‘সঠিক’ বয়সে বিয়ে, ‘সঠিক’ বয়সে মা— এই সঠিকের সংজ্ঞায় বিশ্বাসী নন মনোসামাজিক কর্মী পিয়া চক্রবর্তী। গত ফেব্রুয়ারি মাসে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার খবর দিয়েছিলেন অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রী পিয়া। আগামী জুন মাসে তাঁদের পরিবারে হবে একরত্তির আগমন। তার আগে মানসিক প্রস্তুতি চলছে বাবা-মায়ের। আনন্দবাজার ডট কমের সঙ্গে আড্ডায় পিয়া জানালেন, কী ভাবে নিজের সঙ্গে বোঝাপড়া করছেন, আসন্ন মাতৃত্ব নিয়ে কী ভাবছেন।
নিজের কয়েক জন বান্ধবীকে দেখেছেন ছোট থেকে মা হওয়ার স্বপ্ন দেখতে। কিন্তু পিয়ার জীবনের লক্ষ্য কখনওই সন্তান লালনপালন ছিল না। মা হতে চাওয়া বা না চাওয়া, কোনও ভাবনাই মনে আসেনি তাঁর। কেবল এতটুকু জানতেন, যদি কখনও মা হওয়ার জন্য প্রস্তুত বলে মনে হয়, তখনই পদক্ষেপ করবেন। আর সেইমতোই এখন মা হওয়ার দিন গুনছেন পরম-পিয়া।
পিয়ার জীবনের লক্ষ্য কখনওই সন্তান লালনপালন ছিল না। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
তবে খুব অল্প বয়সে মা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেননি পিয়া। ফলে মা হওয়ার উপযুক্ত বয়স নিয়ে কথা মাঝেমধ্যে তো কানে এসেছেই তাঁর। ‘‘এই বয়সে মা হওয়া উচিত নয়’’ অথবা ‘‘অনেক আগে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল’’, এ ধরনের কথা বলে থাকেন সমাজের নানা স্তরে পরিচিত-অপরিচিত জনে, সে কথা কোনও নারীরই অজানা থাকার কথা নয়। কিন্তু পিয়া সে সব নিয়ে ভাবিত নন। পিয়া মনে করেন, বেশি বয়সে মা হওয়ার সুবিধা রয়েছে। মানসিক স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে কাজ করা পিয়া নানা ধরনের মহিলার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগে থাকেন। তিনি দেখেছেন, কম বয়সে মা হলে অনেক সময়ে পরে আফসোসের আশঙ্কা তৈরি হয়। বরং মানসিক পরিণতি পাওয়ার পর মা হলে সে রকম ঝুঁকি কম। পিয়ার ভাষায় বললে, ‘‘বেশি বয়সে মা হব, এর পরে কী হবে, বয়স কত হবে, এ সব বিষয়ে অত চুলচেরা বিশ্লেষণ করিনি। কারণ, আমি খুব হিসেবনিকেশ করে চলা মানুষ নই। তবে একটা বিষয়ে ভাবতাম বটে। কম বয়সে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললে হয়তো আমাকে পরে আফসোস করতে হতে পারে।’’
পিতৃতান্ত্রিক সমাজে যে ভাবে বরাবর নারীদের মা হওয়ার বিষয়টি নিয়ে হইচই হয়ে এসেছে, সে ধারণাকে সমর্থন করেন না পরমব্রতের স্ত্রী। পিয়ার বক্তব্য, মা হওয়ার সিদ্ধান্ত একেবারেই এক নারীর ব্যক্তিগত বিষয়। তিনি চান, মা হওয়ার ইচ্ছাকে যে ভাবে উদ্যাপন করা হয়, মা না হওয়ার সিদ্ধান্তকেও সে ভাবেই উদ্যাপন করা হোক। পছন্দ-অপছন্দ, ব্যক্তিগত স্বাধীনতাই আসল। মা হওয়ার বয়স, মা হওয়ার ইচ্ছা-অনিচ্ছা নিয়ে সামাজিক নির্মাণকে না মেনে বরং মানসিক পরিণতি, ব্যক্তিস্বাধীনতাকেই গুরুত্ব দিতে চেয়েছেন পিয়া।
আরও পড়ুন:
তবে এখন সব ভাবনাচিন্তার স্তর পেরিয়ে আসন্ন মাতৃত্বকে আলিঙ্গন করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন পিয়া। তাঁর স্পষ্ট কথা, ‘‘পরম খুব নরম মনের মানুষ। ও কড়া বাবা হতে পারবে না। আমি কিন্তু কড়া মা-ই হব। অবশ্যই চাইব না, আমার সন্তান আমাকে ভয় পাক। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে গণ্ডি টেনে দেওয়া দরকার। যেমন সমাজমাধ্যম, ফোন ইত্যাদির থেকে ছোটদের যত দিন দূরে রাখা যায়, ততই মঙ্গল বলে মনে করি। আমরা যদি পাবলিক ফিগার না-ও হতাম, তা-ও এ ভাবেই ভাবতাম।’’
নিনা ও বাঘা, দুই পোষ্যের (সারমেয় এবং বিড়াল) সান্নিধ্যে সন্তানকে বড় করে তুলতে চান তারকাদম্পতি। এর মধ্যেই বন্ধুবান্ধবের থেকে তালিকা চলে এসেছে, কী কী কিনতে হবে একরত্তির জন্য। সময় যত এগোচ্ছে, ততই প্রস্তুতি বাড়ছে। যদিও পিয়ার কথায়, ‘‘এখন থেকে অত চিন্তা করছি না। সময় এলে ঠিক হয়ে যাবে সব।’’