Advertisement
E-Paper

কী ভাবে শিকার ধরছে মোমো? রেহাই কোন পথে?

‘মোমো চ্যালেঞ্জ সুইসাইড গেম’ এ বার ছড়িয়ে পড়ছে তুমুল জনপ্রিয় হোয়াটসঅ্যাপে। ফলে, আত্মহত্যার হাতছানির ফাঁদে পড়ার আশঙ্কা অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। শিশুদের অনলাইন গেম ‘মাইন ক্রাফট’-এও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই ‘মোমো’।

মোমো চ্যালেঞ্জ গেমেোর সেই লোগো। ছবি- সংগৃহীত।

মোমো চ্যালেঞ্জ গেমেোর সেই লোগো। ছবি- সংগৃহীত।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৮ ১৬:৪০
Share
Save

আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার আরও একটি প্রাণঘাতী গেম- ‘মোমো চ্যালেঞ্জ’ ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্ব জুড়ে। যার প্রথম শিকার হয়েছিলেন এক কিশোরী, আর্জেন্টিনায়। পশ্চিমবঙ্গও তার হাত থেকে রেহাই পায়নি। ইতিমধ্যেই জলপাইগুড়ি, কার্শিয়াং ও পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরে ওই প্রাণঘাতী গেমের খপ্পরে পড়েছেন তিন জন।

বাড়তি উদ্বেগের কারণ, ‘মোমো চ্যালেঞ্জ সুইসাইড গেম’ এ বার ছড়িয়ে পড়ছে তুমুল জনপ্রিয় হোয়াটসঅ্যাপে। ফলে, আত্মহত্যার হাতছানির ফাঁদে পড়ার আশঙ্কা অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। শিশুদের অনলাইন গেম ‘মাইন ক্রাফট’-এও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই ‘মোমো’।

এই পরিস্থিতিতে অনেকেই জানতে চাইছেন, কোথায় এই গেমের উৎপত্তি, তা কী ভাবে কোথায় কোথায় ছড়িয়ে পড়েছে, কী ভাবে তার হাত থেকে বাঁচানো যায় স্কুল, কলেজের ছাত্রছাত্রীদের? সেই সব প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজতে চেয়েছি আমরা। কথা বলেছি সাইবার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে।

‘মোমো’ কী জিনিস?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘মোমো’ একটি মেয়ের ছবি। গেমে ওই ছবিটিকেই ‘লোগো’ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। মেয়েটির দু’টি চোখ কোটর থেকে ঠেলে বেরিয়ে আসছে। তার পা দু’টি পাখির মতো। পায়ের আঙুল ও নখগুলি বড় বড়। মুখটা অসম্ভব রকমের চওড়া। মাথাটা লম্বা। চুলগুলি খুব কালো। দু’টি কানের পাশ দিয়ে তা অনেকটা পর্যন্ত নেমেছে। মাথার ওপরের দিকটা দেখলে মনে হবে, টাক আছে। তারই মাঝে কিছুটা জায়গা ছেড়ে ছেড়ে রয়েছে চুল। ‘মোমো’র এই ছবিটা এঁকেছিলেন এক জাপানি শিল্পী। মিদোরি হায়াশি।

আরও পড়ুন- মারণ গেম ‘মোমো’ এ বার দাসপুরে, বরাত জোরে ফিরল স্কুলপড়ুয়া​

আরও পড়ুন- ব্লু হোয়েলের পর নতুন মারণ-গেম মোমো, ছড়াচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপে, আত্মঘাতী কিশোরী

ওয়েবসাইট ‘দ্যসান.কো.ইউকে’ জানাচ্ছে, শিল্পী হায়াশি কোনও ভাবেই জড়িত নন এই আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়া ‘গেম’টির সঙ্গে। ২০১৬ সালে টোকিওর ‘ভ্যানিলা গ্যালারি’তে একটি শিল্প প্রদর্শনীর জন্যই ওই ‘মোমো’র ছবি এঁকেছিলেন হায়াশি।

আরও পড়ুন: মোমো খেলার টোপ ছাত্রকে, এ বার তপনে​

সল্টলেকের ‘ইন্ডিয়ান স্কুল অফ অ্যান্টি হ্যাকিং’-এর অধিকর্তা সন্দীপ সেনগুপ্ত বলছেন, ‘‘ওই রকম অদ্ভুত লোগো দিয়েই অল্পবয়সীদের টানছে গেম অর্গানাইজাররা। ওরা নজর রাখছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। দেখছে, কারা কারা লিখছেন, তাঁদের মন ভাল নেই। আত্মহত্যা করতে চাইছে। ওরা বেছে বেছে তাদেরই টার্গেট করছে।’’

কী ভাবে এগোচ্ছে হানাদাররা?

সন্দীপ জানাচ্ছেন, হোয়াটসঅ্যাপে সেই মোবাইল নম্বরগুলি ওরা খুঁজে বের করছে। তার পর সেই মোবাইল ব্যবহারকারীদের ভয় দেখাচ্ছে আর তাদের মোবাইলে পাঠাচ্ছে কোনও মেসেজ বা লিঙ্ক। বলছে, ‘‘আপনাদের সব কিছু আমরা জেনে ফেলেছি। ওই লিঙ্ক না ক্লিক করলে বা মেসেজ না খুললে আপনাদের সব কিছু ফাঁস করে দেব।’’ সেই ভয়ে অনেকেই সেই লিঙ্কে ক্লিক করছে আর তাতেই পড়ে যাচ্ছে ওই মারণ গেমের ফাঁদে।

কী বলছেন সাইবার বিশেষজ্ঞ? দেখুন ভিডিয়ো

কেমন সেই ফাঁদ?

সন্দীপের কথায়, ‘‘ওরা ফাঁদে পড়া সেই মোবাইল ব্যবহারকারীর মোবাইলে স্পাইওয়্যার ঢুকিয়ে দিচ্ছে। তার ফলে, বহু দূর থেকেও সেই মোবাইলের ক্যামেরা ও মাইক্রোফোনের ওপর ওরা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফেলছে। শিকারদের বাড়ির অনেক গোপন ছবি আর তাঁদের বাড়ির লোকজনের গোপন কথাবার্তা রেকর্ড করে ফেলছে ওরা। আর তার পর সেই সব দিয়েই ওরা ব্ল্যাকমেল করছে।’’

জলপাইগুড়ি, কার্শিয়াঙের পর দাসপুর। অনলাইন গেম ‘মোমো’র কবলে পড়েও ফিরে এল দাসপুরের তেঁতুলতলার বাসিন্দা স্থানীয় চাঁইপাট স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র। সম্প্রতি তার মোবাইলে মারণ অনলাইন গেম ‘মোমো’র লিঙ্ক আসে বলে অভিযোগ। সেই লিঙ্ক পেয়ে গেম ডাউনলোড করে খেলতেও শুরু করে সে।

ছাত্রের পরিবার সূত্রে খবর, প্রথমে আসে লুডো গেম। সেই পর্ব শেষও করে ফেলে সে। এর পর ফেসবুকে এক রহস্যময় স্টেটাস দেওয়ার নির্দেশিকা আসে ওই গেমের মাধ্যমে। তাতেই সন্দেহ হয় ওই ছাত্রের। তার পরেই গেম ডিলিট করে দেয়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, গেম ডিলিট করার পর ফোন রিস্টার্ট করা হলে ফের আপনা আপনি ফের ওই গেম ইনস্টল হয়ে যায়।

‘ব্লু হোয়েল গেম’-এর কথা মনে আছে? যা খেলতে খেলতে ভারত-সহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে তরুণ প্রজন্মের আত্মহত্যার হিড়িক পড়ে গিয়েছিল। ওই প্রাণঘাতী ‘গেম’ দাবানলের বেগে প্রায় গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল ‘ডার্ক ওয়েব’-এর মাধ্যমে।

সেই ‘ব্লু হোয়েল’-এর জায়গা নিয়েছে এখন ‘মোমো চ্যালেঞ্জ সুইসাইড গেম’।

ব্রিটেনের একটি ওয়েবসাইট ‘দ্যসান.কো.ইউকে’ জানাচ্ছে, সেই প্রাণঘাতী ‘গেম’ ঝড়ের গতিতে ছড়িয়ে পড়েছে মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা, আমেরিকা, ফ্রান্স ও জার্মানিতে। নেপালেও। ব্রিটেনে এখনও ছড়ায়নি ওই ‘গেম’। হোয়াটসঅ্যাপে ‘গেম’টা চলছে বলে দ্রুত তা ভারত-সহ গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

কোন ফোন নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে পড়ছে এই ‘গেম’?

যতটুকু জানা গিয়েছে, হোয়াটসঅ্যাপের এই ‘গেম’টি জাপানের আইএসডি কোড-সহ ৩টি ফোন নম্বরের। আর কলম্বিয়ার আইএসডি কোড-সহ ২টি এবং মেক্সিকোর আইএসডি কোড-সহ আরও একটি নম্বরের সঙ্গে সংযুক্ত।

কোথায় শুরু এই ‘গেম’-এর?

মেক্সিকোর একটি পুলিশ ইউনিট যারা অনলাইন অপরাধ নিয়ে কাজ করে, তারা বলছে, ‘‘এটা শুরু হয় ফেসবুকে। কেউ কেউ একে অন্যকে প্রলুব্ধ করে একটি অপরিচিত ফোন নম্বরে ‘কল’ করার জন্য। তবে সেখানে একটি সতর্কতা দেওয়া ছিল।’’

কেন ওই ‘গেম’ অত্যন্ত বিপজ্জনক?

মেক্সিকোর পুলিশ জানাচ্ছে, অন্তত ৫টি কারণে ‘মোমো’-কে এড়িয়ে চলা উচিত। উক্ষা করা উচিত বলে মনে করে তারা।

১) ব্যক্তিগত তথ্য চুরি হতে পারে।

২) হিংসা, এমনকি আত্মহত্যায় প্রলুব্ধ করে।

৩) ব্যবহারকারী নানা রকমের হয়রানির শিকার হতে পারেন।

৪) ব্যবহারকারীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা লোপাট হয়ে যেতে পারে, ‘হ্যাকিং’-এর দৌলতে।

৫) ব্যবহারকারী মানসিক ও শারীরিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন। তিনি উদ্বেগ, বিষণ্ণতা ও অনিদ্রাজনিত রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।

কী ভাবে এই মারণ গেমের হাত থেকে রেহাই মিলতে পারে?

সাইবার বিশেষজ্ঞ (এথিক্যাল হ্যাকার) সন্দীপ জানাচ্ছেন, হানাদারদের পাঠানো লিঙ্কে না ক্লিক করলে বা তাদের পাঠানো মেসেজ না খুললে ওই মারণ গেমের ফাঁদে পড়ার কোনও সম্ভাবনাই নেই। ওরা (হানাদাররা) ফাঁদে ফেলার জন্য বাড়ির সব গোপন কথা ফাঁস করে দেওয়ার ভয় দেখাচ্ছে বটে, কিন্তু তার কোনও সারবত্তা নেই। কারণ, ওদের পাঠানো লিঙ্কে ক্লিক করলেই কেউ ফাঁদে পড়তে পারে ওই মারণ গেমের। তখন কিন্তু সত্যি-সত্যিই যিনি ফাঁদে পড়লেন, তাঁর বাড়ির গোপন খবরাখবর জেনে নিতে পারে, তার বাড়ির গোপন ছবি তুলে ফেলতে পারে আর বাড়ির লোকজনের গোপন কথাবার্তা রেকর্ড করে ফেলতে পারে হ্যাকাররা।

সন্দীপের পরামর্শ, ‘‘ওই বিপদের হাত থেকে বাঁচতে স্কুল ও কলেজ স্তরে ছাত্রছাত্রীদের সচেতন করতে হবে শিক্ষকদের। অভিভাবকদেরও দায়িত্ব নিতে হবে।’’

MOMO Game MOMO Challenge Online Suicide Game Sandip Sengupta Cyber Expert মোমো চ্যালেঞ্জ Tech

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে আপনার সাবস্ক্রিপশন আপনাআপনি রিনিউ হয়ে যাবে

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।