ছবি : সংগৃহীত।
বিয়ে, কিন্তু কোনও প্রতিশ্রুতি নেই। অঙ্গীকার নেই। সারা জীবন থাকতেও হবে না একসঙ্গে। বাসনাবিলাসই এ সম্পর্কের মূল উদ্দেশ্য। বাসনা মিটলে আবার যে যার পথে।
ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন গ্রামে হঠাৎই এমন বিয়েতে আবদ্ধ হতে শুরু করেছেন সেখানকার মেয়েরা। শুধু তা-ই নয়, 'লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস'-এর একটি প্রতিবেদন বলছে, ওই ধরনের বিয়েকে কেন্দ্র করে এক বিশেষ ধরনের পর্যটনও শুরু হয়েছে ইন্দোনেশিয়ার গ্রামগুলিতে। যা চাঙ্গা করতে শুরু করেছে দেশের অর্থনীতিকে।
অস্থায়ী ওই বিয়ের নাম ‘প্লেজ়ার ম্যারেজ’। বাংলায় বলা যেতে পারে ‘প্রমোদ পরিণয়’। সাধারণত গ্রামে আসা কোনও পর্যটকের সঙ্গে স্থানীয় মহিলার ওই ধরনের বিয়ে হয়। বদলে তিনি ওই মহিলার পরিবারকে দেন 'পণ'। মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে স্ত্রীর সঙ্গে যাবতীয় বৈবাহিক সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার অধিকার থাকে তাঁর। তার পরে একটা সময়ে বিয়ে শেষ করে ঘরেও ফিরে যান পর্যটকেরা।
জাকার্তার শরিফ হিদয়াতুল্লা ইসলামিক স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইয়াইয়ান সোপিয়ান বলেছেন, ‘‘দেশে চাকরির সুযোগ অনেক কম। অর্থনীতির অবস্থাও সঙ্গীন। ওই বিয়ে গ্রামের মহিলাদের অর্থের প্রয়োজন এবং সংসার প্রতিপালনের খরচ মেটাচ্ছে। ইন্দোনেশিয়ার গ্রামগুলোতে তাই ‘প্রমোদ পরিণয়’ এখন লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে।’’ একটা সময়ে ‘কনে’র পরিবারই বিয়ে সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় দেখাশোনা করত। কিন্তু এখন পরিস্থিতি এমনই যে, পর্যটকদের চাহিদা মেটানোর জন্য বাজারে নেমেছে বহু এজেন্সি। তারাই প্রমোদ পরিণয়ে ইচ্ছুক গ্রামের মহিলা এবং পর্যটকদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করিয়ে দেয়।
চাহায়া: প্রমোদ পরিণয়ের ‘পরিণীতা’
১৭ বছর বয়স থেকে বিয়ে করছেন চাহায়া (নাম পরিবর্তিত)। 'লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস'কে তিনি জানিয়েছেন, তাঁর প্রথম প্রমোদ পরিণয় হয় বছর পঞ্চাশের এক আরব পর্যটকের সঙ্গে। তিনি তাঁর পরিবারকে পণের অর্থ হিসাবে দিয়েছিলেন ৮৫০ ডলার। অর্থাৎ ভারতীয় মুদ্রার হিসাবে ৭১ হাজার টাকা। তার পর থেকে অন্তত ১৫ বার ওই রকম বিয়ের কনে হয়েছেন তিনি।
চাহায়া জানিয়েছেন, ১৩ বছর বয়সে তাঁর প্রথম বিয়ে হয়েছিল, তাঁর ছোটবেলার সহপাঠীর সঙ্গে। কয়েক বছর পরে চাহায়ার দাদু-ঠাকুমা যখন জানতে পারলেন, আরব থেকে আসা এক ব্যক্তি কয়েক দিনের জন্য একজন 'স্ত্রী' খুঁজছেন, তখন চাহায়াকে বিয়ে করতে বাধ্য করেন তাঁরা। সেই ঘটনার পরেই চাহায়ার সঙ্গে তাঁর স্বামীর বিবাহবিচ্ছেদ হয়। একমাত্র সন্তানের দেখভালের জন্যই বিয়েকে পেশা হিসাবে নেন তিনি। তবে ওই পেশাতেই তাঁর মারাত্মক অভিজ্ঞতাও হয়।
আরবেরই এক ব্যক্তি প্রায় পৌনে দু’লক্ষ টাকা পণ এবং ৪২ হাজার টাকা বেতনের বিনিময়ে চাহায়াকে আরবে নিয়ে যেতে চান। কিন্তু, চাহায়া তাঁর সঙ্গে সেখানে পৌছনোর পরেই শুরু হয় অত্যাচার। তাঁর সঙ্গে দাসীর মতো ব্যবহার করতে শুরু করেন ওই ব্যক্তি। এমনকি, শারীরিক নিগ্রহও করেন। ওই ব্যক্তির হাত থেকে বাঁচতে আত্মহত্যার চেষ্টাও করেন চাহায়া। শেষে ইন্দোনেশিয়ার দূতাবাসের চেষ্টায় দেশে ফেরেন।
প্রমোদ পরিণয় কি আইনত সিদ্ধ?
ইন্দোনেশিয়ার আইন বলছে, সেখানে চুক্তিভিত্তিক বিয়ে সিদ্ধ নয়। যেমন যৌনকর্মীদেরও আইনি বৈধতা নেই। যদিও তাতে আটকাচ্ছে না। কিছুই। যে হেতু নির্দিষ্ট ভাবে ওই ধরনের বিয়ে সংক্রান্ত কোনও আইন নেই, তাই রমকমিয়ে চলছে বিয়ের ব্যবসা।
কামনা চরিতার্থ করাই কি লক্ষ্য?
বুদি প্রিয়ানা নামের এক ব্যক্তি জানাচ্ছেন, তিনি ওই ধরনের বিয়েতে দালালের কাজ করেন। বুদির কথায়, প্রায় প্রতিদিনই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন মেয়েরা। কিন্তু সব বিয়ে যে শুধু কামনা চরিতার্থ করার জন্যই হয়, তা নয়। অনেকে ঘরের কাজকর্ম করানোর জন্যও ওই ধরনের বিয়ে করেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy