জন্যও উপকারী। হেঁশেলের এই মশলায় ভরপুর মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট থাকে। পাশাপাশি, এতে রয়েছে ফাইবার, ক্যালশিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম এবং কার্বোহাইড্রেট। হিংয়ের জল আদতে সুস্বাস্থ্যেরই দাওয়াই। কিন্তু বাজার থেকে যে হিং কিনে আনছেন, তা খাঁটি তো?
তেল, মশলা থেকে দুগ্ধজাত পণ্য— ভেজাল এখন সবেতেই। তাজা দেখে সবুজ সব্জি, রঙিন ফল কিনে আনলেন, কিন্তু বুঝতেও পারলেন না টাটকা দেখাতে তাতে কতটা ভেজাল রঙের প্রলেপ রয়েছে। আটা-ময়দা থেকে চা-কফি, সব্জি থেকে দুধ, এমনকি মশলাপাতি— প্রায় সবেতেই ভেজালের রমরমা। কতটুকু খাঁটি খাবার পেটে যাচ্ছে, আর কতটা ভেজাল ঢুকে শরীরের দফারফা করছে, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
হিংয়ে কী কী ভেজাল মিশছে?
খাদ্যের গুণমান নিয়ন্ত্রক সংস্থা (এফএসএসএআই) জানিয়েছে, দোকান থেকে যে হিং কেনা হচ্ছে, তার সবটাই খাঁটি নয়। এতে মিশছে সিন্থেটিক ডাই ও লেড ক্রোমেট। এই দুই রাসায়নিকই ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। পাশাপাশি লেড দীর্ঘ সময় ধরে শরীরে ঢুকলে লিভার সিরোসিস, ক্রনিক কিডনির রোগও হতে পারে।
আরও পড়ুন:
তা ছাড়া চকের গুঁড়ো, জ়িপসাম, স্টার্চও মেশানো হচ্ছে হিঙে। চকের গুঁড়ো মিশলে হিঙের গন্ধ ও স্বাদ দুইই বদলে যেতে পারে। স্টার্চ হিঙের পুষ্টিগুণ নষ্ট করে দেয়। রাসায়নিক মেশানো হিং দেখতে খাঁটি হিঙের মতো লাগলেও তা আদলে শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এর থেকে খাদ্যনালির সংক্রমণও ঘটতে পারে। এই ধরনের হিং মেশানো খাবার খেলে তা পেটে গিয়ে বিষক্রিয়ার কারণ হয়ে উঠতে পারে।
খাঁটি হিং চিনবেন কী ভাবে?
আকার চিনুন
খাঁটি হিং ঝুরঝুরে হয়। জলে সহজেই দ্রবীভূত হতে পারে। হিং কিনে এনে তা হাতের তালুতে বা আঙুলে ঘষে দেখুন। যদি থকথকে ঘন মনে হয়, তা হলে বুঝতে হবে তাতে ভেজাল মেশানো আছে।
গন্ধ পরীক্ষা
হিংয়ের পরিচয় তার গন্ধে। খাবারে যোগ করলে তার গন্ধ টের পাওয়া যায়। হিং নিয়ে সন্দেহ থাকলে প্রথমেই গন্ধ শুঁকে নিন। খাঁটি হিঙের গন্ধ ঠিক বোঝ যাবে। নকল হিঙের গন্ধই থাকবে না।
রং দেখুন
খাঁটি হিংয়ের রং হয় হালকা হলুদ বা বাদামি। এর সঙ্গে যদি স্টার্চ মিশে থাকে তা হলে রং বদলে সাদা বা ধূসর রঙের হবে।
গরমে জলে ফেলে দেখুন
উষ্ণ জলে খানিকটা হিং ফেলে দেখুন। খাঁটি হিং সহজেই মিশে যাবে। ঘন মিশ্রণ তৈরি করবে। কিন্তু ভেজাল থাকলে তা দলা দলা মাটির মতো নীচে জমে থাকবে।
হিট টেস্ট
প্যানে সামান্য হিং গরম করুন। খাঁটি হিং যখন গলতে থাকবে তখন সুন্দর গন্ধ বার হবে। হালকা ধোঁয়াও বেরোবে। কিন্তু ভেজাল হিঙে তা হবে না। তেমন কোনও গন্ধও পাওয়া যাবে না।