বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট ডা: অমিতাভ নন্দী বলেন, “নিপা ভাইরাস থেকে বাঁচতে হলে আগে আমাদের সচেতন হতে হবে। বাজার থেকে ফল নেওয়ার সময় ভাল করে দেখে কিনতে হবে। মাঠেঘাটে পড়ে থাকা ফল না খেলেই ভাল। মাংস বেশি সময় ধরে রান্না করলে, আগুনের তাপে জীবাণু মরে যায়। ফলে জীবাণু বা ভাইরাস ঘটিত রোগের হাত থেকে সহজেই রেহাই পাওয়া যায়। নিপা ভাইরাসে কেউ আক্রান্ত হলে ৭৫ শতাংশ বাঁচার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তাই আগে থেকে আমাদের সতর্ক হতে হবে।”
দেখুন ভিডিয়ো:
১৯৯৮ সালে মালয়েশিয়া প্রথম এই ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দেয়। সেখানে বাড়ির পোষ্য কুকুর, বেড়াল, ঘোড়া, ছাগলের দেহে এই ভাইরাসের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত লাগোয়া বাংলাদেশে ২০০৪ সালে নিপা ভাইরাস থাবা বসায়। অনেক মানুষ প্রাণ হারান। এ রাজ্যে নদিয়া এবং শিলিগুড়িতে দেড় দশক আগে নিপা হানা দিয়েছিল। প্রাণহানিও হয়। এ বার কেরল। কোঝিকোড় থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে পেরম্বরা থেকে এ বার নিপা ভাইরাস ছড়িয়েছে। ইতিমধ্যে মৃ্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬। নিপা আক্রান্তদের চিকিত্সা করা এক নার্সেরও মৃত্যু হয়েছে।
আরও পড়ুন: নিপা, নাম শুনেই দাদার কথা মনে পড়ল
নিপা আতঙ্কে এখন কাবু গোটা দেশ। কেরলের মতো পরিস্থিতি না হলেও, এ রাজ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে ‘নিপা’-র আতঙ্ক। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজন রোগী বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি। জেলা হাসপাতালগুলি থেকেও এই ধরনের অজানা জ্বরের খবর আসছে স্বাস্থ্য দফতরে।
চিকিৎসকেরা অবশ্য বলছেন— এ রাজ্যে এখনও উদ্বেগজনক কোনও পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। কিন্তু যদি এখানেও কেরলের মতো নিপা ভাইরাস হানা দেয়, তা হলে কতটা প্রস্তুত রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর?
চিকিত্সকরা বলছেন, এই ধরণের পরিস্থিতি মোকাবিলার সদিচ্ছা থাকলেও, নিপা ভাইরাস চিহ্নিতকরণের ক্ষেত্রে রয়েছে বড়সড় সমস্যা। তার কারণ, দেশের মধ্যে একমাত্র পুণের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজি’-তে ‘অ্যালাইজা’ পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে গোটা দেশের চাপ এসে পড়ছে পুণের ওই ইনস্টিটিউটে। ফলে এ রাজ্য থেকে নমুনা পাঠানো হলেও, তার রিপোর্ট আসতে দেরি হয়ে যাচ্ছে।
ডা: অমিতাভ নন্দীর কথায়, “নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে প্রাথমিক পর্যায়ে বিশেষ কোনও লক্ষণ বোঝা যায় না। জ্বর, মাথা ধরা, পেশীর যন্ত্রণা, বমি বমি ভাবের মতো সাধারণ ‘ভাইরাল ফিভার’-এর লক্ষণ দেখা যায়। নিপা ভাইরাস খুব দ্রুত শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। ৫ থেকে ৬ দিনের মধ্যে কোমায় চলে যেতে পারেন রোগী। ফুসফুসে সংক্রমণ হলে মৃ্ত্যুও ঘটতে পারে। নিপার কোনও টীকা এখনও আবিষ্কার হয়নি।”
উল্লেখ্য, মুর্শিদাবাদের রাজেশ মণ্ডল নিপা-সন্দেহে বেলেঘাটা আইডি-তে ভর্তি ছিলেন। রাজেশ কেরলে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। জ্বর নিয়ে এখানে চলে আসেন। এখন সুস্থ। চিকিত্সকরা জানিয়ে দিয়েছেন, রাজেশ নিপায় আক্রান্ত হননি। আইডি-তে নিপা আক্রান্ত সন্দেহে ভর্তি রয়েছেন এক বাংলাদেশি যুবক ফুয়াদ বিন জাফরও। অ্যালাইজা টেস্টের জন্য নমুনা পাঠানো হয়েছে। আলিপুর কম্যান্ড হাসপাতালে কেরলের বাসিন্দা ফোর্ট উইলিয়ামে কর্মরত এক জওয়ানের মৃত্যু হয়। মৃত্যুর কারণ নিপা ভাইরাস বলেই প্রথমে সন্দেহ ছিল। নিশ্চিত হতে নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল পুণেতে। যদিও পরে আর্মির তরফ থেকে জানানো হয়, ওই জওয়ান নিপা সংক্রমণ ছিল না।