Advertisement
০৯ অক্টোবর ২০২৪
skin care

ঘামাচি, ছুলি, র‌্যাশ, ভ্যাপসা গরমে ত্বকের সংক্রমণ থেকে রেহাই মিলবে কীভাবে?

যাঁদের ডায়াবিটিস আছে তাঁদের ত্বকের বিশেষ যত্ন নেওয়া উচিত।

আর্দ্র আবহাওয়ায় ত্বকের সংক্রমণ বাড়ে। ছবি:শাটারস্টক।

আর্দ্র আবহাওয়ায় ত্বকের সংক্রমণ বাড়ে। ছবি:শাটারস্টক।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১১:০৮
Share: Save:

নভেল করোনা ভাইরাসের কারণে নতুন জীবন যাত্রার সঙ্গে অভ্যস্ত হতে গিয়ে অনেকেরই মনে নানা সংশয় তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে আকাশে বাতাসে পুজো পুজো ভাব, শরৎকাল। কিন্তু ভ্যাপসা গরমের হাত থেকে কোনও নিষ্কৃতি নেই। তবে মেঘলা আকাশ আর মাঝে মাঝে বৃষ্টি, গরমের ভ্যাপসা ভাব বাড়িয়ে দিচ্ছে। ঘাম আর বৃষ্টির জলে ভেজা জামা কাপড় থেকে ত্বকের নানা সমস্যার ঝুঁকি বাড়ে, বলছিলেন ত্বক রোগ বিশেষজ্ঞ পিয়ালি চট্টোপাধ্যায়।

ঘাম হলে শরীরের তাপমাত্রা ঠিক থাকে। তাই ঘাম হওয়া ভাল। কলকাতা সহ পশ্চিম বাংলায় উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় ঘাম বেশি হয়। শরীরের চাপা অংশে ঘাম জমে থাকলে ত্বকে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। ঘামের সঙ্গে ত্বকের যে সমস্যা ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে তা হল ঘামাচি। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় ঘামাচিকে বলে মিলিয়ারিয়া, বললেন পিয়ালি দেবী। ভ্যাপসা গরমে ঘাম ও ঘামাচির ঝুঁকি বেড়ে যায়।পুজোর আগে ঘামাচি সহ র‍্যাশ মন খারাপ করিয়ে দেয়। তাই চেষ্টা করবেন পাখার তলায় থাকার।

ঘাম প্রতিরোধ করতে অনেকেই পুরু করে পাউডার লাগান। এর থেকে কিন্তু ঘামাচি সহ ত্বকের অন্যান্য সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। পাউডার লাগানোর ফলে যে গ্রন্থি থেকে ঘাম নিঃসরণ হয়, অতিরিক্ত ঘাম জমে বা পাউডার সহ ময়লা জমে সেই মুখ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ঘাম বাইরে বেরোতে পারে না। ঘর্ম গ্রন্থির মধ্যে ঘাম জমতে শুরু করে। এরপর তা বাইরে বেরিয়ে আসে ঘামাচি বা র‍্যাশ হিসেবে।

আরও পড়ুন: ‘হার্ড ইমিউনিটি’ গড়ে উঠতে আর কত দিন, ভ্যাকসিনই বা কবে?​

বাড়াবাড়ি রকমের ঘামাচি হলে ত্বক বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করানো উচিত। পাউডার লাগালে সমস্যা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। নখের আচড় লেগে সেকেন্ডারি ইনফেকশনের ঝুঁকি থাকে বললেন পিয়ালি। ত্বকের ঘামাচি বা র‍্যাশের চুলকানি ও প্রদাহ কমাতে ক্যালামিনল জাতীয় লোশন লাগাতে হবে। ভাদ্র মাসের ভ্যাপসা গরমে ত্বকের সমস্যার ঝুঁকি বাড়ে, এই সময় বেশি করে জল পান করা দরকার বললেন পিয়ালি।

বাড়াবাড়ি রকমের ঘামাচি হলে ত্বক বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নিতে হবে। ফাইল ছবি।

এই গরমে শুধু ঘামাচিই নয়, ছত্রাক সহ অন্যান্য জীবাণুর সংক্রমণেরও ঝুঁকি থাকে। নিয়ম করে দিনে দুবার স্নান করে ও সুতির পোশাক পরলে ত্বক ভাল থাকে। ভ্যাপসা গরমে ঘাম জমে ত্বকের ওপর কালো, বাদামি বা সাদাটে ছোপ দেখা যেতে পারে। এইসব বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ছুলি হতে পারে। ডাক্তারি পরিভাষায় ছুলির নাম পিট্রিয়াসিস ভার্সিকালার। ত্বকে নানান রঙের ছোপ দেখা যায় বলেই ভার্সিকালার নামকরণ।

আরও পড়ুন: স্বাদ-গন্ধের অনুভূতি নেই মানেই কি করোনা, কী বলছেন চিকিৎসকরা

কম বয়সিদের মধ্যে ছুলির সংক্রমণের প্রবণতা বেশি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঘামে ভেজা শরীরে ছত্রাকের সংক্রমণ বেশি হয়। তাই ঘাম জমতে দেবেন না। তবে অনেক সময় স্টেরয়েড নিলে, ডায়াবিটিস থাকলে, কোনও গুরুতর অসুখের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে এবং অপুষ্টিতে ভুগলেও ছুলির সংক্রমণ হতে পারে। মুখে, গলায়, ঘাড়ে, পিঠে ছুলি বেশি দেখা যায়। ছুলির সংক্রমণ হলে অবশ্যই ত্বক বিশেষজ্ঞর পরামর্শে সঠিক চিকিৎসার পরামর্শ নিন। সাধারণত ছুলিতে কোনও ব্যথা অথবা জ্বালা থাকে না। কিন্তু ছুলির সঙ্গে অন্য কোনও সংক্রমণ হলে চুলকাতে পারে, জ্বালাও করে।

আরও পড়ুন: গলা-বুক জ্বালা, বমি ভাব, ডিসপেপসিয়া ঠেকাতে কী করবেন, কী করবেন না

শরীরে ঘাম জমে ছুলির সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। বৃষ্টিতে ভিজে সেই পোশাক গায়ে শুকালেও ছুলি হয়। তাই ঘাম জমতে দেবেন না। বৃষ্টিতে ভিজলে বাড়ি ফিরে হালকা সাবান মেখে স্নান করা উচিত। ছুলি আক্রান্ত অংশে অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ লাগানোর সঙ্গে সঙ্গে মাথাতে ঘাপটি মেরে বসে থাকা জীবাণু তাড়াতে অ্যান্টিফাঙ্গাল শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। এই কোভিড আবহে তো বটেই এমনিতেও প্রত্যেকের সাবান ও গামছা বা তোয়ালে আলাদা হওয়া উচিত।

গামছা বা তোয়ালে এবং চিরুনি থেকেও ত্বকের জীবাণু ঘটিত সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে। তাই প্রত্যেকের উচিত আলাদা জিনিস ব্যবহার করা। ভ্যাপসা গরমে অ্যালার্জি সহ ত্বকের র‍্যাশ ও অন্যান্য সমস্যার ঝুঁকি বাড়ে। আঁটসাট অন্তর্বাস ও পোশাক থেকেও ত্বকের সংক্রমণ হতে পারে, বললেন পিয়ালি চট্টোপাধ্যায়।

ত্বকে সংক্রমণ হলে নিজে থেকে স্টেরয়েড জাতীয় ক্রিম কিনে লাগিয়ে বিপদ বাড়াবেন না। ফরসা হওয়ার বাসনায় অনেকে স্টেরয়েড যুক্ত ক্রিম মাখেন। এতে সাময়িক ভাবে চকচকে মনে হলেও ত্বক অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মনে রাখবেন ত্বক ভাল রাখার সেরা উপায় পরিচ্ছন্নতা। হালকা সুতির পোশাক ও নিয়মিত মৃদু সাবান মেখে স্নান, ত্বক ঝকঝকে রাখার আসল চাবিকাঠি। ত্বক ভাল রাখতে পুষ্টিকর খাবার খান ও পরিচ্ছন্নতা মেনে চলুন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE