পুজোর মতোই পুজোর প্রস্তুতিও একটি বড়সড় উৎসবই বটে। কারণ পুজোয় চাই গ্র্যান্ড মেকওভার। বচ্ছরকার কাজকর্মের ক্লান্তি-কালিমা মুছে মুখে যেন ফুটে ওঠে উজ্জ্বল দীপ্তি। আর ক’টা দিন কেশদাম হতেই হবে রূপকথার রাপুনজেলের মতো। কিছু রূপ-রুটিন মেনে চলুন আর অত্যাধুনিক কিছু বিউটি-ট্রিটমেন্ট সম্পর্কে জেনে রাখুন, শখপূরণ সহজ হবে।
ছবি: অমিত দাস।
ঘরে বা পার্লারে
আবহাওয়ার কারণে দেশের এই অংশে সব ধরনের ত্বকেরই প্রধান সমস্যা পিগমেন্টেশন, স্কিনটোনে অসামঞ্জস্য, দাগছোপ। তার সঙ্গে বর্ষা এলে ত্বকে তেল-ময়লা জমে অ্যাকনে, পিম্পলের সমস্যাও বাড়ে। তাই পুজোর আগে দৈনন্দিন রুটিন ক্লেনজ়িং, টোনিং, ময়শ্চাইরাইজ়িংয়ের সঙ্গে দু’দিন অন্তর ত্বক স্ক্রাব করবেন। বাইরে গেলে সানস্ক্রিন লাগান, দরকারে বার বার। বাড়তি যত্ন হিসেবে রইল ফেস প্যাক। ত্বক পিম্পলবিহীন ও পরিষ্কার রাখে দুধ, শসার প্যাক। পাকা পেঁপে, টম্যাটো, আঙুর থেঁতো করে তাতে মধু মিশিয়ে প্রতিদিন ১৫-২০ মিনিট লাগিয়ে ধুয়ে ফেলতে পারলে ট্যান উঠে যায়। পেঁয়াজের রস আর ডিমের সাদা অংশের মিশ্রণ মুখে লাগালে তা ত্বককে টাইট ও মসৃণ রাখবে। এটি প্রাকৃতিক অ্যান্টি-এজিং। সময় না থাকলে সপ্তাহে এক বার ক্লে মাস্ক বা ত্বকের ধরন অনুযায়ী শিট মাস্ক ব্যবহার করে রিল্যাক্স করুন, ত্বক সজীব হবে। ইদানীং স্নানের আগে ত্বকে ড্রাই ব্রাশ ব্যবহারের চল। এতে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে ও মৃত কোষ উঠিয়ে ফেলা যায়। ত্বক টক্সিনমুক্ত হয়, জৌলুস বাড়ে।
ফেশিয়াল করাবেন পুজোর এক সপ্তাহ আগে। হাইড্রা-ফেশিয়াল এখন খুব জনপ্রিয়, আর চটক রয়েছে কোরিয়ান গ্লাস গ্লো ফেশিয়ালেরও। হাইড্রাফেশিয়ালের আর একটু উন্নত রূপ হল জেট পিল ফেশিয়াল। ট্রেন্ডমাফিক দাগহীন, কাচের মতো চকচকে ত্বক পেতে এগুলি কার্যকর। কারণ, ত্বকের জলীয় ভাব বজায় রাখে, ভিতরের স্তর থেকে ত্বক পুনরুজ্জীবিত করে। সেরা ফল পেতে এর সঙ্গে গ্লো মিস্ট ও কিছু স্কিন কেয়ার কিট ব্যবহারের নিদান দেন রূপ-বিশেষজ্ঞরা। এ ছাড়া বয়সের ছাপ, ত্বকের দাগ, ক্ষতচিহ্ন দূর করতে মাইক্রোডার্মাব্রেশন ফেশিয়াল ও ত্বকে আবার কোলাজেন তৈরি করে তারুণ্য ফেরাতে এলইডি লাইটনিং ফেশিয়ালেরও খুব কদর।
চটজলদি ঔজ্জ্বল্য ফেরাতে বিভিন্ন সামুদ্রিক উপাদানসমৃদ্ধ ফেশিয়ালেও আস্থা রাখেন অনেকে। এগুলি সব ধরনের ত্বকেই উপযোগী। থালগো, সামুদ্রিক গাছগাছড়া, শামুক, শৈবাল, বায়ো-মেরিন, অ্যাকোয়া— ওশ্যান-বেসড ফেশিয়ালের বিভিন্ন রকমফের রয়েছে সালঁ ও বিউটি ক্লিনিকগুলিতে। এগুলির সক্রিয় উপাদান ত্বকের নানা সমস্যা মেরামত করে। ফলে ত্বকে দীপ্তি ফুটে ওঠে দ্রুত। কলকাতায় এখন হলিউড ফেশিয়াল এসে গিয়েছে। এ ক্ষেত্রে ত্বকে কার্বন জেল লাগিয়ে লেজ়ার রশ্মি চালনা করে ওই কার্বন মাস্কটিকে নষ্ট করে দেওয়া হয়। সঙ্গে নষ্ট হয়ে যায় ত্বকের সব রকমের জীর্ণতা। রূপ হয় চোখে পড়ার মতো, পরিষ্কার ঝলমলে। হলিউডে কোনও অনুষ্ঠানে রেড কার্পেটে হাঁটার আগে এই ফেশিয়ালই করান তারকারা। ফেশিয়ালের অ্যাড-অন হিসাবে আই ট্রিটমেন্ট করিয়ে নিলে ডার্ক সার্কলের সমস্যা মিটবে। পিগমেন্টেশন নিয়ে নাজেহাল হলে কেমিক্যাল পিলিং বা হোয়াইটনিং ট্রিটমেন্ট করিয়ে নিন।
ছবি: অমিত দাস।
রেশমী রঙিন চুল
বৃষ্টির জল যাতে কোনও ভাবে চুলে না লাগে সে দিকে বিশেষ নজর দেবেন। স্ক্যাল্প ও চুল নিয়মিত ভাল ভাবে পরিষ্কার করলে চিটচিটে ভাব থাকবে না। পুজোর সময়ে চুলের নানা স্টাইলিং করার সম্ভাবনা থাকবে, তাই এখন থেকেই চুলের পর্যাপ্ত পুষ্টির ব্যবস্থা করুন। সপ্তাহে দু’দিন তেল মালিশ, এক দিন ডিপ কন্ডিশনিং, প্রতি বার চুল ধুয়ে কন্ডিশনারের পর উপযুক্ত সেরাম ব্যবহার করলেই চুলের স্বাস্থ্য ভাল থাকে।
পুজোর ঠিক আগে যখন ম্যানিকিয়োর, পেডিকিয়োর ও থ্রেডিংয়ের জন্য পার্লারে যাবেন, তখনই হেয়ার স্পা করিয়ে নিন। এতে সময়ও বাঁচবে। প্রোটিন অথবা কেরাটিন ট্রিটমেন্ট করালে পুরো উৎসবের মরসুম সালঁ-ফিনিশড লুক থাকবে। হেয়ার কালারে এখন ফ্ল্যাশ গ্লেজ়িং করানোর রীতি। এতে আলো পড়লে হাইলাইট করা অংশ বেশি ঝলমল করে, চুলে ডেপ্থ আসে। এ ছাড়া কালার মেল্টিং করানো যায়, তাতে ধাপে ধাপে বেশ কয়েকটি রং ব্যবহার করা হয়। তবে কম আয়াসে বহু দিন স্টাইল ধরে রাখা যায় বলে বেলেয়াজ় পদ্ধতিতে কালার করাচ্ছেন অনেকেই। এতে রং করা হলেও তা একেবারেই কৃত্রিম দেখায় না। চুলে কালার বা স্টাইলিং করালে অবশ্যই স্টাইলিস্টের কাছে থেকে যত্ন করার পদ্ধতি জেনে একেবারে অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলবেন।
ছবি: অমিত দাস।
গ্ল্যামার আনতে করণীয়
পুজোর আগে চটপট একটু মেদ ঝরাতে চাইলে বাইরের খাবারে পুরোপুরি রাশ টানুন। ছোট ছোট মিল-এ চার-পাঁচ বারে খান। মরসুমি ফল, সবুজ শাকসব্জি খেয়ে পেট ভরান। প্রতি বার যে পরিমাণ খাবার খান, তার চেয়ে অল্প খান। আর প্রচুর জল পান করুন। হাঁটাহাঁটি বাড়ান। জিমে কসরত করার সময় না পেলে কাজের ফাঁকে ফ্রি-হ্যান্ড কিছু ব্যায়াম করুন, সিঁড়ি ভাঙুন। এতেই অনেকটা ছিপছিপে দেখাবে, পুজোর সাজ সুন্দর মানাবে। ফোন ঘাঁটার নেশা কাটিয়ে রাতে টানা ঘুমান। এতেই লাবণ্য উপচে পড়বে।
পুজোয় শাড়ি তো নিশ্চয়ই পরবেন, তাই ব্যাক পলিশ করিয়ে নিন। নানা কাটের ব্লাউজ় পরতে পারবেন। পার্মানেন্ট নেল আর্ট (যেগুলি ওঠে না, দীর্ঘস্থায়ী) করান, এতে গোটা উৎসব-মাস জুড়েই আপনার লুক সকলের নজর কাড়বে।
ছবি: অমিত দাস; মডেল:ঋত্বিকা গুহ, ঐশ্বর্যা সেন; মেকআপ: সোহরাব আলি
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)