Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Parkinson

পার্কিনসনসকেও হারিয়ে দেওয়া সম্ভব 

হাতের লেখা ছোট হতে হতে প্রায় বিন্দুর মতো হয়ে যায়। কমে যায় হাঁটার গতি। চোখের সামনে হঠাৎ ভেসে ওঠে নানা রকম ছবি। জীবনের আনন্দও কমতে শুরু করে। এ সবই পার্কিনসনস অসুখের লক্ষণ।

পারকিনসন চিকিৎসার জন্য নিকটজনের সহযোগিতা খুব দরকারি।

পারকিনসন চিকিৎসার জন্য নিকটজনের সহযোগিতা খুব দরকারি।

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২১ ২০:৫১
Share: Save:

দিব্যি সুস্থ ছিলেন। কিন্তু হঠাৎই দেখা গেল, হাত কাঁপছে। প্রথমে অল্পস্বল্প। তারপর আস্তে আস্তে সেই হাতকাঁপার পরিমাণ বাড়তে লাগল। অনেকেই প্রথম দিকে এই সমস্যাকে খুব একটা গুরুত্ব দেন না। কিন্তু যত দিন যায়, এই সমস্যার পরিমাণ বাড়তে থাকে। ক্রমে হাতের লেখা ছোট হতে হতে প্রায় বিন্দুর মতো হয়ে যায়। কমে যায় হাঁটার গতি। চোখের সামনে হঠাৎ ভেসে ওঠে নানা রকম ছবি। জীবনের আনন্দও কমতে শুরু করে। এ সবই পার্কিনসনস অসুখের লক্ষণ। এই রোগে আক্রান্তদের অনেকেই ক্রমে স্বাভাবিক কাজ করার শক্তিটুকুও হারিয়ে ফেলেন। পোশাক পরিবর্তন থেকে বাথরুম যাওয়া— সব কিছুর জন্যই অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন তাঁরা। এমনই জটিল স্নায়ুর অসুখ এই পার্কিনসনস।

কারা বেশি আক্রান্ত?

মূলত বেশি বয়সিরাই এই অসুখে আক্রান্ত হন। মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের পার্কিনসনসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও কিছুটা বেশি। এমনটাই বলছেন স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অংশু সেন। তবে এই অসুখের পরিমাণ বাড়ছে বলেও জানাচ্ছেন তিনি। ঠিক কী কারণে মানুষ এই অসুখে আক্রান্ত হন, তার সদুত্তর চিকিৎসাবিজ্ঞান এখনও পুরোপুরি দিতে পারেনি। তবে একটা বিষয়ে চিকিৎসকরা নিশ্চিত। বংশে এই রোগের ইতিহাস থাকলে, পরের প্রজন্মের মধ্যে পার্কিনসনসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বহু গুণ বেড়ে যায়। অংশু সেনের মতে, পার্ক-১ ও পার্ক–২ জিন থাকলে মস্তিষ্কের ক্ষয়জনিত এই অসুখের ঝুঁকি অনেক বাড়ে।

চিকিৎসা শুরুর আগে

পার্কিসনস মানেই, জীবনের শেষ নয়। সময়মতো চিকিৎসা শুরু করা গেলে, এই অসুখকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব বলেও মত চিকিৎসকদের। তবে চিকিৎসার শুরুতেই ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে রোগী ও তাঁর বাড়ির সবাইকে অবহিত করা দরকার বলে মত অংশু সেনের। তাঁর মতে, শুরুতে রোগ ধরা পড়লে নির্দিষ্ট ওষুধ আর কিছু থেরাপির সাহায্যে রোগীকে স্বাভাবিক রাখা যায়। কিন্তু পার্কিনসনস প্লাস নামক বাড়াবাড়ি রকমের সমস্যায় ওষুধ বিশেষ কাজে দেয় না।

অংশু সেনের মতে, বয়স ৫০ বছরের চৌকাঠ পেরনোর পরেই কোনও রকম উপসর্গ দেখা দিলে অবিলম্বে নিউরোলজিস্ট বা স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। চিকিৎসার জন্য নিকটজনের সহযোগিতা খুব দরকারি, বলছেন অংশুবাবু।

চিকিৎসা পদ্ধতি

মস্তিষ্কের সাবস্ট্যান্সিয়া নাইগ্রা নামক অংশ থেকে ডোপামিন নামে এক নিউরোট্রানসমিটার নিঃসৃত হয়ে আমাদের ভাবনাচিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করে। মন ভাল থাকার পিছনেও এর ভূমিকা আছে‌। মস্তিষ্কের এই অংশ অকেজো হয়ে গেলে, ডোপামিন নিঃসরণ কমে যায়। এ ভাবেই পার্কিনসনসের সূচনা হয়।

আরও পড়ুন : বেড়ানোর ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করলে বাড়বে সংক্রমণের আশঙ্কা

ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের প্রাক্তন স্টিরিওট্যাকটিক ও ফাংশনাল নিউরোসার্জন ও মেদান্ত হাসপাতালের চিকিৎসক অনির্বাণদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির রিচার্জেবেল ব্রেন পেসমেকার বা ডিপ ব্রেন স্টিমুলেটর (ডিবিএস) নামক এক বিশেষ ডিভাইসের সাহায্যে পার্কিনসনসের অনেক সমস্যা দূর করা যায়। আমেরিকায় প্রথম এই প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়। তাতে উল্লেখযোগ্য ভাল ফল পাওয়ার পর এই চিকিৎসা ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে‌ছে। রোগীকে জাগিয়ে রাখা অবস্থায় এই ব্রেন পেসমেকার প্রতিস্থাপন করা হয় বলে জানালেন অনির্বাণদীপ। এই সার্জারির কয়েক ঘণ্টা পর থেকেই রোগী কিছুটা সচল হয়ে যান। এমনকি পরদিন থেকে কোনও সাহায্য ছাড়াই হাঁটাচলা করতে পারেন। অনির্বাণদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, এই অসুখে আক্রান্তদের মধ্যে এক শতাশের ক্ষেত্রে ওষুধ খুব একটা কাজ করে না। তখন রোগী আরও নিস্তেজ হয়ে পড়তে শুরু করেন।

ডিবিএস প্রতিস্থাপন

মস্তিষ্কের এই জটিল সমস্যায় অনেক রোগীকেই প্রতি দিন গোটা ২০ ওষুধ খেতে হয়। এমন রোগীও আছেন, যাঁদের ৩৫টা পর্যন্ত ওষুধ খেতে হতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে ওষুধ খেতে খেতে অনেক সময় তার কার্যকারিতাও কমে যায়। তেমন অবস্থায় রোগীকে সুস্থ করতে চিকিৎসকরা বাইল্যাটারাল সাব থ্যালামিক নিউক্লিয়াস ডিপ ব্রেন স্টিমুলেটর (ডিবিএস) প্রতিস্থাপন করেন। এর পরেও রোগী কিছুটা স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে পারেন বলে জানাচ্ছেন অনির্বাণদীপ। এই প্রতিস্থাপনের পর রোগীর ওষুধের পরিমাণ অনেকটাই কমে যায়। রোজ মাত্র পাঁচ থেকে সাতটা ওষুধেই ভাল কাজ হতে পারে। আক্রান্ত মানুষটি অন্যের সাহায্যে রোজকার কাজকর্ম করার ক্ষমতা অনেকটাই ফিরে পান। তবে এই পদ্ধতিতে চিকিৎসার খরচ তুলনামূলক ভাবে বেশি। ১২ থেকে ১৬ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে।

ডায়েটে নজর

মস্তিষ্কের এই জটিল সমস্যা অন্য ভাবেও প্রতিরোধ করা সম্ভব। তার সহজ সমাধান রয়েছে রোজকার খাবারদাবারের মধ্যেই। পার্কিনসনসের আশঙ্কা কমাতে ডায়েটে রাখুন অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট যুক্ত খাবার। নানা রকমের এবং নানা রঙের ফল, মরসুমের শাকসব্জি, বাদাম আর মাছ। ওজন ঠিক রাখতে নিয়মিত যোগাসন বা এক্সারসাইজ করুন। মন ভাল রাখতে প্রাণায়াম করতে পারেন। এই সব ক’টি পদক্ষেপই আপনার সঙ্গে পার্কিনসনসের দূরত্ব বাড়িয়ে দেবে।

আরও পড়ুন : হঠাৎ ঠান্ডা, হঠাৎ গরমেও ত্রাতা হয়ে উঠছে সেই মাস্ক-ই

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Parkinson neurological dissease Doctors advice
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE