দুগ্ধপোষ্য শিশু থেকে স্কুলে যাওয়া পড়ুয়াদের (ছ’বছর পর্যন্ত) কানের সমস্যা হয় বেশি। শিশুর কানে ব্যথা হওয়া, কান চুলকানো, কান দিয়ে জল বেরনো বা পুঁজের মতো চটচটে আঠালো রস বার হওয়া— এমন নানা সমস্যা দেখা দেয়। যদি শিশু বার বার কানের ব্যথার কথা বলে, তা হলে এড়িয়ে না গিয়ে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। কানে ব্যথা মানেই নিজের অভিজ্ঞতায় ড্রপ কিনে শিশুর কানে দেবেন না। কী ভাবে ব্যথা কমানো যেতে পারে, তা নিয়ে রইল কিছু পরামর্শ।
কী কী কারণে কানে ব্যথা হতে পারে?
কানের অসুখ বিভিন্ন ভাবে হতে পারে, যেমন— কানে ময়লা জমে, কানে জল জমে বা কানের ভিতরে কোনও সংক্রমণের কারণে।
একেবারে ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে দুধ খাওয়ানোর সময়ে মাথাটা একটু উঁচু করে না খাওয়ালে অনেক সময়ে তা কানের ভিতরে ঢুকে যায়।
আরও পড়ুন:
৮-১২ বছর বয়স না হওয়া অবধি ছোটদের কানের ভিতরকার ইউস্টেকিয়ান টিউবের গঠন সম্পূর্ণ হয় না। ছোটদের টনসিল থাকলেও ব্যথা বাড়ে।
এই বিষয়ে শিশুরোগ চিকিৎসক প্রিয়ঙ্কর পাল জানাচ্ছেন, কানের সঙ্গে ফ্যারিংক্সের যোগসূত্র তৈরি হয় ইউস্টেকিয়ান টিউবের মাধ্যমে। যদি শিশুর ফ্যারিঞ্জাইটিস হয়, সে ক্ষেত্রেও কিন্তু লক্ষণ কানে ব্যথা দিয়েই শুরু হয়। আবার অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে, অ্যালার্জিক রাইনাইটিস থাকলে তা থেকে কানে ব্যথা হতে পারে।
উপশম হবে কী করে?
ছোটদের ক্ষেত্রে প্রাথমিক ভাবে গরম সেঁক দেওয়া, প্যারাসিটামল দিয়ে ব্যথা নিয়ন্ত্রণ করা যায় বাড়িতেই। কিন্তু ব্যথা বাড়লে, কান থেকে পুঁজ বার হলে তখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। চিকিৎসক জানাচ্ছেন, এ সব ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে সংক্রমণ ঠেকানোর চেষ্টা হয়। সঙ্গে ড্রপও দেওয়া হয়। ওষুধ, ড্রপ ব্যবহার করার ৬-৭ সপ্তাহ পরেও যদি কানে ব্যথা থেকে যায়, তা হলে চিন্তার কারণ রয়েছে। তখন দেখতে হয়, কী কারণে ব্যথা হচ্ছে।
অনেক সময়ে গলায় স্ট্রেপটোকক্কাস ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ হলে তা মস্তিষ্ক অবধি ছড়িয়ে পড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে শিশুর খিঁচুনি হতে পারে। হাত-পায়ের দুর্বলতা দেখা দেয়, দেখতেও সমস্যা হয়। দ্রুত চিকিৎসা না হলে তা প্রাণঘাতী হতে পারে।
চিকিৎসকের পরামর্শ, কান পরিষ্কারের জন্য তুলো লাগানো ‘স্টিক’একেবারেই ব্যবহার করবেন না। খাবার খাওয়ার সময়ে, কথা বলার সময়ে বা হাঁটাচলার সময়ে স্বাভাবিক ভাবেই কানের পেশির সঞ্চালনে কানের ময়লা বেরিয়ে আসে। বরং তুলো লাগানো কাঠি বা অন্য কোনও সূচালো জিনিস দিয়ে কানের ময়লা পরিষ্কারের চেষ্টা করলে তা থেকে সংক্রমণ ঘটতে পারে। এই সময়ে কখনও রোদ, কখনও বৃষ্টি, তাই সর্দি-কাশি বা ঠান্ডা লাগা থেকে যতটা এড়িয়ে চলতে পারবেন, কানের সমস্যা ততই কম হবে।
কানে জল জমার সমস্যা বেশি দেখা যায়। কানের ইউস্টেকিয়ান নালির একটি প্রান্ত মধ্যকর্ণে আর অপর প্রান্ত থাকে নাকের পিছনে। শিশুদের ক্ষেত্রে নালিটি আকারে ছোট, চওড়া ও প্রায় সোজা হয়। অনেক সময়ে হুড়োহুড়ি করে জল বা দুধ খাওয়াতে গিয়ে তা নাকের মাধ্যমে এই নালি দিয়ে মধ্যকর্ণে ঢুকে যায়। পরে তা সংক্রমিত হয়ে পুঁজের সৃষ্টি করে। তাই শিশুকে খাওয়ানোর সময়ে সতর্ক থাকতেই হবে।