Advertisement
E-Paper

রস করে নয়, গোটা ফল খান, কেন জানেন?

গোটা ফল খেলে কী হত৷ ফলের ছোট একটি টুকরো যখন কামড়ে, চিবিয়ে ও গিলে খাওয়া হয়, এক এক বারে শরীরে অল্প করে ফ্রুকটোজ ঢোকে৷ সেটুকুও আবার ফাইবারে মিশে থাকে বলে ধীরে ধীরে শোষিত হয় শরীরে৷

সুজাতা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৮ ১৩:১৮

ছিবড়ের যে কোনও গুণ আছে (কোষ্ঠকাঠিন্য কমানো ছাড়া), তা আমাদের ধারণাতেই আসে না৷ কাজেই ফল নিংড়ে রস বার করে খেয়ে বিরাট আত্মপ্রসাদ অনুভব করি আমরা৷ আর সেই অবসরে স্বাস্থ্যকর খাদ্যটি পরিণত হয় অস্বাস্থ্যকর পানীয়ে৷ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট–ভিটা ভরপুর হওয়া সত্ত্বেও শুধুমাত্র চিনি ও ক্যালোরির দোষে দুষ্ট হয়ে সে আমাদের ক্ষতি করতে উঠেপড়ে লাগে৷

ভাবছেন, চিনি কোথা থেকে এল, সে তো ফলে ছিলই৷ ফ্রুকটোজ নামে৷ ফলেই যদি ছিল, তা হলে আর সে ক্ষতিকর হয় কী করে, তাই তো?

হয়৷ বাড়াবাড়ি করলে ও নিয়ম না মানলে হয় বইকি৷ ডাক্তার আপনাকে সারা দিনে ৪০০ গ্রাম ফল খেতে বলেছিলেন৷ অর্থাৎ ৮০ গ্রাম করে পাঁচটা সার্ভিং৷ একটা সার্ভিং মানে ছোট একটা টেনিস বলের মাপ৷ এবং রস করে নয়, তিনি বলেছিলেন কামড়ে, চিবিয়ে বা চুষে খেতে, যাতে ফলটা শেষ করতে খানিকটা সময় লাগে ও ছিবড়েটুকুও শরীরে যায়৷ কিন্তু আপনার তো অত সময় নেই৷ কাজেই ৩–৪টি ফল জ্যুসারে ফেলে রস করে ঢক ঢক করে খেয়ে নিলেন৷ আর নিমেষের মধ্যে তিন–চার গুণ ফ্রুকটোজ শরীরে ঢুকে শোষিত হয়ে সোজা গিয়ে হাজির হল লিভারে!

সময়াভাবের অজুহাতে প্যাকেটের জ্যুস খেলে, সমস্যা বাড়বে বই কমবে না৷ জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

এ রকমই হওয়ার কথা৷ কারণ অন্য সব চিনি, যেমন গ্লুকোজ, সুক্রোজ ইত্যাদিকে ভাঙতে যেমন শরীরের সব কোষ সক্রিয় হয়ে ওঠে, ফ্রুকটোজকে মেটাবলাইজ করতে পারে একমাত্র লিভার৷ মাপমতো এলে তার কাজে ব্যাঘাত হয় না, কিন্তু যতখানি সে হ্যান্ডেল করতে পারে তার চেয়ে বেশি এসে গেলে চিনির বেশ খানিকটা ফ্যাটে (ট্রাইগ্লিসারাইডে) পরিণত হয়ে রক্ত ও লিভারে জমতে শুরু করে৷ সূত্রপাত হয় সেন্ট্রাল ওবেসিটি (পেট–কোমরে চর্বি জমা) ও ফ্যাটি লিভারের৷ রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড এবং এলডিএল (খারাপ কোলেস্টেরল) বাড়ার আশঙ্কা তৈরি করে দেয়৷ একই সঙ্গে বাড়ে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের আশঙ্কা, যা কি না ডায়াবেটিসের পূর্ব শর্ত৷ বাড়তে পারে ইউরিক অ্যাসিডও৷

না, তার মানে ফলের রস একেবারে খাওয়া যাবে না এমন নয়৷ এন্ডোক্রিনোলজিস্ট সতীনাথ মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘‘আপনি যদি রোগাপাতলা ও অ্যাকটিভ হন, সপ্তাহে দু’–চার বার ছোট এক গ্লাস (১০০ মিলি) খেতে পারেন৷ কিন্তু ওজন বেশি হলে ও কোনও মেটাবলিক সমস্যা, যেমন, হাই প্রেশার, ডায়াবেটিস, ফ্যাটি লিভার, হাই কোলেস্টেরল–ট্রাইগ্লিসারাইড ইত্যাদি থাকলে, মোটামুটি সপ্তাহ দশেকের মধ্যে সমস্যা বাড়বে৷ যত বেশি খাবেন, তত বেশি বাড়বে৷’’ মোটামুটি ওভার ওয়েট এক জন মানুষ যদি দিনে ৪৮০ মিলি আঙুরের রস মাস তিনেক ধরে খান, তার কোমরের মাপ ও ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়ে চোখে পড়ার মতো৷ আবার দিনে দুই সার্ভিংয়ের বেশি ফলের রস খেলে মহিলাদের মধ্যে গাউটের রিস্ক প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়৷

এ বার দেখা যাক, গোটা ফল খেলে কী হত৷ ফলের ছোট একটি টুকরো যখন কামড়ে, চিবিয়ে ও গিলে খাওয়া হয়, এক এক বারে শরীরে অল্প করে ফ্রুকটোজ ঢোকে৷ সেটুকুও আবার ফাইবারে মিশে থাকে বলে ধীরে ধীরে শোষিত হয় শরীরে৷ পেট অনেক ক্ষণ ভরা থাকে, তৃপ্তি হয়৷ লিভারেরও কোনও অসুবিধে হয় না৷ কিন্তু তার বদলে যদি এক গ্লাস ফলের রস খান, যা বানাতে কম করে ৩–৪টি ফল লাগে, সেই অনুযায়ী ক্যালোরিও বাড়ে, (৩৫০ মিলি কোক–এ যেখানে ১৪০ ক্যালোরি থাকে, ৩৫০ মিলি অ্যাপেল জ্যুসে থাকে ১৬৫ ক্যালোরি) কিন্তু তরল খাদ্য বলে খিদের তেমন সুরাহা হয় না৷ খানিক ক্ষণের মধ্যে আবার কিছু খাওয়ার প্রয়োজন হয়৷ ফলে টোটাল ক্যালোরি ইনটেক অনেক বেড়ে যায়৷ তার উপর যদি সঠিক জ্যুসার ব্যবহার না করেন বা নিয়ম মেনে ফল না ধুয়ে নেন, বিপদ আরও বাড়ে৷

ওয়াশ ও জ্যুসার

ঘরে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় সেন্ট্রিফিউগ্যাল জ্যুসার, যা ফলকে কেটে ছিন্নভিন্ন করে রস ছেঁকে বার করে বলে ফলের ফাইবারে আটকে থাকা পেস্টিসাইড ও ইনসেক্টিসাইড রসে মিশে যায়৷ উল্টো দিকে গিয়ার জ্যুসার ফলকে চেপে রস বার করে বলে এ ভয় অনেক কম৷ কাজেই ফ্রুট জ্যুস যদি খেতেই হয়, ব্যবহার করুন গিয়ার জ্যুসার৷

জ্যুস বানানোর আগে ফল ভাল করে ধুয়ে নিন৷ প্রথমে রানিং ওয়াটারে ২–৩ বার রগড়ে ধুয়ে বড় গামলায় এমন পরিমাণে জল নিন যাতে ফলগুলি ডুবে থাকে৷ তাতে মেশান সিকি কাপ সাদা ভিনিগার ও সিকি চামচ সি–সল্ট৷ ছোট ফল হলে পাঁচ মিনিট ও বড় ফল হলে ১০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন৷ অত ঝামেলা না চাইলে নিরাপদ ভেগি ওয়াশও কিনে নিতে পারেন৷ মিনিট দশেক পর দেখবেন জল আবার ময়লা হয়ে গেছে, কটু গন্ধও পাবেন৷ এই জল ফেলে রানিং ওয়াটারে আরও দু–তিন বার ধুয়ে নিন৷ এর পর ইচ্ছে হলে জলে পেঁয়াজ ও লেবুর টুকরো দিয়ে তাতে ৫ মিনিট ভেজাতে পারেন৷ এর পর ধুয়ে নিলে নিশ্চিত থাকবেন যে অন্তত ৮০ শতাংশ বিষমুক্ত হয়েছে ফল৷

সময়াভাব ও প্যাকেটের জ্যুস

সময়াভাব তো আছেই৷ কিন্তু সেই অজুহাতে যদি ঠিক করেন প্যাকেটের জ্যুস খাবেন, সমস্যা বাড়বে বই কমবে না৷ কারণ যতই ‘১০০ শতাংশ ফ্রুট জ্যুস’ বা ‘নট ফ্রম কনসেনট্রেট’ লেখা থাকুক না কেন, আদতে ব্যাপারটা তেমন হয় না অধিকাংশ ক্ষেত্রেই৷ তার কারণ নানাবিধ৷ প্রথমত, ফল থেকে রস বার করার পর প্যাকেট করার আগে তাকে বেশ কিছু দিন অক্সিজেনহীন ট্যাঙ্কে জমিয়ে রেখে প্রসেস করা হয়৷ কিছু গুণ এর ফলে নষ্ট হয়৷ প্রায় পুরো ফ্লেভারটুকুই উবে যায়৷ মেশাতে হয় কৃত্রিম ফ্লেভার৷ যতই তা পারমিসিবল তালিকায় থাক না কেন, আসলের মতো তো আর নয়৷ কাজেই দামি প্যাকেটের ফ্রুট জ্যুসের সঙ্গেও টাটকা বানিয়ে খাওয়া জ্যুসের তফাৎ একটা হয়েই যায়৷ আর কম দামি জ্যুস নিয়ে যত কম বলা যায় ততই ভাল৷ সে সব আসলে ফ্লেভার মেশানো চিনির জল ছাড়া আর কিছুই নয়৷

অতএব

এমনিতেই দিনে প্রচুর সুগার খাওয়া হয়ে যায়, কারণ ভাল–মন্দ সব খাবারেই সে মিশে থাকে অল্পবিস্তর৷ কাজেই প্যাকেটের জ্যুস খেয়ে নতুন করে আর তার পরিমাণ বাড়ানোর দরকার নেই৷ এন্ডোক্রিনোলজিস্ট সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের মতে, ‘পুষ্টিবিদদের পরামর্শ মেনে দিনে ৪–৫ রকমের ফল মিলে ৪০০ গ্রামের মতো খান৷ চিবিয়ে খেলে ভাল৷ মাঝেমধ্যে স্মুদি বানিয়ে নিতে পারেন, যাতে শুধু রস নয়, শাঁস ও তার মারফৎ ফাইবার যায় শরীরে৷ কোনও অসুখবিসুখ থাকলে কোন ফল খাওয়া যাবে আর কোনটা নয়, তা ডাক্তারের কাছে জেনে নিন৷ মাঝেমধ্যে এক–আধ বার ইচ্ছে হলে টাটকা বানানো ফলের রসও যে খেতে পারেন না এমন নয়৷ কম বয়স হলে, ব্যায়ামের অভ্যাস থাকলে, ওবেসিটি বা বিশেষ কোনও মেটাবলিক অসুখ না থাকলে তো খেতেই পারেন৷ তবে নিয়মিত না খাওয়াই ভাল৷’’

Health Fruit Juice Health Tips Diet
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy