Advertisement
E-Paper

ডায়াবিটিসকে রুখে দিতে চাইলে এ সব অভ্যাস রপ্ত করুন আজ থেকেই

নামে ‘মধু’ থাকলে হবে কী, স্বভাবে একেবারে ‘গব্বর সিং’! হাসতে হাসতে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করতে পারে। সে গুলির যন্ত্রণা যখন টের পাবেন তখন বড্ড দেরি হয়ে গিয়েছে। নিঃশব্দ ঘাতক ডায়াবিটিস এতটাই মারাত্মক!

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৮ ১০:৫৮
ডায়াবিটিস বেড়ে চলেছে আপন গতিতে, রোগীর অজান্তেই।

ডায়াবিটিস বেড়ে চলেছে আপন গতিতে, রোগীর অজান্তেই।

নামে ‘মধু’ থাকলে হবে কী, স্বভাবে একেবারে ‘গব্বর সিং’! হাসতে হাসতে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করতে পারে। সে গুলির যন্ত্রণা যখন টের পাবেন তখন বড্ড দেরি হয়ে গিয়েছে। নিঃশব্দ ঘাতক ডায়াবিটিস এতটাই মারাত্মক!

তবে ছোট থেকেই সচেতন হলে আটকে দেওয়া যায় শরীরে মধুমেহর কারসাজি। ভরসা দিলেন এসএসকেএম হাসপাতালের এন্ডোক্রিনোলজি বিভাগের অধ্যাপক সতীনাথ মুখোপাধ্যায়।

এমনিতেই বিশ্ব জুড়ে মৃত্যুর কারণের তালিকা বানাতে বসলে ডায়াবিটিসের স্কোর দারুণ। ১৯৯০ সালে ছিল ৩৫ নম্বরে, ২০১৫ তে উঠে এসেছে ১৩ তে। ২০১৮ সালে হয়তো বা আরও কয়েক ধাপ। আমাদের দেশে মৃত্যুর প্রথম ১০ টি কারণের মধ্যে অন্যতম ‘টাইপ – টু ডায়বিটিস’।

আরও পড়ুন: সিগারেটের থেকেও ভয়ঙ্কর হতে পারে ধূপের ধোঁয়া, বলছে গবেষণা​

এই মুহূর্তে বিশ্বের সব থেকে বেশি ডায়াবিটিসের আক্রান্তের বসবাস চিন দেশ। অনেক আগে থেকেই সতর্কবার্তা দেওয়া হচ্ছিল। কিছুটা সচেতনতা বেড়েছে, তাই সমস্যা হলে অনেকেই ব্লাড সুগার পরীক্ষা করিয়ে নিচ্ছেন। কিন্তু এখনও প্রচুর মানুষ এই মারাত্মক অসুখ নিয়ে বিন্দুমাত্র সচেতন নন। তাই ডায়াবিটিস বেড়ে চলেছে আপন গতিতে, রোগীর অজান্তেই। চিকিৎসকদের আশঙ্কা, আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই ডায়াবিটিসে আক্রান্তের নিরিখে চিনকে পেছনে ফেলে আমরা বেশ কয়েক কদম এগিয়ে যাব।

ওজন আর ভুঁড়ি দুই-ই দায়ী

টাইপ টু ডায়াবিটিসের নানা কারণের মধ্যে অন্যতম বাড়তি ওজনের বোঝা। তার সঙ্গে যদি ভুঁড়ি বেড়েই চলে তা হলে টাইপ টু ডায়বিটিসের ঝুঁকি বহু গুণ বেড়ে যায়। অবশ্য আরও কয়েকটা রিস্ক ফ্যাক্টর আছে বটে, কিন্তু আসল দোষী স্ফিত মধ্যপ্রদেশ। এমনিতেই আমাদের দেশের মানুষজনের মধ্যে ভুঁড়ির প্রবণতা বেশি, তার সঙ্গে অতিরিক্ত ভাত ও ভাজাভুজি খাওয়ার ফলে অল্প বয়স থেকেই মেদ ভারে আক্রান্ত হতে হয়।

আরও পড়ুন: হাতে মোবাইল, কথা শিখছে না শিশু​

ভাবছেন, শরীরে চর্বি জমার সঙ্গে রক্তের শর্করা বেড়ে যাওয়ার কী সম্পর্ক! আসলে ওজন বাড়লে প্যানক্রিয়াস থেকে ইনসুলিন নিঃসরণ কমে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। ইনসুলিনই যে আমাদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্রিয় ভুমিকা নেয়, তা সকলেরই জানা। ইনসুলিন কমে গেলে ব্লাড সুগার বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক। ইদানীং কলকাতা-সহ শহরাঞ্চলে বাচ্চাদের মধ্যেও ওজন বেড়ে যাওয়ার সমস্যা বাড়ছে। তাই কৈশোরে পৌঁছতে না পৌঁছতেই ছোটদের মধ্যেও ‘টাইপ টু ডায়বিটিস’-এর হার বাড়ছে।

বংশে থাকলে নিয়মিত চেক আপ করাতেই হবে

বাবা মা অথবা দাদু, দিদিমা বা ঠাকুর্দা, ঠাকুমা-সহ পরিবারে ডায়াবিটিসের ইতিহাস থাকলে রোগের ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি। অধ্যাপক বিশ্বনাথনের নেতৃত্বে এক সমীক্ষায় জানা গিয়েছে যে মা, মামা ও দিদিমার টাইপ টু ডায়াবিটিস থাকলে সন্তানদের অসুখের ঝুঁকি ৫০ শতাংশ বেড়ে যায়। অন্য দিকে শুধু মা অথবা বাবার কোনও এক জনের এই অসুখের ইতিহাস থাকলে পরবর্তী প্রজন্মের অসুখের সম্ভাবনা ৩২ শতাংশ। তবে বাবা ও মা দু’জনেরই কম বয়সে রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি হলে সন্তানদের রোগের ঝুঁকি প্রায় ৭০ শতাংশ। তাই যাঁদের বংশে এই অসুখের ইতিহাস আছে, তাঁদের উচিত ওজন স্বাভাবিক রাখা ও নিয়মিত শরীরচর্চা করা। আর কোনও সমস্যা থাকুক না থাকুক বছরে এক বার অন্তত রক্তপরীক্ষা করা বাঞ্ছনীয়।

ছোট থেকেই সচেতন হতে শেখান

ডায়াবিটিস আটকানোর পাঠ শুরু করা দরকার শৈশবেই। ব্রাশ করা কিংবা স্নান করার মতোই ছোট থেকে নিয়ম করে গা ঘামিয়ে খেলার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এ ব্যাপারে স্কুলের সঙ্গে সঙ্গে বাবা-মাকেও দায়িত্ব নিতে হবে। ‘অল ওয়ার্ক অ্যান্ড নো প্লে’ প্রকৃত অর্থেই একজন বাচ্চাকে ‘ডাল’ করে তোলে। কেননা, সপ্তাহে কমপক্ষে পাঁচ দিন দৌড়োদৌড়ি করে খেললে এক দিকে কার্ডিওরেসপিরেটরি ফিটনেস বাড়ে, অন্য দিকে মস্তিষ্কেও রক্তচলাচল বাড়ে বলে ক্ষিপ্রতা এবং বুদ্ধিও বাড়ে। খাবারদাবারের ব্যপারেও মায়েদের সচেতন হতে হবে। শিশু যখন শক্ত খাবার খেতে শুরু করে, তখন থেকেই তাদের পুষ্টিকর খাবারে অভ্যস্ত করতে হবে। নিজেদের সুবিধার জন্য কেক, বিস্কুট, ইনস্ট্যান্ট নুডল-সহ অন্য ফাস্ট ফুডের অভ্যেস গড়ে তুলবেন না। পরিবর্তে টাটকা ফল, সব্জি, রুটি-সহ বাড়িতে তৈরি খাবার দিন। চিনি, মিষ্টি, ভাজাভুজিতে অভ্যস্ত করে তুলবেন না। সঙ্গে নিজেদের খাবার অভ্যাসও বদলান।

ওজন ঠিক রাখতে হবে ছোট থেকেই

বংশে থাকুক বা না থাকুক ওজন বাড়লে টাইপ টু ডায়াবিটিস, ব্লাড প্রেশার-সহ মেটাবলিক সিনড্রোমের ঝুঁকি বাড়ে। তাই ওজন স্বাভাবিক রাখার ব্যাপারে সচেতন হতে হবে শৈশবেই। পৃথিবী জুড়ে বাচ্চাদের মধ্যে ওবেসিটি বাড়ছে। তাই বেশ কিছু দেশের স্কুলে স্কুলে ওজন কমাতে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জাপানে ওভার ওয়েট বাচ্চাদের ক্লাশ শুরু হওয়ার ৪৫ মিনিট আগে স্কুলে পৌঁছতে হয়। সেই সময়ে ওদের শারীরিক কসরত করিয়ে তার পর ক্লাসে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। স্কটল্যান্ডে স্কুলে পিৎজা, বার্গার জাতীয় ফাস্ট ফুড টিফিন নিয়ে গেলে আপেল, ন্যাসপাতি বা কলায় তা বদলে দেওয়া হয় ও অভিভাবকদের সচেতন করা হয়। আমাদের দেশেও মুম্বইয়ের দু’-একটি বেসরকারি স্কুলে বাচ্চাদের ওজন নিয়ন্ত্রনে ফাস্ট ফুড খাবার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

ওজন ঠিক রাখতে সুষম ও পুষ্টিকর খাবার তো খেতে হবে। সঙ্গে নিয়ম করে সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন মোট ১৫০ মিনিট হাঁটতে হবে। তাহলে আর ডায়াবিটিসকে জীবন থেকে সরাতে সময় লাগবে না। ‘ওয়ার্ল্ড ডায়বিটিস ডে’-র প্রাক্কালে এই নিঃশব্দ ঘাতককে জব্দ করার শপথ নিন এ ভাবেই।

World Diabetes Day Diabetes Health Tips Health Disease
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy