Advertisement
E-Paper

ছবি পরেও করতে পারব, কিন্তু ছেলে-মেয়ে বড় হওয়ার সময়টা আর ফিরে আসবে না: কোয়েল

বিরতির পর বড় পর্দায় ফিরছেন অভিনেত্রী কোয়েল মল্লিক। দুই সন্তান, পরিবার এবং অবশ্যই ছবির প্রচার, কী ভাবে সামলাচ্ছেন তিনি?

অভিনন্দন দত্ত

শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০২৫ ১০:০৫
Bengali actress Koel Mallick speaks about motherhood and parenting

অভিনেত্রী কোয়েল মল্লিক। ছবি: সংগৃহীত।

রুপোলি দুনিয়ায় একটা প্রচলিত মতামত রয়েছে, বিয়ের পর নায়িকাদের কেরিয়ার গ্রাফ নিম্মমুখী হতে শুরু করে। সংসার-সন্তান সামলাতে গিয়ে অনেকেই পেশার সঙ্গে দূরত্বও তৈরি করেন। কেউ বা আবার ‘প্রায়োরিটি’ বেছে নেন। বিয়ের পর সময়ের সঙ্গে মাতৃত্বকে আপন করে নিয়েছেন অভিনেত্রী কোয়েল মল্লিক। দুই সন্তানকে নিয়ে সংসার সামলানোর পাশাপাশি অভিনয়জীবনও সমানতালে সামলে চলেছেন তিনি। সম্প্রতি এক দুপুরে পরিবার এবং মাতৃত্বের সফর প্রসঙ্গে বিভিন্ন আঙ্গিক নিয়ে কথা বললেন কোয়েল।

প্রায় দু’বছর পর বড় পর্দায় ফিরছেন কোয়েল। তবে ছবিমুক্তি বা তার প্রচারের ব্যস্ততা এখনও তাঁর কাছে একই রয়ে গিয়েছে। তিনি বলছিলেন, ‘‘শুটিংয়ের সময়ে তবুও বিরতি পাওয়া যায়। কিন্তু ছবির প্রচারে এখনও আমার বেশ চাপ লাগে। কারণ, বিরতির কোনও সুযোগ থাকে না। মুক্তির দিন পর্যন্ত ছবিটার সম্পর্কে দর্শককে জানানোর চেষ্টা করি।’’ গত ডিসেম্বরে দ্বিতীয় বার মা হয়েছেন কোয়েল। তাঁর পরিবারে এসেছে কন্যাসন্তান। স্বাভাবিক ভাবেই মা হওয়ার পর কোয়েলের ব্যস্ততা বেড়েছে। তাই পেশার ক্ষেত্রে আগের তুলনায় এখন তাঁর কর্মপদ্ধতিও বদলে গিয়েছে। কোয়েলের স্বীকারোক্তি, ‘‘আগে চিত্রনাট্য পেলেই পড়তে বসে যেতাম। নতুন কাজের জন্য পর পর মিটিং করতাম। নিজের মতো করে প্রস্তুতি নিতাম। কিন্তু এখন এই সবটাই নির্ভর করে কবীরের (কোয়েলের ছেলের নাম) উপর।’’

জীবনের নতুন অধ্যায় মাতৃত্ব। কোয়েল সেই নতুন অধ্যায় চুটিয়ে উপভোগ করছেন। মাতৃত্ব তাঁকে বহু দিক থেকে বদলেও দিয়েছে বলে উপলব্ধি কোয়েলের। তাঁর কথায়, ‘‘একটা সময়ে অনেক কিছুই জানতাম না। এখন মাল্টিটাস্কিং করতে পারি। আবার আমিই যে সেগুলো করতে পারি, তা উপলব্ধি করে বিস্মিত হয়েছি।’’ ছেলেকে সারা দিন বাড়িতে একা ছেড়ে রাখতে পছন্দ করেন না কোয়েল। যদি তাঁকে সেটা করতেও হয়, সে ক্ষেত্রে তিনি কবীরের সারা দিনের রুটিন তৈরি করে তার পর বাড়ির বাইরে পা রাখেন। তার পরেও অবশ্য মায়ের ছুটি নেই। কোয়েলের কথায়, ‘‘সিসিটিভিতে যখন দেখি ও একা একা ঘরে বসে আছে, তখন খুব কষ্ট হয়। স্কুল থেকে ঠিক সময়ে বাড়ি ফিরছে কি না, কী খাবার খাবে, সবটাই আমার নজরে থাকে।’’

Bengali actress Koel Mallick speaks about motherhood and parenting

ছবি: সংগৃহীত।

কবীর এবং কাব্যের (কোয়েলের মেয়ের নাম) মধ্যে তাঁকে কে বেশি বিরক্ত করে? প্রশ্ন শুনেই পরিচিত হাসির ঝিলিক খেলে যায় কোয়েলের মুখে। বললেন, ‘‘কেউই নয়। আমার মনে হয় জীবনের অন্যতম সেরা একটা সময়ের মধ্যে রয়েছি। তাই ওদের নিয়ে আমার কোনও অভিযোগ নেই।’’ কবীরের বয়স এখন পাঁচ বছর। তাই মনের মধ্যেও তার নানা প্রশ্নের উঁকিঝুঁকি। দিনের শেষে একরাশ ক্লান্তি নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। কিন্তু কোনও দিন সেই বাহানায় ছেলের প্রশ্নকে এড়িয়ে যাননি কোয়েল। তাঁর কথায়, ‘‘একজন মা হিসেবে বিশ্বাস করি, সন্তানদের প্রশ্নগুলো আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ না হলেও ওদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর আমি তাকে সম্মান করতে পছন্দ করি।’’

‘সোনার কেল্লায় যকের ধন’-এর শুটিংয়ের সময়ে এক দিন ফ্লোরে কবীরকে নিয়ে এসেছিলেন কোয়েল। ফ্লোরের সকলের মাঝে ‘অভিনেত্রী’ মাকে অন্য রকম ঠেকেছিল ছেলের। ছবির একটা বড় অংশের শুটিংও জৈসলমেরে হয়েছিল। কোয়েল হাসতে হাসতে বলছিলেন, ‘‘ছবিতে আমি উটের পিঠে চেপেছি জেনে কবীর খুবই উত্তেজিত হয়েছিল। এখন তো বুঝতে পারবে না। তবে বড় হলে এই ছবিটা ওকে দেখানোর ইচ্ছে রয়েছে।’’ তবে মা হিসেবে সন্তানকে নিজের ছবি দেখানোর ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকেন কোয়েল। তাঁর যুক্তি, ‘‘ছেলেকে আমি মারপিট না করার পরামর্শ দিয়েছি। এ দিকে দেখছে মা মিতিনমাসি সেজে কাউকে ঘুষি মারছে! শিশুমন সেটা তো না-ও মানতে পারে!’’

কর্মরত মায়েদের নিত্যদিন নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। প্রথম বার মা হওয়ার পর কোয়েলের কাছেও দুই জগৎ নতুন অর্থ বয়ে নিয়ে এসেছিল। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তাঁর অনুপ্রেরণা বাবা রঞ্জিত মল্লিক। কোয়েলের কথায়, ‘‘আমার ছোটবেলায় বাবা প্রায় সারা বছর কাজ করতেন। কিন্তু বাড়িতে বাবার অনুপস্থিতি আমি কোনও দিন অনুভব করিনি। তাই হয়তো আমাকেও এখন খুব বেশি চেষ্টা করতে হয়নি।’’ তবে কখনও কখনও অন্য ভাবেও ভাবতে পছন্দ করেন কোয়েল। যেমন, শৈশবে বাবা ব্যস্ত থাকলে, মা থাকতেন সঙ্গে। সেখানে কোয়েল এবং তাঁর স্বামী (নিসপাল সিংহ রানে) দু’জনকেই বাড়ির বাইরে সময় কাটাতে হয়। কোয়েলের বিশ্লেষণ, ‘‘শিক্ষা রয়ে যায়। তার পরেও আমি বলব, সন্তানের জন্য মায়ের স্পর্শ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’’

Bengali actress Koel Mallick speaks about motherhood and parenting

পরিবারের সঙ্গে কোয়েল। ছবি: সংগৃহীত।

পরিবারের পরিসর এবং দায়িত্ব বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কাজের সংখ্যাও কমিয়েছেন কোয়েল। কিন্তু তা নিয়ে তাঁর কোনও অভিযোগ নেই। কোয়েলের কথায়, ‘‘এখনও পর্যন্ত জীবনের প্রতিটি ধাপ আমি উপভোগ করেছি এবং অভিনেত্রী, স্ত্রী বা মা হিসাবে দায়িত্ব পালনে কোনও রকম ফাঁকি দিইনি।’’ ‘প্রতিযোগিতা’ নয়, বরং এই মুহূর্তে সন্তানরাই কোয়েলের কাছে সবার আগে। তাঁর কথায়, ‘‘ছবি তো আমি পরেও করতে পারব। কিন্তু ওদের বড় হওয়ার এই সময়টা চলে গেলে তো আর ফিরে আসবে না।’’

সময়ের সঙ্গে সামাজিক প্রেক্ষাপট দ্রুত পরিবর্তনশীল। তাই সন্তানদের বড় করে তোলার কাজটি মায়েদের কাছেও শিক্ষার হয়ে উঠছে বলেই মনে করছেন কোয়েল। তিনি বলেন, ‘‘এখনকার সময়ে সন্তানকে প্রতিনিয়ত সঙ্গে থেকে বড় করে তোলাটা মা-বাবাদের কাছে খুবই চ্যালেঞ্জিং। কারণ, ভবিষ্যতের সম্ভাব্য প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য আগাম তাকে তৈরি করে দিতে হচ্ছে।’’ এখানেই আলোচনায় চলে আসে সন্তানের উপর সমাজমাধ্যমের প্রভাব। পান থেকে চুন খসলেই বিপদের আশঙ্কা। কোয়েলের কথায়, ‘‘পাড়ায় সহজ-সরল পরিবেশে যৌথ পরিবারে আমরা বড় হয়েছি। বাবা-মায়েদের ব্যস্ততা থাকতেই পারে। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁদের সন্তানের প্রতিটি পদক্ষেপ জানা এখন মাতৃত্বের আবশ্যিক শর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।’’ ছেলের জন্যও মোবাইল ব্যবহারের সময় বেঁধে দিয়েছেন কোয়েল। কিন্তু কবীর সেখানে কী কী দেখছে, পাশে বসে নজর রাখেন কোয়েল। তাঁর কথায়, ‘‘কার্টুনের মধ্যেও মারপিট থাকতে পারে। সেটাও শিশুমনকে প্রভাবিত করতে পারে। কোনটা শিখবে বলা খুব মুশকিল!’’ এরই সঙ্গে দৃপ্ত কণ্ঠে কোয়েল যোগ করলেন, ‘‘কাউকে আঘাত করা যেমন শেখাব না, তেমনই ছেলে যেন ১০টা ঘুষি খেয়ে বাড়ি ফেরে, সেটাও কিন্তু চাইব না! তাই মা-বাবার শিক্ষা খুবই প্রয়োজনীয়।’’

Bengali actress Koel Mallick speaks about motherhood and parenting

ছবি: সংগৃহীত।

কোয়েল যে ভাবে সংসার এবং পেশাকে সামলাচ্ছেন, অগণিত মহিলার ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব হয় না। স্বপ্নকে ধাওয়া করতে গিয়ে কখনও কখনও বাধা হয়ে দাঁড়ায় মাতৃত্ব। কোয়েল কিন্তু এ ক্ষেত্রে স্বপ্ন দেখা বন্ধের পক্ষপাতী নন। তিনি বললেন, ‘‘বহু মা একার হাতে সন্তানকে বড় করে তোলেন। সে ক্ষেত্রে একটা বিরতি নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু মায়েদের কখনওই নিজের স্বপ্নকে ধাওয়া করা বন্ধ করা উচিত নয়।’’ প্রথম সন্তানের ক্ষেত্রে এই ধরনের বিরতি বা সময় বেশি করে প্রয়োজন পড়ে বলেই মনে করছেন কোয়েল। তাঁর যুক্তি, ‘‘বড় সন্তানও কিন্তু অনেকে সময়ে অভি‌ভাবকের মতো কাজ করতে পারে। কাব্য যেমন এখন কবীরের সান্নিধ্য পাচ্ছে।’’

কোয়েলের মতে, এখন শিশুরা অনেকটাই পরিণত চিন্তাধারা পোষণ করে। তাই কর্মরত মায়ের ব্যস্ততা সন্তানকে খোলামনে বোঝালে, অসুবিধা হয় না। কোয়েলের কথায়, ‘‘সারা দিন পর বাড়ি ফিরে মেয়েকে দেখার পর কবীর হয়তো আমার সঙ্গে খেলতে চাইছে। আমি তখন ওকে বোঝালে, ও কিন্তু বুঝতে পারে।’’

সন্তানের প্রতিপালনে কোনও রকম ত্রুটি রাখতে নারাজ কোয়েল। এই সফরে তিনিও নিজেকে প্রতি মুহূর্তে নতুন ভাবে আবিষ্কার করছেন। ভাল চিত্রনাট্য এবং চরিত্রের প্রস্তাব পেলে অভিনয়ও করতে রাজি। কোয়েলের কথায়, ‘‘করতে হবে বলে অভিনয় করতে চাই না। কোনও দিন করিনি। আগামী দিনেও করব না।’’

Koel Mallick Tollywood Actress Motherhood Parenting Interview Celebrity Kid Celebrity Life
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy