Advertisement
E-Paper

যাঁরা কাঞ্চনের নিন্দা করছেন, তাঁরা ওঁর বন্ধু ছিলেন না, বক্তব্য শ্রীময়ীর, কী মত মনোবিদের?

মতের অমিল হলে চেনা মানুষের তালিকা থেকে ওই মানুষটির নাম লাল কালি দিয়ে কেটে বাদ দিয়ে দেওয়া যায়? চেনা মানুষ বিরূপ হলে মনের উপর কি একেবারেই কোনও প্রভাব পড়ে না?

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৮:৩০
Kanchan Mullick and Srimoyee Chattoraj

আরজি কর কাণ্ডের ঘটনায় বিধায়ক-স্বামী কাঞ্চন মল্লিকের পাশে দাঁড়ালেন স্ত্রী শ্রীময়ী চট্টরাজ। ছবি: সংগৃহীত।

অনেকেই বলেন বটে, আসল সময়ে মানুষ চেনা যায়। বোঝা যায় কে বন্ধু আর কে অরি! তবে দুই বন্ধু বা সহকর্মীর মতের অমিল কাউকে শত্রু বলে দাগিয়ে দিতে পারে? মতের অমিল হলে চেনা মানুষের তালিকা থেকে ওই মানুষটির নাম লাল কালি দিয়ে কেটে বাদ দিয়ে দেওয়া যায়? চেনা মানুষ বিরূপ হলে মনের উপর কি একেবারেই কোনও প্রভাব পড়ে না?

আরজি কর-কাণ্ডে বিধায়ক-অভিনেতা কাঞ্চন মল্লিকের মন্তব্যের জেরে সমাজমাধ্যম জুড়ে যে ‘ত্যাগ’-ঝড় উঠেছে, তার পর ‘বন্ধু’ কথাটি নিয়েও শুরু হয়েছে ভাবনা। সেই অর্থে বন্ধু না হলেও অনেক দিনের চেনা মানুষ কাঞ্চন। এক দিনের সম্পর্কও নয়। অভিনেতা হিসাবে কাঞ্চনের প্রতিষ্ঠা পাওয়ার যাত্রাপথ কতটা কঠিন ছিল সে কথা অনেকেই জানেন। জুনিয়র চিকিৎসকদের কর্মবিরতি নিয়ে (এককালে) মাটিতে পা রেখে চলা কাঞ্চনের এমন বক্তব্যের পর হতবাক অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, “বিধায়ক কাঞ্চনের সঙ্গে আমার কোনও দিনই বন্ধুত্ব ছিল না। তাই এই বিচ্ছেদ নিয়ে তেমন কোনও প্রভাব পড়ার কথাই নয়। কিন্তু মঞ্চাভিনেতা হিসাবে আমাদের পরিচয় অনেক দিনের। তাই ওঁর এমন বক্তব্য আমাকে ধাক্কা দিয়েছে। ওঁর চেতনা, মনুষ্যত্ব বোধ যদি কোনও দিন ফিরে আসে, সে দিন আবার আমরা আড্ডা দেব।”

অভিনেতা-বিধায়ক কাঞ্চন মল্লিকের বক্তব্যের সমালোচনাকারী এই বন্ধুদের ‘বন্ধুত্ব’ নিয়েও আপত্তি রয়েছে ওঁর স্ত্রী অভিনেত্রী শ্রীময়ী চট্টরাজের। এই মুহূর্তে কাঞ্চনের সবচেয়ে কাছের মানুষ তিনি। শ্রীময়ী মনে করেন, মতামত প্রকাশের অধিকার সকলের রয়েছে। কাঞ্চনও নিজের মত প্রকাশ করেছেন। সেই মত সকলের ভাল না-ই লাগতে পারে। শ্রীময়ী বলেন, “যাঁরা নিজেদের কাঞ্চনের বন্ধু বলে দাবি করছেন, তাঁরা কোনও দিন ওঁর প্রকৃত বন্ধু ছিলেনই না। তা হলে ওঁকে আলাদা করে ফোন করতে পারতেন। সমাজমাধ্যমে এই ভাবে আক্রমণ করতেন না। তা কেউই করেননি। প্রকৃত বন্ধুর কাজ তো এটা নয়।”

চেনা মানুষের হঠাৎ পরিবর্তনে আপাতত তাঁকে ‘ত্যাগ’ দিয়েছেন সুদীপ্তা। কিন্তু এই মতপার্থক্য বা দলাদলি তো বিশ্বকাপ ফাইনালে দুই চিরকালীন প্রতিপক্ষ ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনার সমর্থকদের মধ্যে নয়। কিংবা কাল্পনিক কার্টুন চরিত্র ‘টম অ্যান্ড জেরি’-র মান-অভিমানের পালাও নয়, যে পলক ফেলতেই আবার সব ভুল বোঝাবুঝি মিটে যাবে। এই দলাদলি তো আলো-অন্ধকারের। সত্যের পক্ষ এবং বিপক্ষের।

বিগত ২৩ দিন ধরে তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যুরহস্যের কিনারা এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে পথে নেমেছেন সাধারণ মানুষ। রাজ্য তো বটেই, দেশের বিভিন্ন জায়গায় চলছে প্রতিবাদ। প্রায়ই দিনরাত এক করে সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষ মিছিলে হাঁটছেন। রাতভর ধর্না দিচ্ছেন মেয়েরা। অনির্দিষ্ট কালের জন্য কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। সুবিচার পাওয়ার আশায় দিন গুনছে গোটা দেশ। দাবি একটাই। সকলেই ‘বিচার’ চান! ঠিক সেই সময়ে আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের উদ্দেশে করা মন্তব্যে বিধায়ক কাঞ্চন প্রায় একঘরে। সমাজমাধ্যমে নিন্দার ঝড়, কুরুচিকর মন্তব্য কিছুই বাদ যায়নি। সাধারণ মানুষ তো বটেই, অভিনয় জগতের প্রায় সকলেই বন্ধু-সহকর্মী কাঞ্চনের, দলীয় ধ্বজাধারীর ছায়া দেখে বিরক্ত। কাঞ্চনের কথায়, তিনিও অন্তরের অন্তঃস্তল থেকে ন্যায়বিচার চান। কিন্তু বন্ধুবিচ্ছেদ প্রসঙ্গ উঠলে কাঞ্চন বলেন, “যে যাঁর ব্যক্তিগত মতামত জানাচ্ছেন। আমিও আমার ব্যক্তিগত মতই প্রকাশ করেছিলাম। সুদীপ্তার যা মনে হয়েছে বলেছেন।”

দু’জন মানুষের মত ভিন্ন হওয়া স্বাভাবিক। গলায় গলায় বন্ধুত্ব থাকলে যে দু’জনের মধ্যে মতপার্থক্য থাকবে না, এমনটা ভেবে নেওয়া অনর্থক। বন্ধুত্ব এই শর্ত মেনে চলে না। তাই মতে মিলল না বলে ‘আড়ি’ করে দেওয়া হাস্যকর বলে মনে করেন মনোবিদ দেবশীলা বসু। তাঁর কথায়, “বন্ধুত্বেরও তো বিভিন্ন সংজ্ঞা রয়েছে। রয়েছে বিভিন্ন সমীকরণ। যাঁদের নিয়ে কথা হচ্ছে, তাঁরা দু’জনেই প্রাপ্তবয়স্ক এবং প্রাপ্তমনস্ক। পেশাগত দিক থেকে দু’জনের বন্ধুত্ব থাকলে যে মতামত ভিন্ন হবে না, এমন তো নয়। মতাদর্শ আলাদা হতেই পারে। পরিচিত কারও কথায় মনে আঘাতও লাগতে পারে। তার সঙ্গে বন্ধুত্ব ত্যাগ করা পেশাদার মানুষের কাজ নয়। কিন্তু মানবিকতা উধাও হলে সেই বন্ধুত্ব দীর্ঘস্থায়ী হবে কি না সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।”

দীর্ঘ দিনের বন্ধু-সহকর্মী রুদ্রনীল এবং কাঞ্চনের রাজনৈতিক মতাদর্শ আলাদা। তাই বলে যে বন্ধুত্বে ভাটা পড়েছে, এমনটা নয়। বন্ধু কাঞ্চনের কথায় স্তম্ভিত হয়েছেন ঠিকই। তবে রুদ্রনীল এটাও মানতে নারাজ যে, ব্যক্তি কাঞ্চন এই ধরনের সংগঠিত অপরাধমূলক কাজের পক্ষ নিতে পারেন। অভিনেত্রী সুদীপ্তার গলাতেও একই রকম সুর। তাঁরও মনে হয় এই কাঞ্চন আসলে সেই মানুষটা নন। যে কাঞ্চাকে তিনি চেনেন, সেই মানুষটি যদি বিন্দুমাত্র অবশিষ্ট থাকেন, তা হলে এক দিন তাঁর এই বক্তব্যের জন্য তিনি ঠিকই আফসোস করবেন।

R G Kar Protest R G kar Incident R G Kar Hospital
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy