Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Union Budget 2023

করের দাওয়াই কি সারাতে পারবে গেমের অসুখ?

গত বুধবার কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ হওয়ার পরে অনেকেই এ ব্যাপারে আশার আলো দেখছেন। সরাসরি করের আওতায় ফেলে এই ধরনের গেমের ব্যবসাকে বাঁধার চেষ্টা হয়েছে।

A Photograph representing 2 people playing video games

সরাসরি করের আওতায় ফেলে এই ধরনের গেমের ব্যবসাকে বাঁধার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রতীকী ছবি।

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৭:১৬
Share: Save:

দশম শ্রেণির এক ছাত্র পরীক্ষার খাতায় লিখেছিল, ‘ব্লু হোয়েলের ৪৯তম ধাপে পৌঁছে গিয়েছি। ওরা আমাকে আত্মহত্যা করতে বলেছে। না করলে বাবা-মাকে খুন করার হুমকি দিচ্ছে। একেবারে ফেঁসে গিয়েছি।’ খাতা দেখার দায়িত্বে থাকা শিক্ষিকার চেষ্টায় সে যাত্রা বেঁচে যায় ছেলেটি। দ্রুত তার পরিবার, স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং শেষে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ওই শিক্ষিকা। দীর্ঘদিন মোবাইলের ব্যবহার বন্ধ রেখে অবশেষে স্বাভাবিক জীবনে ফেরে সেই ছেলে।

কিন্তু, ওই ঘটনার মতো ভাল পরিণতি বহু ক্ষেত্রেই হয় না বলে দাবি ভুক্তভোগীদের। অভিযোগ, গেমের ফাঁদে পড়ে অনেক ছেলেমেয়েরই জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছে। নেশার ফাঁদে আটকে আত্মনির্যাতনমূলক ‘টাস্ক’ করিয়ে নেওয়া হচ্ছে। গেমের নির্দেশ মতো কেউ হাত কাটছে, কেউ পিন বা সুচ ফুটিয়ে নিজের শরীরে ছবি আঁকছে। গেমে জিততে শর্ত অনুযায়ী আত্মহত্যাও করছে কেউ কেউ। এমন টাস্কের ভিডিয়ো বিক্রি হচ্ছে ‘ডার্ক ওয়েব’-এ। অথবা গেমের পেজে সরাসরি সম্প্রচার করে টাকা কামানো হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে না আছে কড়া আইন, না রয়েছে নজরদারির ব্যবস্থা। উল্টে ‘নিজ দায়িত্বে খেলুন’ বার্তা দেওয়া বিশিষ্টজনদের গেম সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন বেড়েই চলেছে। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে, গেমের খপ্পর থেকে নতুন প্রজন্মকে বাঁচানো যায় কী ভাবে?

গত বুধবার কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ হওয়ার পরে অনেকেই এ ব্যাপারে আশার আলো দেখছেন। সরাসরি করের আওতায় ফেলে এই ধরনের গেমের ব্যবসাকে বাঁধার চেষ্টা হয়েছে। বাজেটে অনলাইন গেমের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, গেম খেলে জেতা টাকা তোলা বা অর্থবর্ষের শেষে সার্বিক লাভের উপরে উৎসমূলে কর (টিডিএস) প্রযোজ্য হবে। আগে অনলাইন গেমে ১০ হাজার টাকা জিতলে কর দিতে হত। এ বার থেকে তুলে দেওয়া হচ্ছে সেই সীমাও। অর্থাৎ, নাম লেখানোর খরচ (এন্ট্রি ফি) বাদ দিয়ে যে কোনও অঙ্কের টাকা জিতলেই দিতে হবে প্রায় ৩০ শতাংশ কর। সেই সঙ্গে জিএসটি-ও বাড়ানো হয়েছে। ‘অল ইন্ডিয়া গেমিং ফেডারেশন’-এর তরফে রোল্যান্ড ল্যান্ডার্স বলেন, ‘‘এই পদক্ষেপ অনলাইন গেম আর জুয়ার মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য তৈরি করে দেবে।’’

কিন্তু এই ঘোষণার পরেও আশঙ্কা যাচ্ছে না সাইবার গবেষকদের একাংশের। তাঁদের দাবি, প্রায়ই শোনা যায়, টাকা দিয়ে গেম খেলার জন্য বহু অল্পবয়সি ছেলেমেয়ে পরিবারকে চাপ দিচ্ছে। এমনকি, বাবা-মায়ের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে গেম খেলার খবরও প্রায়ই প্রকাশ্যে আসছে। ধরা পড়লে অনুশোচনা তো দূর, বহু ক্ষেত্রেই আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে তারা। কোনও ধরনের কর দিতে হয় না বলে যেখানে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সেখানে কর দিয়ে বৈধ ভাবে গেমিং ব্যবসাকে সুযোগ করে দিলে নতুন প্রজন্ম আরও বেশি করে সে দিকে ঝুঁকতে পারে। সাইবার গবেষক তথা ‘ইন্ডিয়ান স্কুল অব অ্যান্টি হ্যাকিং’-এর অধিকর্তা সন্দীপ সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘নতুন কর বসানোর সঙ্গে গেম ঘিরে অপ্রীতিকর ঘটনা বন্ধ করার তেমন কোনও সম্পর্ক নেই। এতে কিছুই বদলাবে না। বরং বেশ কিছু ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। যিনি টাকা লাগিয়ে গেম খেলছেন, তিনি ভাল ল্যাপটপ ব্যবহার করছেন এই কাজে। ভাল ইন্টারনেট পরিষেবাও নিতে হচ্ছে। সেগুলির কী হবে? সব চেয়ে বড় প্রশ্ন, এন্ট্রি ফি বাদ দিয়ে আয় হওয়া টাকার উপরে কর বসানোর কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু, খেলার মাঝেই ছুরি, বোমা, বন্দুক বা গাড়ির মতো নানা রকম ভার্চুয়াল উপকরণ কিনতে হয় টাকা দিয়ে। সেই খরচটাই বা কর বসানোর সময়ে বাদ দেওয়া হবে কী করে?’’ এমন কোনও প্রশ্নেরই উত্তর মিলছে না।

আর এক সাইবার গবেষকের কথায়, ‘‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, গেমের নেশা প্রভাব ফেলে ব্যবহারকারীর আচরণ, মনঃসংযোগ ও প্রতিদিনের কাজকর্মের উপরে। এই পরিবর্তন আদতে ‘গেমিং ডিজ়অর্ডার’। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্লাসিফিকেশন অব ডিজ়িজ়েস’-এর (আইসিডি) একাদশ সংস্করণে উল্লেখ করেছে, প্রাকৃতিক পরিবর্তন, পরিবর্তিত খাদ্যাভ্যাস ও মানুষের পরিবর্তিত অভ্যাসের ফলে নতুন নতুন রোগের উৎপত্তি হচ্ছে। ‘গেমিং ডিজ়অর্ডার’ তেমনই এক অসুস্থতা।’’

করের ওষুধে সেই অসুস্থতা কাটবে কি? উত্তর মিলবে কয়েক মাসেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE