Advertisement
০৫ মে ২০২৪

রোগা হতে রেড ওয়াইন! বলছেন বিজ্ঞানীরা

চিয়ার্স... টু ওয়েট লস! মদের গ্লাসে চুমুক দিয়ে ছিপছিপে হওয়ার স্বপ্ন! আকাশকুসুম কল্পনা ভেবে উড়িয়েই দিতে পারেন অনেকে। কারণ মদ্যপানে মোটা হওয়ার কথাই বেশি শোনা যায়। কিন্তু আমেরিকার ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটির ‘কলেজ অব এগ্রিকালচারাল স্টাডিজ’-এর দাবি, রেড ওয়াইন খেলে ওজন তো কমেই, সেই সঙ্গে নিয়ন্ত্রণে থাকে ব্লাড সুগারের পরিমাণও।

তৈরি হয় মাস্কাডিন আঙুর থেকে

তৈরি হয় মাস্কাডিন আঙুর থেকে

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৪৮
Share: Save:

চিয়ার্স... টু ওয়েট লস! মদের গ্লাসে চুমুক দিয়ে ছিপছিপে হওয়ার স্বপ্ন!

আকাশকুসুম কল্পনা ভেবে উড়িয়েই দিতে পারেন অনেকে। কারণ মদ্যপানে মোটা হওয়ার কথাই বেশি শোনা যায়। কিন্তু আমেরিকার ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটির ‘কলেজ অব এগ্রিকালচারাল স্টাডিজ’-এর দাবি, রেড ওয়াইন খেলে ওজন তো কমেই, সেই সঙ্গে নিয়ন্ত্রণে থাকে ব্লাড সুগারের পরিমাণও।

অতএব, মেদবহুল মধ্যপ্রদেশের দৌলতে যাঁরা দীর্ঘদিন দাঁড়ানো অবস্থায় নীচে তাকিয়ে নিজের পদযুগল দেখতে পাননি, কিংবা শপিং মল থেকে পাড়ার দোকান হন্যে হয়ে খুঁজেও পরনের জামাকাপড় জোগাড় করতে পারেননি, সেই সব ‘সুস্বাস্থ্যের’ অধিকারীদের জন্য সুখবর। মেদ ঝরাতে তাঁরা এ বার হাতে তুলেই নিতে পারেন রেড ওয়াইনের গ্লাস। ‘নিউট্রিশনাল বায়োকেমিস্ট্রি’ পত্রিকায় প্রকাশিত ওরেগন স্টেটস ইউনিভার্সিটির গবেষণাপত্রটিতে অন্তত এমনটাই দাবি করা হয়েছে।

কী ভাবে এ হেন দাবি করছেন বিজ্ঞানীরা? গবেষক দলটির অন্যতম নিল শে জানালেন, ইঁদুরের উপর পরীক্ষা করে দেখেছেন তাঁরা। টানা দশ সপ্তাহ ধরে তাঁরা এক দল ইঁদুরকে প্রচুর খাওয়ান। স্বাভাবিক ভাবেই, কিছু দিনের মধ্যে তারা হৃষ্টপুষ্ট হয়ে ওঠে। পরীক্ষা করে দেখা যায়, তাদের ফ্যাটি লিভার বেড়েছে। লাফিয়ে বেড়েছে ব্লাড সুগারের মাত্রাও। এই একই সময় বিজ্ঞানীরা ইঁদুরের অন্য একটি দলকে স্বাভাবিক আহার দিতে থাকেন। এ ভাবে দশ সপ্তাহ কাটার পর, মোটাসোটা ইঁদুরদের ‘মাস্কাডিন গ্রেপ’-এর (যে আঙুর থেকে রেড ওয়াইন তৈরি হয়) নির্যাস খাওয়ানো হয়। দেখা যায়, ওই ইঁদুরদের লিভার ফ্যাট ধীরে ধীরে কমে স্বাভাবিক খাদ্যাভাসে থাকা ইঁদুরদের সমতূল্য হয়ে গিয়েছে। একই কাণ্ড ঘটেছে ব্লাড সুগারের ক্ষেত্রেও। সেই মাত্রাও পৌঁছে গিয়েছে স্বাভাবিকের কাছাকাছি।

নিল বলেন, “ইঁদুরের মতো এই একই পরিণতি তো মানুষের ক্ষেত্রেও ঘটে। আঙুরের মতো সহজলভ্য একটা ফল থেকে যদি শরীরের ক্ষতিকারক ফ্যাটি লিভার কমানো যায়, তা হলে তার থেকে ভাল আর কী হতে পারে!” তবে একই সঙ্গে নিল জানিয়েছেন, যাঁরা মদ্যপান করেন না, তাদের নতুন করে হাতে ওয়াইন গ্লাস তুলে নিতে হবে না। একমুঠো আঙুর খেলেও একই ফল দেবে। আঙুরের রসেই যে রয়েছে মেদ ঝরানোর আসল চাবিকাঠি এল্যাজিক অ্যাসিড।

কী এই এল্যাজিক অ্যাসিড?

এটি আসলে একটি ফেনল অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট ও অ্যান্টি-ফ্যাটিঅ্যাসিড। আঙুর ছাড়াও আরও নানা ফল-সব্জিতে থাকে। শরীরে ফ্যাটের বাড়বৃদ্ধি কমিয়ে দিতে সাহায্য করে এল্যাজিক অ্যাসিড। সেই সঙ্গে নতুন করে ফ্যাট জমতে দেয় না। আসলে ফ্যাটি অ্যাসিড থেকে ফ্যাট তৈরি হয়। লিভারের ভিতরে ফ্যাটি অ্যাসিডের বিপাক প্রক্রিয়া বাড়িয়ে দেয় রাসায়নিকটি। তাই নতুন করে ফ্যাট তৈরি হয় না। লিভারের কাজ করার ক্ষমতাও বাড়ে। কমে ফ্যাটি লিভার সংক্রান্ত অসুখ।

তবে কি রেড ওয়াইনে চুমুক দিলেই রোগা হওয়া নিশ্চিত? গ্যাস্ট্রোএন্ট্রোলজিস্ট অভিজিৎ চৌধুরীর কথায়, “যাঁরা মদ্যপান করেন, তাঁরা অন্য কিছু না খেয়ে রেড ওয়াইন খেতে পারেন। কিন্তু তা বলে এটা কখনও ওষুধ হতে পারে না।”

একই দাবি কার্ডিওথোরাসিক সার্জন সত্যজিৎ বসুর। তাঁর কথায়, “রোগা হতে হলে শরীরচর্চা করুন। কিন্তু রেড ওয়াইন কেন? তার থেকে এক মুঠো আঙুর খান। সমান উপকার।” তা ছাড়া, আমেরিকায় মানুষ ওয়াইন খেতে অভ্যস্ত। তাঁরা সারা দিন প্রচুর পরিশ্রমও করেন। তাঁদের জন্য রেড ওয়াইন বিকল্প হিসেবে ভাল। বলছেন, এ দেশের চিকিৎসকরা।

ডায়াটেশনিস্ট রেশমী রায়চৌধুরী যেমন বলেন, “ওয়াইন শুনলেই লোকের চোখ চকচক করে ওঠে। কিন্তু অতিরিক্ত মাত্রায় মদ্যপান করলে বিপরীত ফলই হবে। একমাত্র নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে রেড ওয়াইন খেলেই উপকার।” তিনি জানান, ৫ আউন্স বা ১৫০ এমএল (এক গ্লাসেরও কম) পর্যন্ত রেড ওয়াইন খাওয়া যেতে পারে। তাতে ১২৫ থেকে ১৫০ ক্যালোরি শরীরে ঢুকবে। সেটাও সপ্তাহে দুই-তিন দিনের বেশি নয়। সেই সঙ্গে যথেষ্ট শরীরচর্চাও প্রয়োজন। প্রতিদিন ঢকঢক করে রেড ওয়াইন খেলে বিপদ বাড়বে বই কমবে না।

রেশমীর কথায়, “শুধু এল্যাজিক অ্যাসিডই নয়, পিসিয়াটেনল নামেও একটি রাসায়নিক থাকে মাস্কাডিন গ্রেপ ও তার থেকে তৈরি রেড ওয়াইনে। পিসিয়াটেনল-ও এল্যাজিক অ্যাসিডের মতো একই কাজ করে। ফ্যাট জমতে দেয় না শরীরে।” আরও জানান, ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটির আগেও বহু বার এই একই দাবি করেছেন ন্যাব্রাস্কা, ফ্লোরিডার মতো আমেরিকার বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। কারণ সে দেশের দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসে মদ রয়েইছে। “এ দেশের মানুষের রোগা হতে রেড ওয়াইন খেতে হবে না। তার থেকে ফল খাওয়া ভাল। উপকার শরীরচর্চাতেও।” বললেন রেশমী।

অর্থাৎ পান করতে যাঁরা অভ্যস্ত, তাঁদের জন্য নিয়ন্ত্রিত পরিমাণ রেড ওয়াইন ভাল। কিন্তু রোগা হওয়ার ওষুধ? নৈব নৈব চ!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

muscadine red wine
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE