Advertisement
E-Paper

কলকাতা বিক্রির দলিল থেকে অসমের উত্তরীয়, বাউল গান থেকে গাছপালা, শুরু হল ‘আমি আর্টস’ উৎসব

৬ষ্ঠ ‘আমি আর্ট ফেস্টিভ্যাল’ শুরু হল ২১ নভেম্বর, শুক্রবার থেকে। এক মাসব্যাপী এই অনুষ্ঠানে প্রদর্শনী, আলোচনা, নাটক, নৃত্য পরিবেশনা, গান-বাজনা, ছবি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে। উদ্বোধনে ৪৩টিরও বেশি সংগ্রহালয়কে একত্রিত করা হয়েছে ভারতীয় সংগ্রহালয়ে।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২৫ ২০:২৩
৬ষ্ঠ ‘আমি আর্ট ফেস্টিভ্যাল’-এর প্রদর্শনী।

৬ষ্ঠ ‘আমি আর্ট ফেস্টিভ্যাল’-এর প্রদর্শনী। — নিজস্ব চিত্র।

ইতিহাসের গন্ধে ভরা মস্ত সাদা হর্ম্য। উঁচু ছাদ, মোটা থাম। কত শত গল্প-কাহিনি ভরা ভারতীয় সংগ্রহালয়ের দেওয়ালগুলিতে। আর ইতিহাসের ভিড়েই জায়গা করে নিল বাংলা-সহ গোটা ভারতের সংস্কৃতি এবং শিল্প। কেবল ‘ভারত’ বললে কম বলা হয়, বরং গ্রামীণ ভারত। নদিয়া থেকে দিল্লি, অসম থেকে মুর্শিদাবাদ— দেশের নানা প্রান্তের একান্ত নিজের শিল্প, ঘরানা, গল্প, কথকতাকে তুলে এনে মেলে ধরা হল সংগ্রহালয়ে। গ্রামীণ শিল্পই ভারতীয় সংস্কৃতির অন্তরাত্মা। কিন্তু যে তীব্র গতিতে যুগ পাল্টে যাচ্ছে, তাতে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম সংস্কৃতি যেন হাত পিছলে বেরিয়ে যাচ্ছে। আর সেই সল রসের ধারাকে এক জায়গায় আনার চেষ্টা করল কলকাতা সেন্টার ফর ক্রিয়েটিভিটি (কেসিসি)। ৬ষ্ঠ ‘আমি আর্ট ফেস্টিভ্যাল’ শুরু হল ২১ নভেম্বর, শুক্রবার থেকে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ৪৩টিরও বেশি সংগ্রহালয়কে একত্রিত করা হয়েছে ভারতীয় সংগ্রহালয়ে। দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশনাল সেন্টার ফর দি আর্টস, ইউনিভার্সিটি অফ ওয়েস্টমিনস্টারের সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অফ ডেমোক্রেসির পাশাপাশি, সুন্দরবনের একাধিক সংগ্রহশালা, নদিয়ার সংগ্রহশালা, কৃষ্ণপুরের সেন্টার ফর ফোকলোর স্টাডিজ় অ্যান্ড রিসার্চ, বটানিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া— এমনই একাধিক সংগ্রহালয় থেকে আঞ্চলিক শিল্প, সমাজ, সংস্কৃতির নিদর্শন আনা হয়েছে। কলকাতা, সুতানুটি গ্রাম বিক্রির আসল দলিল থেকে শুরু করে শহুরে যানবাহনের প্রাচীন টিকিটের সম্ভার। কিতকিত, গুলি-ডান্ডার মতো পুরনো খেলাগুলির ইনস্টলেশন, তাঁত বোনার প্রাচীন যন্ত্র, অসমের উত্তরীয়, বিরল গাছগাছালি— ভারতের প্রায় ৬ লক্ষ গ্রামের নিজস্বতার কিছুটা ভারতীয় সংগ্রহালয়ের মস্ত হলঘরে আনার চেষ্টা করা হয়েছে। পাশাপাশি, ভার্চুয়াল মিউজ়িয়ামের ধারণা নিয়ে এসেছে দর্পণ মিউজ়িয়াম। একাধিক ব্যক্তিগত সংগ্রাহকও এই মঞ্চে স্থান পেয়েছেন। এশিয়াটিক সোসাইটির প্রাক্তন সাধারণ সভাপতি সত্যব্রত চক্রবর্তীর দুশ্চিন্তা, প্রযুক্তির জেরে প্রাচীন ঐতিহ্যকে সামলে রাখাটা আজকাল কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে একই সঙ্গে আশার কথা শুনিয়ে তিনি বলছেন, ‘‘কেবল শিল্প নয়, আমাদের গ্রামীণ শিল্পী, কারিগরদেরও রক্ষা করতে হবে। আর সেই কাজটিতে যদি এই প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগে, তার থেকে ভাল আর কী-ই বা হতে পারে! কিন্তু কোনও ভাবেই যেন ছাপিয়ে না যায় প্রযুক্তি। এই সংগ্রাম বড় কঠিন বটে, কিন্তু যদি আমরা সচেষ্ট থাকি, খানিকটা খানিকটা নিশ্চয়ই রক্ষা করতে পারব। কালের গতিতে, কালের চাহিদায় অল্পবিস্তর পরিবর্তন করেও রক্ষা করা যায়, তাতে কোনও ভুল নেই।’’

৪৩টিরও বেশি সংগ্রহালয়কে একত্রিত করা হয়েছে ভারতীয় সংগ্রহালয়ে।

৪৩টিরও বেশি সংগ্রহালয়কে একত্রিত করা হয়েছে ভারতীয় সংগ্রহালয়ে। — নিজস্ব চিত্র।

উদ্বোধন উপলক্ষে শুক্রবার উপস্থিত ছিলেন কলকাতা সেন্টার ফর ক্রিয়েটিভিটির চেয়ারপার্সন রিচা আগরওয়াল, ভারতীয় সংগ্রহালয়ের ডিরেক্টর অরিজিৎ দত্তচৌধুরী, পশ্চিমবঙ্গ সংগ্রহশালা সমিতির সভাপতি শচীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, ওড়িশি নৃত্যশিল্পী ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়, এশিয়াটিক সোসাইটির প্রাক্তন সাধারণ সভাপতি সত্যব্রত চক্রবর্তী, ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অফ টিচার’স ট্রেনিং, এডুকেশন, প্ল্যানিং অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের উপাচার্য সোমা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পদ্মশ্রী প্রাপ্ত সঙ্গীতশিল্পী পূর্ণদাস বাউল। এমন সংরক্ষণের প্রয়োজীয়তা যে অপরিসীম, তা স্বীকার করে বক্তব্য রাখলেন অতিথিরা। বাংলা গানের মাহাত্ম্যের কথা বলতে বলতেই গান গাইলেন পূর্ণদাস।

উদ্বোধন উপলক্ষে অনুষ্ঠান।

উদ্বোধন উপলক্ষে অনুষ্ঠান। — নিজস্ব চিত্র।

ঐতিহ্যের জয়গান গাওয়ার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে ডোনা বললেন, ‘‘নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের জানানোর, শেখানোর জন্য তো আমাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। যেমন বাইরের দেশে নিজেদের ঐতিহ্যকে, ইতিহাসকে আগলে রাখতে দেখি, ঠিক সে ভাবে আমাদেরও করতে হবে। উইম্বলডন এবং লর্ডসে গেলে দেখা যাবে কী সুন্দর করে নিজেদের র‌্যাকেট এবং ব্যাটগুলিকে সংরক্ষিত রেখেছে এবং দর্শকের সামনে মেলে ধরেছে তারা।’’

এক মাসব্যাপী এই অনুষ্ঠানে প্রদর্শনী, আলোচনা, নাটক, নৃত্য পরিবেশনা, গান-বাজনা, ছবি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে। ইএম বাইপাসের কাছে কেসিসি-র অঙ্গনের পাশাপাশি ভারতীয় সংগ্রহালয়, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, জিডি বিড়লা সভাঘর, জ্ঞান মঞ্চেও ‘আমি আর্ট ফেস্টিভ্যাল’ অনুষ্ঠিত হবে।

KCC Kolkata Center For Creativity museums
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy