শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য সময়ের সঙ্গে আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছে। কেউ মন খুলে কথা বলতে পারে। কেউ আবার একটু চুপচাপ। সকলে সঙ্গে মিশতে তাদের সমস্যা হয়। দ্বিতীয় ক্ষেত্রটি বাবা-মায়েদের কাছে অবশ্যই চিন্তার বিষয়। তাই অনেকেই অল্প বয়স থেকে ছোটদের উপরে মানসিক চাপ তৈরি করেন। কিন্তু মনোবিদদের একাংশের দাবি, ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত ছোটদের মনে ক্রমাগত পরিবর্তন হতে থাকে। তাই কেউ যদি সহজে অন্যদের সঙ্গে মিশতে না পারে বা চুপচাপ থাকে, তাকে জোর করা উচিত নয়। না হলে বিপদ ঘটতে পারে। এই ধরনের শিশুদের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখা উচিত—
আরও পড়ুন:
১) কথা বলার ব্যাপারে জোর করবেন না: ছোটদের জোর করে কথা বলতে বললে বা মেলামেশা করতে বললে, তারা ভাবতে পারে যে তারা যা করছে, আসলে তা ভুল। ফলে অল্প বয়সেই মনের উপরে চাপ তৈরি হতে পারে। তাই ‘‘চুপ করে আছ কেন?’’ বা ‘‘আরও কথা বলো’’— এই ধরনের বাক্য ব্যবহার করা উচিত নয়। ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনও কাজ করতে হলে ছোটরা আরও বেঁকে বসতে পারে। তাই ছোটদের সব সময়েই তাদের নিজস্ব ‘কমফোর্ট জ়োন’-এ রাখা উচিত।
২) নীরবতা মানেই অভদ্রতা নয়: সন্তানকে কখনও বোঝানো উচিত নয় যে, নীরব থাকার মাধ্যমে সে কাউকে অসম্মান করছে। কারণ, এতে তার মনের মধ্যে লজ্জাবোধ বা ভীতি তৈরি হতে পারে। কখনও কখনও এই ভাবে নীরবতা সন্তানের ‘খুঁত’ হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। কিন্তু বাস্তবে তা সত্য নয়।
৩) শব্দচয়নের প্রয়োজনীয়তা: ছোটদের ক্ষেত্রে ‘লাজুক’ শব্দটির প্রয়োগ করা উচিত নয়। কারণ কাউকে লাজুক বলার মাধ্যমে তার মধ্যে হীনম্মন্যতা জন্ম নিতে পারে। যে সমস্ত বাচ্চারা শৈশবে চুপচাপ থাকে, দেখা গিয়েছে তাদের একটা বড় অংশের পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা খুবই প্রখর। পরবর্তী সময়ে তাদের মধ্যে অনেকেই সাফল্যের শিখর আরোহণ করেছে।
৪) অপমান করা উচিত নয়: যে সমস্ত বাচ্চা চুপচাপ থাকতে পছন্দ করে, তাদের ক্ষেত্রে কোনও অপমানজনক শব্দ মনের উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন ‘‘চুপ করে থাকলে জীবনে কোনও দিন সফল হবে না’’— এই ধরনের বাক্য তাদের উদ্দেশে প্রয়োগ করা উচিত নয়। তার ফলে শিশুরা আরও চুপচাপ হয়ে যেতে পারে।
৫) ছোটদের স্বভাব বিচার্য নয়: যারা চুপচাপ থাকতে পছন্দ করে, তাদের এই স্বভাবকে বিচার করা উচিত নয়। তাই সেই রকম কোনও সমালোচনামূলক শব্দ বা বাক্য তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ, মা-বাবার থেকে এই আচরণ তাদের মনে নিরাপত্তাহানতার জন্ম দিতে পারে। পরিবর্তে তাদের সঙ্গে খোলা মনে কথা বললে, সেখানে অনুপ্রেরণার জায়গা তৈরি হতে পারে।
কী করা যেতে পারে
মনোবিদদের একাংশের দাবি, সমস্যা নজরে আসার পর ছোটদের অনুপ্রাণিত করতে পারলে, তাদের মনোবল বৃদ্ধি পায়। কেউ যদি খেলার মাঠে যেতে না চায়, তাকে তো বলাই যায় ‘‘ঠিক আছে, আজ একটু বিশ্রাম করো।’’ এই ভাবে ছোটদের সমালোচনার পরিবর্তে পাশে থাকার বার্তা দেওয়া জরুরি বলেই মনে করছেন অনেকে।
বাবা-মায়েদের খেয়াল রাখতে হবে, সন্তান একা থাকলেও কিন্তু সে আনন্দে থাকতে পারে। তাই অবসরে বা একান্তে সন্তান ঠিক কী কী করছে, তা নজরে রাখা উচিত। তার ফলে তার মনে কোনও দুঃখ বা অবসাদ তৈরি হয়েছে কি না, তারও আন্দাজ পাওয়া যেতে পারে।
আবার কেউ যদি মেলামেশা করতে পছন্দ না করে, তাকে তো জিজ্ঞাসা করাই যায় যে, মানুষের ভিড় বা কথোপকথন তার কেন পছন্দ নয়। প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেলে সেইমতো পদক্ষেপ করা যেতে পারে। প্রয়োজনে মনোবিদের সাহায্য নেওয়াও যেতে পারে।