সম্পর্কে ভাঙন যখন বড্ড সহজ হয়ে গিয়েছে, তখনও কিন্তু স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে দিব্যি সুখে জীবন কাটাচ্ছেন অভিনেতা জ্যাকি শ্রফ। ৪৮ বছরের দাম্পত্য উপভোগ করছেন। তারকাদের জীবনে যখন বিয়ে, বিচ্ছেদ, পরকীয়ার ‘মুখরোচক’ গল্প নিয়ে চর্চা, তখন কী ভাবে সম্পর্কের বাঁধন মজবুত রেখেছেন বলিউড অভিনেতা, সেই বিষয়টিই খোলসা করলেন সাক্ষাৎকারে। দিলেন পরামর্শও।
সম্প্রতি একটি পডকাস্ট অনুষ্ঠানে এমনই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছিলেন জ্যাকি। ১৯৮০ সালে মিস ইয়ং ইন্ডিয়ার খেতাব পাওয়া আয়েশা দত্তকে বিয়ে করেছিলেন তিনি। তাঁদের দুই সন্তান, টাইগার এবং কৃষ্ণা শ্রফ। বর্তমান প্রজন্ম যেখানে ‘ওপেন রিলেশনশিপ’, ‘লিভ ইন’-এ বিশ্বাসী, সেখানে বিবাহিত জীবনের রসায়ন কেমন হওয়া দরকার? সম্পর্কে বিশ্বাস, ভরসা কতটা থাকা দরকার, কী ভাবে দাম্পত্য জীবন সমধুর হতে পারে, এমন প্রশ্নই করা হয়েছিল অভিনেতাকে। জ্যাকি বলেন, ‘‘জুড়ে থাকাই হল দাম্পত্য জীবনে ভাল থাকার রসায়ন। কোনও অবস্থাতেই স্ত্রীকে ছেড়ে যাওয়া চলবে না। ঝগড়া, মনোমালিন্য সম্পর্কে থাকা খুব স্বাভাবিক। কিন্ত সন্তানকে সেতুবন্ধনের কাজটি করতে হবে।’’
আরও পড়ুন:
সুখী দাম্পত্যের জন্য জ্যাকির ভাবনা বা আদর্শই কি সঠিক? কী ভাবে দাম্পত্য সম্পর্কে উন্নতি সম্ভব? মনোরোগ চিকিৎসক শর্মিলা সরকার বলছেন, ‘‘স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক টিকে থাকে পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং শ্রদ্ধার উপর। অভিনেতার ক্ষেত্রে যে ভাবনা সঠিক, সেটাই যে অন্য দম্পতির জীবনকে সমধুর করে তুলবে, তা কিন্তু না-ও হতে পারে। প্রতিটি দাম্পত্য সম্পর্কেরই কিন্তু আলাদা রসায়ন থাকে।’’
মনোবিদ অঞ্জলি গুরসহানির কথায়, ‘‘সম্পর্ক কতটা ভাল হবে, তা নির্ভর করে স্বামী-স্ত্রীর মানসিকতা, চিন্তাভাবনা, বোঝাপড়া, মানসিক সংযোগ-সহ বেশ কিছু বিষয়ের উপরে। প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই তাই সম্পর্কে সাফল্যের শর্ত একরকম হতে পারে না।’’
দাম্পত্য সম্পর্ক তা হলে মজবুত হয় কিসে?
সমীহ: সম্পর্কে বিশ্বাস-ভরসা ঠিক যতটা জরুরি, ততটাই প্রয়োজন সমীহ। একে-অন্যকে সমীহ করতে না পারলে, বিশ্বাসের মর্যাদা দিতে না পারলে সেই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা কঠিন, বলছেন শর্মিলা।
ভাল দিকটি দেখতে শেখা: প্রত্যেক মানুষেরই কিছু ভাল গুণ যেমন থাকে, তেমনই খারাপ দিকও থাকে। খারাপ বা ভুলভ্রান্তি নিয়ে এক-অন্যের দিকে ক্রমাগত আঙুল তুললে, সম্পর্ক তিক্ত হতে বাধ্য। বদলে একে অন্যের ভাল দিকগুলিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা প্রয়োজন।
দায়িত্ব ভাগ: সাংসারিক দায়দায়িত্ব দু’জনেই নিজেদের মতো ভাগ করে নিলে সম্পর্কের বাঁধন মজবুত হবে। সন্তান বাবা-মা দু’জনের কাছ থেকেই মানসিক সমর্থন চায়। শিশুর দেখাশোনা, তার লেখাপড়া থেকে বড় হওয়ার দায়িত্ব ভাগ করে নিলে সে বাবা-মা দু’জনকেই পাশে পাবে।
পরিসর: স্বামী-স্ত্রী একে অন্যের সঙ্গে কতটা জুড়ে থাকবেন আর কতটাই বা ছাড় দেবেন, সেই মাত্রা বোঝা জরুরি। জুড়ে থাকতে গিয়ে একে অন্যের প্রতিটি পদক্ষেপ নিয়ন্ত্রণ করতে গেলেই সমস্যা শুরু হবে। মনোরোগ চিকিৎসকের পরামর্শ, দু’জনকেই তাঁদের পরিসর নিশ্চিত করতে হবে। একে অন্যের পরিসরে কতটা ঢুকবেন বা ঢোকা সঙ্গত, সেটি কিন্তু ব্যক্তিগত বোঝাপড়ার বিষয়।
কথা বলা: অন্যের আচরণ খারাপ লাগলে, মনে প্রশ্ন জাগলে অভিমান করে বসে থাকা নয়, বরং খোলা মনে কথা বলাই ভাল। অনেক সময় সঙ্গীর রাগ বা অভিমানের সঠিক কারণ অন্য জন আঁচ করতে পারেন না। তা থেকেই দূরত্ব বেড়ে যায়। অন্য জন মুখ দেখে বুঝে নেবে, এতটা প্রত্যাশা না রেখে খোলাখুলি কথা বলাই সমাধান।